শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:১১ এএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:১২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

শ্রীমঙ্গলে বাড়ছে আগাম জাতের আনারস চাষ

শ্রীমঙ্গলে উঁচু নীচু পাহাড়ি টিলার গা ঘেঁষে চাষ হচ্ছে আগাম জাতের আনারস। ছবি : কালবেলা
শ্রীমঙ্গলে উঁচু নীচু পাহাড়ি টিলার গা ঘেঁষে চাষ হচ্ছে আগাম জাতের আনারস। ছবি : কালবেলা

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উঁচু নীচু পাহাড়ি টিলার গা ঘেঁষে আগাম জাতের আনারসের চাষাবাদ বাড়ছে প্রতি বছর। শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন অলিগলি কিংবা প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীণ হাটবাজার, সর্বত্রই এখন মৌসুমি রসালো ফল আনারসের মৌ মৌ ঘ্রাণ বিরাজ করছে। বাগান মালিকরা সকালের কাকডাকা ভোরে উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে ঠেলাগাড়িতে করে তাদের চাষ করা আনারস বিক্রির জন্য শহরে নিয়ে আসছেন।

এ ছাড়া সারা দিনই দূরের বাগান থেকে জিপ গাড়ি আর পিকআপ ভ্যান বোঝাই করে আড়তদারদের কাছে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুস্বাদু এ ফলটি। ষাটের দশক থেকে শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলায় আনারসের চাষাবাদ শুরু হয়। বর্তমানে বিস্তৃত করা হয়েছে রসালো এ ফলের চাষ। এ অঞ্চলের উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু আনারস চাষের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় সিজন ছাড়াও সারা বছরজুড়েই আনারসের ফলন হয়। মৌসুমের আনারসের সাইজ অনেক বড় হয়। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা ট্রাক, পিকআপ ভর্তি করে নিয়ে যান নিজ এলাকায় বিক্রির জন্য।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলায় ষাটের দশক থেকে আনারস চাষ শুরু হয়। এখানকার উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু আনারস চাষের জন্য খুব উপযোগী। উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় এবার প্রায় ৪৩০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আনারসের খ্যাতি রয়েছে উপজেলার মোহাজেরাবাদ, বিষামণি, হোসেনাবাদ, বালিশিরা, ডলুছড়া, সাতগাঁও, নন্দরানী, মাইজদিহিসহ উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকার জমিতে প্রতি বছরের মতো আনারসের চাষ হয়েছে ব্যাপক। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার উৎপাদন ভালো হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। পাশাপাশি আমদানি বেশি হওয়াতে আনারসের দাম সাধ্যের মধ্যে রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ভোরে সকালে শহরের নতুন বাজারের পশ্চিমে শাপলা-শান্তিবাগ সড়কে প্রতিটি ঠেলাগাড়ির সামনের দিক মাটিতে ঠেকিয়ে তার ওপর আনারস সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা এগুলো দেখে দরদাম করছেন। প্রতিটি ঠেলাতে সাধারণত ১০০ আনারস নিয়ে আসা হয়। ছোট আকারের আনারস হলে ১৫০ থেকে ২০০ পর্যন্ত এক ঠেলায় আনা যায়। এ ছাড়া আমরা প্রতিদিনের আনারস প্রতিদিন বিক্রি করে থাকি। আমাদের এখানে বাসি কোনো আনারস পাবেন না। আনারসের সাইজ ভেদে ১০-৪০ টাকা প্রতি পিস বিক্রি করে থাকি।

উপজেলার বিভিন্ন আনারস চাষি ও ব্যবসায়ীরা আরো জানান, বর্তমানে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতিদিন লাখ টাকার বেশি আনারস কেনা-বেচা হচ্ছে। গরমের কারণে আনারসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় গত এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় কোটি টাকার আনারস কেনা-বেচা হয়েছে বলেও তারা জানান। পাশাপাশি মৌসুমি ফল সংরক্ষণের জন্য একটি সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবি জানান তারা।

স্থানীয় আড়তদাররা জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি টিলায় চাষ করা আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে এখন মৌসুমি আনারসের দাম অনেক কম। তাই মৌসুমি আনারস নিতে দূরদূরান্ত থেকে ছোট-বড় পাইকাররা এসে নিজ এলাকায় পাঠিয়ে থাকেন।

আনারস চাষি মো. ইউনুস খান জানান, তিনি প্রতি বছর দেশী জাতের আনারস চাষ করেন। এগুলো টক-মিষ্টি স্বাদের। তিনি জিপগাড়িতে করে আনারস বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন আড়তে। আড়তে নিলামের মাধ্যমে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন।

আনারস চাষি সাহাব উদ্দিন বলেন, উৎপাদন বেশি হওয়ায় বর্তমানে আনারসের দাম অনেক কম। গত কয়েক দিন আগে বড় সাইজের আনারস ১০০ পিস মাত্র এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। বর্তমানে দুই হাজার-দুই হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে খরচা উঠাই কঠিন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দীর্ঘ দিন থেকে রেলস্টেশন এলাকার খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা মো. জাবেদ জানান, শ্রীমঙ্গলের আনারসের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানকার আনসিজনের আনারসে মিষ্টি খুব বেশি হলেও সিজনের আনারস হয় টক-মিষ্টি মিশ্রিত। এখানকার আনারসের ঘ্রাণে মন জুড়িয়ে যায়। আনারসের দাম বেশি নয়, কমই। বড় সাইজের আনারস ১২০-১৪০/১৫০ টাকার মধ্যেই হালি বিক্রি করা হয়। তাছাড়া মাঝারি সাইজের আনারস ৮০-১০০ টাকার মধ্যেই বিক্রি করা হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গল নতুনবাজারের আড়তদাররা জানান, শ্রীমঙ্গলে ৩০০-৪০০ পাইকার রয়েছেন আড়তদারদের তালিকাভুক্ত। মূলত, চাষিদের কাছ থেকে আড়তদাররাই নিলামের মাধ্যমে আনারসগুলো নির্ধারিত দামে এ পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকেন তারা। এক ঠেলা আনারস বিক্রি করে দিলে তাদের ১০০ টাকা কমিশন থাকে। এক একটা আড়ত থেকে দৈনিক ১০-২০ হাজার টাকার আনারসহ কাঁচামাল বিক্রি করে থাকেন বলেও তারা জানান।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এবং কৃষিবিদ সামসুদ্দিন আহমদ জানান, গত মে থেকে জুন পর্যন্ত আনারসের ভরা মৌসুম। তবে কৃষকরা হরমোন প্রয়োগ করে সারা বছরই এই ফলটি চাষ করছেন। এ বছর জেলার প্রায় দুই হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ৬০০ টন। চাহিদা বাড়ায় জেলার সদর উপজেলা, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের পাহাড়ি টিলাগুলোয় আনারস চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে কৃষকদের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১৯ বছর ধরে একটি সেতুর অপেক্ষায় ২০ হাজার মানুষ

২০টি ভয়ংকর জে-১০ যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ, খরচ ২৭ হাজার কোটি

লবণের মাঠ ও চিংড়ি ঘের দখল নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ

গাজাগামী ফ্লোটিলার ১৩০ কর্মীকে জর্ডানে পাঠাল ইসরায়েল

গাড়িতে ফ্ল্যাগ ছাড়াই সাবের হোসেনের বাসায় যান ৩ রাষ্ট্রদূত

নির্বাচনকে ভিন্নখাতে পরিচালিত করতে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ চলছে : মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সূচিতে পরিবর্তন

আবরার হত্যার বিচার করলেই আ.লীগ নিষিদ্ধ হওয়া উচিত : চরমোনাই পীর

ফুসফুস ক্যানসারের এই ৫ উপসর্গ সাধারণ অসুখ ভেবে এড়িয়ে যাচ্ছেন না তো?

ভৈরবে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পাদুকা খাতে উদ্ভাবন শীর্ষক আঞ্চলিক ক্যাম্পেইন

১০

বিসিবিতে নতুন দায়িত্ব বণ্টন: কোন কমিটির নেতৃত্বে কে?

১১

চট্টগ্রামে যুবদলের দুই নেতাকে বহিষ্কার

১২

মানসিক ভারসাম্যহীন মা, ফুটফুটে কন্যা সন্তান পেল নতুন ঠিকানা

১৩

ট্রাম্পের ‘ডাক্তার দেখানো উচিত’ মন্তব্যে গ্রেটা থুনবার্গের পাল্টা জবাব

১৪

১৭ মাসে কোরআনে হাফেজ, উপহার পেল রাদিফ

১৫

তিন মাসে ৫০ দিন অনুপস্থিত মেডিকেল অফিসার

১৬

কমিউনিটি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন ঢাবির অধ্যাপক মোর্শেদ

১৭

‘দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে ৩ পরাশক্তি’

১৮

ডাকসুর এজিএস মহিউদ্দীনকে শৈশবের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংবর্ধনা

১৯

মেদ কমাতে হিমশিম খাচ্ছেন? মাত্র ২ মিনিটের কার্যকর কৌশল জেনে নিন 

২০
X