শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পুলিশ প্রশাসন সংস্কারে সব ছাত্র-সংগঠনের আন্দোলন এক ব্যানারে

পুলিশ সংস্কারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। ছবি : সংগৃহীত
পুলিশ সংস্কারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও বিচারের আওতায় নিয়ে আসা ও নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারকে (এসপি) অপসারণ করা, পুলিশ সংস্কারবিষয়ক নির্দেশনা দেওয়া এবং যে কোনো থানায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে নিয়ে গেলে তাদের কন্ডিশন ছাড়া গ্রেপ্তারের চার দফা দাবি তুলেছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

এসব দাবিতে বুধবার (২ জুলাই) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক ও চট্টগ্রামের খুলশী সড়কে অবরোধ কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেন তারা।

কিন্তু পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরকে বহিষ্কার না করে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করায় ক্ষুব্ধ তারা। এমন বাস্তবতায় এই চার দফা দাবিকে সামনে রেখে ‘পুলিশ-প্রশাসন সংস্কার আন্দোলন’ নামের একটি আলাদা প্লাটফর্ম নিয়ে এগুনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা যেখানে সব ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে চূড়ান্তভাবে পুলিশ-প্রশাসন সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত প্রায় ১১টি ছাত্র সংগঠন সমর্থন দিয়েছে।

পুলিশের চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের দায়িত্বশীলরা বলছেন, পুলিশ-প্রশাসন সংস্কার তারাও চান। এই কর্মসূচির ব্যাপারে ডিআইজি অফিসের ভিন্ন মত নেই। তবে ওসি কিংবা এসপির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যেই বিষয়টি সামনে আসছে তার ক্ষমতা তাদের (ডিআইজি অফিস) নেই। এটি মন্ত্রণালয়ের বিষয়। ফলে সরকার কিংবা মন্ত্রণালয়ই বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখলে তা দ্রুত সমাধান সম্ভব।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেলে নগরের ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে পুলিশ সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এসময় এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক জোবাইরুল হাসান আরিফও উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ-প্রশাসন সংস্কারে সব ছাত্র সংগঠনের এক ব্যানারে ‘পুলিশ-প্রশাসন সংস্কার আন্দোলন’ নামের এই প্লাটফর্মটির ঘোষণা দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ সন্ধ্যা ৬টায় নগরের ২ নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে ‘আত্মপ্রকাশ মিছিল’ অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকেরা মিছিলটিকে ‘সংস্কার সংগ্রামের প্রথম রাজপথিক সওয়ার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এনসিপি জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক আশরাফুল হক টিপু কালবেলাকে বলেন, এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম, এনসিপি, যুবশক্তি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, ইসলামিক দাওয়াহ মুভমেন্ট, এসএডি, পুনাব, পুসাব, জুলাই ঐক্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ছাত্র-যুব সংগঠন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরকেও এই প্লাটফর্মে আনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।

তিনি বলেন, এই প্ল্যাটফর্ম চার দফা মূল দাবির ভিত্তিতে কাজ করবে। পুলিশ ও প্রশাসনে সীমাহীন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দলীয় প্রভাব চলে আসছে, যা জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনগণের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। এখন সময় এসেছে বাস্তব সংস্কারের। যদি অন্তর্বর্তী সরকার এই সংস্কারে ব্যর্থ হয়, তবে রাজপথ থেকেই আমরা চূড়ান্ত বাস্তব সংস্কারের সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

‘পুলিশ-প্রশাসন সংস্কার আন্দোলন’ এর ঘোষক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি কালবেলাকে বলেন, আমাদের দাবি ছিল পটিয়ার ওসিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা। কিন্তু তারা সেটা না করে তাকে প্রত্যাহার করেছে। এই সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা চাই তাকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া আরও তিন দফা দাবিতে এই প্লাটফর্ম কাজ করবে। এই আন্দোলনের মূল বিষয় হলো, পুলিশ-প্রশাসনকে আমূল সংস্কারে নিয়ে আসা।

তিনি আরও বলেন, আমরা ৫ আগস্টের পর থেকেই দেখছি-আমাদের সহযোদ্ধারা যখনই ছাত্রলীগ ধরিয়ে দিতে যান তখনই তাদের মব বলে আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগের এজেন্ডাও বাস্তবায়ন করা হয়। এই বিষয়গুলো থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

এনসিপির জাতীয় যুবশক্তির যুগ্ম সদস্য সচিব নীলা আফরোজ কালবেলাকে বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে পুলিশ-প্রশাসন একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। তারা আমাদের ওপর এত অত্যাচার-নিপীড়ন চালানোর পরও আমরা তাদের সহযোগিতা করতে মাঠে নেমেছিলাম। আমরা মনে করেছিলাম তারা যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকারের চাপে পড়েই অনেক কিছু করেছে তাই তাদের সহযোগিতা করা উচিত। কিন্তু তারা যেহেতু বুঝতে পেরেছে, এত কিছুর পরও তাদের কোন শাস্তি হচ্ছে না- শুধু প্রত্যাহারে সীমাবদ্ধ। তাই পুলিশ-প্রশাসন আরও বেশি উগ্র আচরণ শুরু করেছে। আমরা কিছু বললেই তারা মব হিসেবে আমাদের উপস্থাপন করছেন এবং উল্টো আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। ফলে তাদের সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জোবেইরুল হাসান আরিফ বলেন, আমাদের এ দাবিগুলো খুব আংশিক পর্যন্তই তারা সর্বোচ্চভাবে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন। আংশিকভাবে যা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাও ন্যূনতম না। আমরা দেখেছি তারা প্রহসনের মতো করে এক ধরনের প্রোমোশনের ব্যবস্থা করেছে ওসিকে। আমরা দেখেছি, বর্তমান প্রশাসন সহযোগিতা করছে ছাত্রলীগকে কীভাবে নেতৃত্ব দেওয়া যায়। বর্তমান প্রশাসন ছাত্রলীগের স্টেকহোল্ডার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমরা দেখেছি, বর্তমান প্রশাসন ছাত্রলীগের গডফাদার হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশে।

বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, আমরা যখন পটিয়া থানায় ছাত্রলীগকে ধরিয়ে দিতে যাই, পটিয়া থানা আমাদের মব বলে আমাদের ওপর টর্চার চালায়, আমাদের অনেক ভাইদের আহত করে। আমাদের অনেক ভাইয়েরা এখনও পর্যন্ত থানায় অবস্থান করছে, মামলা নেওয়া হচ্ছে না। হসপিটালে কাতরাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা পুলিশ সংস্কার আন্দোলনের পক্ষ থেকে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেঞ্জ পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (অ্যাডমিন এন্ড ফিন্যান্স) মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, পুলিশ-প্রশাসন সংস্কার আমরাও চাই। চট্টগ্রামের ডিআইজি স্যার জয়েন করার পর থেকেই এই বিষয় নিয়ে সোচ্চার। তবে তারও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ছাত্রদের এই কর্মসূচির ব্যাপারে আমাদের ভিন্ন মত নেই। তবে ওসি কিংবা এসপির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের (ডিআইজি অফিস) নেই। এটি মন্ত্রণালয়ের বিষয়। ফলে সরকার কিংবা মন্ত্রণালয়ই বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখলে তা দ্রুত সমাধান সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, সরকারি নিয়মানু ও আইন অনুযায়ী হুট করেই কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। পটিয়ার ওসির বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এর আগে আমরা সব অভিযোগের বিষয় তদন্ত করছি।

এদিকে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় নগরের ২ নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে ‘আত্মপ্রকাশ মিছিল’ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি দুই নম্বর গেট থেকে শুরু হয়ে সানমার হয়ে ষোলশহর রেলস্টেশনে গিয়ে মিলিত হয়।

এতে এর আগে, মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে চার পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাত ৯টার দিকে পটিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ নেতা দীপংকর তালুকদারকে আটক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পরে তাকে পটিয়া থানা চত্বরে নিয়ে আসা হয়। তবে ওই ছাত্রলীগ নেতার নামে মামলা না থাকায় পুলিশ গ্রেপ্তার করতে চায়নি। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনা দেখা দেয় এবং পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে নিজেদের হেফাজতে নেয় এবং নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে।

এদের মধ্যে আহত অনেকের অবস্থা গুরুতর। পরে বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) আন্দোলনের মুখে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরকে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রত্যাহার করা হয়। তাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আ.লীগকে পরবর্তী প্রজন্ম চিনবেই না : রেজা কিবরিয়া

জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে দেশজুড়ে আইডিয়া প্রতিযোগিতা

ইডেন কলেজ সাংবাদিক সমিতির কার্যক্রম স্থগিত

ব্যাটারি চুরির অভিযোগে যুবদল কর্মী গ্রেপ্তার

বিড়াল ধরতে গিয়ে ১০ তলা থেকে পড়ে স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু

বিসিএস ক্যাডারে স্থান পেলেন রাবির প্রায় ৬০ শিক্ষার্থী

আদালতে দুর্জয়কে ডিম নিক্ষেপ

ইসরায়েলের আবারও ড্রোন হামলা

মুরাদনগরে ধর্ষণকাণ্ড, ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মূল হোতা গ্রেপ্তার 

শাকিব খানের নতুন সিনেমার নায়িকা কে

১০

আদালত ফ্যাসিস্টমুক্ত হলেই স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা কার্যকর হবে : সালাহউদ্দিন আহমদ

১১

ইরানের মতো আরেক দেশে হামলার হুমকি ইসরায়েলের

১২

ভারতীয় পুশইন বন্ধ করতে হবে : জাগপা 

১৩

শহীদ পরিবার ও ছাত্রদল নেতার পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান

১৪

টানা ৩ দিনের ছুটি পাবেন না যারা

১৫

ব্যাটিং বিপর্যয়ে বিসিবি সভাপতির হতাশা, দায় দেখছেন মানসিকতায়

১৬

টানা ৩ দিনের ছুটিতে চাকরিজীবীরা

১৭

খলিলুর রহমান বিকডার নতুন সভাপতি 

১৮

ইসরায়েলে পাল্টা হামলায় গর্বিত ৭৭ শতাংশ ইরানি

১৯

জোতার মৃত্যুতে ফুটবল বিশ্বে শোকের জোয়ার

২০
X