উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বেড়ে লালমনিরহাটে তৃতীয় দফা স্বল্পমেয়াদি বন্যার দেখা দেয়। তবে সোমবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। আর তিস্তার বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার হাতিবান্ধা, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে।
তিস্তা ব্যারাজ বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ টানা তিন দিন ধরে বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও সোমবার সকাল থেকে তা কমতে শুরু করেছে। এদিন সকাল ৬টায় পানিপ্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচে এবং সকাল ৯টায় আরও কমে গিয়ে তা বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পরে একই পয়েন্টে বিকেল ৩টায় পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৮০ মিটার। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) যা বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল থেকে এখনো পানি সরেনি। ফলে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এরইমধ্যে তলিয়ে আছে অনেক রাস্তাঘাট। কিছু বাড়ি-ঘর থেকে পানি নেমে গেলেও ঘরে বাইরে কাদা জমে আছে।
এদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্ট এবং জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চর গোবরর্ধন ও হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের বেশকিছু পয়েন্টে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে।
গত কয়েকদিনে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের দক্ষিণ গোবর্ধন চর এলাকার ১০টি বসতভিটা, মসজিদ মন্দিরসহ অন্যান্য স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা।
এদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত বসতভিটা এরইমধ্যে তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত তিনদিনে এ ইউনিয়নের উত্তর ডাউয়াবাড়ি গ্রামের ২০টি পরিবারের আশ্রয়স্থলও এ তালিকায় রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা আপাতত আলহাজ আছের মাহমুদ সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে অনেকে জায়গা না পেয়ে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধের ধারে ঘরবাড়ি আসবাবপত্র স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ আবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল রায় জানান, সোমবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ কমতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আর তিস্তার যেসব পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সে জায়গাগুলোতে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন