প্রস্তুত করা হয়েছে সাড়ে ২২ হাজার শিক্ষার্থীর সনদ। বিভাগে বিভাগে পৌঁছে গেছে গাউন, টুপি ও উপহার সামগ্রী। রঙে রঙিন করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। ঝকঝকে তকতকে করা হচ্ছে সড়কগুলো। এখন সাড়ে ২২ হাজার শিক্ষার্থীর কেবল অপেক্ষা আগামী বুধবারের।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তনের প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। আগামী বুধবার (১৪ মে) এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে।
এতে অংশ নেবে ৯টি অনুষদের ২২ হাজার ৫৯৭ শিক্ষার্থী। সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সমাবর্তনে তাকে ডক্টর অব লিটারেচার ডিলিট ডিগ্রি দেওয়া হবে।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের গাউন, টুপি ও উপহার সামগ্রী ইতোমধ্যে নিজ নিজ বিভাগে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আগামী সোমবার থেকে শুরু করে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত নিজ বিভাগ থেকে গাউন ও টুপি নিতে পারবেন। তবে সমাবর্তনের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর গাউন আবার বিভাগে জমা দিতে হবে। অন্যথায় সার্টিফিকেট ও উপহার দেওয়া হবে না। বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে বিভাগ থেকে খাবার নিতে হবে। এরপর দুপুর একটার মধ্যে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের প্যান্ডেলে ঢুকতে হবে। এরপর আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সমাবর্তনের মূল ভেন্যুতে আমন্ত্রণপত্র ও মোবাইল ফোন বাদে অন্য কোনো কিছু বহন করা যাবে না।
আয়োজকরা জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আসা অতিথিদের কেউ মূল ভেন্যুতে প্রবেশ করতে পারবেন না। তাদের জন্য বিভাগগুলোর কিছু কক্ষ বরাদ্দ রাখা হবে। অংশগ্রহণকারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০০টি বাস নগরীর নিউমার্কেট, বটতলী রেলস্টেশন, ওয়াসা মোড়, ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স ও পলিটেকনিক মোড় থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এসব বাসে শুধু নিবন্ধিত শিক্ষার্থীরা উঠতে পারবে। সমাবর্তনের দিন ক্যাম্পাসের ভেতরে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি প্রবেশ করবে না। ব্যক্তিগত গাড়ি ১ নম্বর গেট এলাকা পর্যন্ত আসতে পারবে। সেখান থেকে শাটল বাসে করে অংশগ্রহণকারীদের ক্যাম্পাসে আসতে হবে। তবে সমাবর্তনের দিন শাটল ট্রেন নির্ধারিত সময়সূচিতে চলবে। শাটল ট্রেনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের স্বজনরা আসতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সরাসরি অনুষ্ঠান দেখাতে লাগানো হবে বড় পর্দা।
সমাবর্তনের সময়সূচি : সমাবর্তনের অনুষ্ঠানের অতিথিদের আসন গ্রহণ শুরু হবে দুপুর দেড়টায়। ওই দিন দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে সমাবর্তন শোভাযাত্রা হবে। তবে এতে কোনো শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবেন না। পরে দুপুর দুইটায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য, ডি-লিট গ্রহণ, শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য, উপাচার্যের বক্তব্য, দুই উপ-উপাচার্যের বক্তব্য মিলিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হবে বিকেল ৪টায়।
উপস্থিত থাকবেন চার উপদেষ্টা : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বর্তমান সরকারের চারজন উপদেষ্টা। তারা হলেন- শিক্ষা অধ্যাপক সিআর আবরার, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
নগরীর অভিজাত হোটেলের বাবুর্চিরা রান্না করবেন সমাবর্তীদের খাবার : সমাবর্তীদের আপ্যায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খাবার রান্না করা হবে। চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু, মেরিডিয়ানসহ অভিজাত বিভিন্ন হোটেলের বাবুর্চিরা এই খাবার রান্না করবেন। খাবারের মেন্যুতে কাচ্চি বিরিয়ানি, কাবাব থাকবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীরা যে উপহার পাবেন : সমাবর্তনে অংশ নেওয়া প্রতিটি শিক্ষার্থীকে একটি মোবাইল ওয়ালেট, একটি কোর্ট পিন, একটি কলম ও একটি জুটের ব্যাগ দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়োজক কমিটি।
ক্যাম্পাসের সর্বোচ্চ সাজ সাজ রব : দীর্ঘ ৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন। তাই ক্যাম্পাসের সর্বত্র বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে শোভাবর্ধনের কাজ। অভ্যন্তরীণ সব রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ভবনে রঙ করা, ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর মেরামত করা হচ্ছে ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেট সড়ক। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে শহীদ মিনারে নতুন করে রঙ করা হচ্ছে। দীর্ঘ সাত বছর পর ঝুলন্ত সেতু সংস্কার করে নান্দনিক করা হয়েছে। আলোকসজ্জা করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ক্যাম্পাস : সমাবর্তনকে ঘিরে ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক, অতিথিসহ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পুরো ক্যাম্পাসকে ইতোমধ্যে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ও নগর পুলিশও নিরাপত্তার বিষয় দেখভাল করছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ কালবেলাকে বলেন, সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা অংশ নেবেন। তাই ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) গ্রহণ করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সাদা পোশাকে কাজ করছে।
সার্বিক বিষয়ে সমাবর্তন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী কালবেলাকে বলেন, পঞ্চম সমাবর্তনকে ঘিরে আমাদের প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। সমাবর্তনের মূল ভেন্যুর অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন সাজসজ্জা ও আসন বিন্যাসের কাজ চলছে। ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে। ম্যাগাজিন, সনদ প্রস্তুত হয়েছে। সমাবর্তনকে সফল করতে আমরা রাত-দিন এক করে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত। আমরা যেন সফলভাবে সমাবর্তনটা শেষ করতে পারি সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাই।
মন্তব্য করুন