দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড চট্টগ্রাম চান্দগাঁও শাখার প্রায়োরিটি গ্রাহকের ২ কোটি ৫১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাবেক প্রায়োরিটি ব্যাংক ম্যানেজারসহ ৫ আসামিকে কারাদণ্ড ও অর্থাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (৬ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুনসী আবদুল মজীদ এ রায় দেন।
আরও পড়ুন : সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি এক পরিবারের তিনজন নিহত
রায় ঘোষণার সময় আসামিরা উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় ৩৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।
আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানার পূর্ব মাদারবাড়ির ৭০ দারোগাহাট রোডের আলমগীর কবিরের ছেলে মো. ইফতেখারুল কবির , নোয়াখালী সোনাইমুড়ি থানার রামপুর গ্রামের বেপারি বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে জাকির হোসেন (বাপ্পী), চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানার পূর্ব মাদারবাড়ির দারোগাহাট রোড এলাকার আ. ছবুর মাস্টার বাড়ির মৃত আবদুল মালেকের ছেলে আবদুল মাবুদ, চট্টগ্রাম খুলশী থানার দক্ষিণ খুলশী আ/এ ৩ নং লেইন, ১ নং রোডের ব্লক বি ৪৯২/৫৩০ আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে মাহমুদুল হাসান, চট্টগ্রাম হাটহাজারী থানার চিকনদণ্ডী গ্রামের আজম চৌধুরী বাড়ির আবুল খায়ের চৌধুরীর ছেলে বর্তমানে খুলশী থানার চান্দগাঁও কনকর্ড টয়ায়ার টাউন সেন্টার ও চান্দগাঁও থানার আ/এ ১ নং রোডের এ ব্লক এলাকার ১১ নং বাড়ির একে ম্যানশনের বাসিন্দা আজম চৌধুরী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী ছানোয়ার আহমেদ (লাভলু)।
দুদকের আইনজীবী কালবেলাকে বলেন, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায়োরিটি গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম চান্দগাও শাখার ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ম্যানেজার আসামি মো. ইফতেখারুল কবিরকে সাজা ৫৪ বছরের কারাদণ্ড ও ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া লাবীবা ট্রেডিং এর স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন বাপ্পীকে ১১ বছর কারাদণ্ড ও ৭৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, জুলেখা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আবদুল মাবুদকে ৬ বছর ৬ মাস কারাদণ্ড ও ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
তাছাড়া আসামি মাহমুদুল হাসানকে ৬ বছর ৬ মাস কারাদণ্ড ও ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং আজম চৌধুরীকে ৬ বছর ৬ মাস কারাদণ্ড ও ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পরে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ইস্টার্ন ব্যাংক চট্টগ্রাম চান্দগাঁও শাখার প্রায়োরিটি গ্রাহক সালাউদ্দীন আহমেদ তার স্ত্রীসহ ছেলেমেয়ের নামে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ১১টি এফডিএ খোলেন। ব্যাংকের তৎকালীন প্রায়োরিটি ম্যানেজার মো. ইফতেখার কবির কৌশলে সালাউদ্দীন আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের থেকে কয়েকটি চেক স্বাক্ষর করে। পরে কাস্টমারের কাছ থেকে আগে থেকে রেখে দেওয়া চেকের মাধ্যমে ও অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার ফরমে জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে সালাউদ্দিন আহমেদ এবং পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্ট হতে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে। এভাবে ৫ আসামিদের যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ২ কোটি ৫১ লাখ ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ঘটনায় দুদক সজেকা চট্টগ্রাম ১ এর উপপরিচালক মো ফকরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করলে ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর চার্জশিট দাখিল করা হয়। একই বছরের ১ নভেম্বর অভিযোগ আমলে নেন আদালত। ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৮০৩ /৮২০/৮৬১/৪/৪৭১/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় চার্জশিট গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।
মন্তব্য করুন