সংকেত অমান্য করে পালানোর চেষ্টা করে একটি মোটরসাইকেল। পরে সেটিকে ধাক্কা দিয়ে থামাতে গিয়েছিলেন সড়কে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য। এতে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশে থাকা অন্য এক পুলিশ সদস্যকে ধাক্কা দেয়। এ সময় তিনি ধীরগতির একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে পা হারান । এ ঘটনায় পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
রোববার (২২ জুন) ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার চুনতী এলাকার হাজী রাস্তার মাথা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যালে ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা যায়, ইয়াবা পাচারের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে একটি অস্থায়ী তল্লাশিচৌকি বসায়। সকাল পৌনে ৬টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলকে থামার সংকেত দেওয়া হয়। একটি পালিয়ে যায়, অপরটি থেমে হঠাৎ আবার চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন এক পুলিশ সদস্য পেছন থেকে বাইকটিকে ধাক্কা দেন। এতে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গিয়ে ধাক্কা দেয় সামনের কনস্টেবল আলাউদ্দিনকে। ধাক্কা খেয়ে তিনি ধীর গতির ট্রাকের সামনে গিয়ে পড়েন। এসময় ট্রাক থেঁতলে দেয় তার ডান পা।
আলাউদ্দিন নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার বাসিন্দা। ১৫ বছর ধরে পুলিশে কর্মরত তিনি। সাত মাস আগে লোহাগাড়া থানায় বদলি হন। তার পরিবারে স্ত্রী, দুই সন্তান এবং বৃদ্ধ মা–বাবা রয়েছেন। পরিবারের আর্থিক খরচের মূল ভরসা ছিলেন তিনি।
আলাউদ্দিন কালবেলাকে বলেন,
এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটে যাবে, জীবনেও কল্পনা করিনি। সাত মাস ধরে লোহাগাড়া থানায় আছি। এই ধরনের অভিযানে প্রথম গিয়েছিলাম—তাতেই দুর্ঘটনা। আপাতত সুস্থ হওয়াটাই বড় চিন্তা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।
এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী, ট্রাকচালক ও সহকারীসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়েও।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান কালবেলাকে বলেন,
পুলিশের তল্লাশিচৌকি বসানোর একটা নিয়ম আছে। তল্লাশিচৌকিতে পর্যাপ্ত ফোর্স থাকবে, চেকপোস্ট লেখা থাকবে। আগে থেকে সংকেত দিতে হবে। কেউ যদি সংকেত না মেনে চলে যায়, তাকে কীভাবে পাকড়াও করা হবে, সে ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু লোহাগাড়ায় পুলিশ যেটা করল, সেটা তো আত্মঘাতী। গাড়ির নিচে পড়ে মারাও যেতে পারতেন। এখানে পুলিশের পেশাদারিত্বের যথেষ্ট ঘাটতি ছিল।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, পুলিশের দায়িত্ব মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা। সন্দেহভাজনকে ধরতে গিয়ে সহকর্মী যদি পঙ্গু হয়ে যান, তাহলে সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভিডিওতে পেশাদারিত্বের ঘাটতি দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল কালবেলাকে বলেন, ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা যাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন