বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বড়ো বড়ো অট্টালিকা গড়ে তুলেছে আবাসন প্রতিষ্ঠান ফিনলে প্রপার্টি কর্তৃপক্ষ। তবে শ্রমিকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম না দেওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ করতে হওয়ায় থামছে প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণাধীন ভবনে মৃত্যুর মিছিল। এবার শর্টসার্কিটে বিদ্যুৎস্পর্শে এক জুলাই যোদ্ধার অকালমৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১২টায় ঘটনাটি ঘটেছে নগরের চকবাজার থানাধীন প্যারেড ময়দানের পাশে ইদ্রিস বিল্ডিংয়ে।
নিহত সেই জুলাই যোদ্ধার না মো. জাহাঙ্গীর আলম (২৬)। তিনি কুমিল্লার চান্দিনা এলাকার বাসিন্দা। তবে চট্টগ্রামে থাকতেন পাহাড়তলী থানার ঝাউতলার ডিজেল কলোনিতে।
নিহতের স্ত্রী পরিবার নিয়ে থাকেন কুমিল্লার চান্দিনাতেই। স্বামীর মৃত্যুর খবরে কান্না থামছেই না তার। রাত ৯টায় মোবাইল ফোনে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম নিজের জীবন বাজি রেখে লড়েছিল। তবে কখনো কোনো ক্রেডিট নিতে চাননি। কিন্তু ফিনলে ফিনলে প্রপার্টি কর্তৃপক্ষের অসাবধানতার বলি হতে হয়েছে তাকে। পরিবারে তিনিই কেমন উপার্যনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার এ মৃত্যুতে পরিবারটি এখন নিঃস্ব হয়ে গেল।
দুপুরে শর্টসার্কিটে আহত হওয়ার পর জাহাঙ্গীরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনেছিল মিজানুর রহমান নামে তার এক সহকর্মী। তিনি বলেন, আমরা নির্মাণাধীন ওই ভবনের নিচ তলায় ইলেকট্রিকের কাজ করছিলাম। খুবই সাবধানভাবে আমরা কাজ করছিলাম। কিন্তু আচমকা জাহাঙ্গীর ভাই বিদ্যুৎস্পর্শ হন। বিষয়টি বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই আমি তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশিক কালবেলাকে বলেন, বেলা ১২টার পর জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে আনা হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এখন পর্যন্ত (রাত ৯টা) তার মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ আসেননি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার থানার ওসি কাজী মুহাম্মদ সুলতান আহসান উদ্দিনও। কালবেলাকে তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে স্পৃষ্ট হয়ে তিনি আহত হয়েছিল। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়েছে।
আবাসন প্রতিষ্ঠান ফিনলে প্রপার্টির ভবনে মৃত্যুর খবর নতুন নয়, ২০১৯ সালের ১২ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের ঝাউতলা খুলশী কলোনি এলাকায় আবাসন প্রতিষ্ঠান ফিনলে প্রপার্টির একটি নির্মাণাধীন ভবনে বিদ্যুৎস্পর্শে মো. মনির (২৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। মনির ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানার আলমগীর মাঝির ছেলে।
বাংলাদেশ নির্মাণ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সহসভাপতি কবির হোসেন বলেন, ফিনলে প্রপার্টির কোনো ভবনেই শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সরঞ্জাম দেওয়া হয় না। যে কারণে ঝুঁকি নিয়েই শ্রমিকরা কাজ করতে হয়। জাহাঙ্গীরের মৃত্যু স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে, তাদের নিরাপত্তায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে।
ফিনলে প্রপার্টির জেনারেল ম্যানেজার আবদুল্লাহ নাছের কালবেলাকে জানান, চট্টগ্রাম নগরের ১৫টি স্পটে আমাদের ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। তবে আমরা প্রতিটি ভবনেই শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথেষ্ট সরঞ্জাম দিয়ে থাকি। কিন্তু তার পরও কেন জুলাই যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে তা আমার জানা নেই।
ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি আবদুল হালিম কালবেলাকে জানান, গত সোমবারও (২২ সেপ্টেম্বর) নগরীর হিলভিউ আবাসিক এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের পঞ্চম তলা থেকে পড়ে মোজাম্মেল হোসেন মানিক (৩৫) নামের এক নির্মাণ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তার এক তিন মাসের একটি ছেলে রয়েছে। মোজাম্মেল হোসেন মানিক আমাদের সংগঠনের সদস্য। তিনি পাইপ ফিটিংয়ের কাজ করতেন। হিলভিউ আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর রোডে একটি ভবনের পঞ্চম তলায় কাজ করার সময় নিচে পড়ে মারা গেছেন।
মন্তব্য করুন