খুলনার ডুমুরিয়ায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রায়ন প্রকেল্পর শতাধিক ঘর দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দরিদ্র-গৃহহীনদের নামে বরাদ্দ দেয়া হলেও তারা ঘরে উঠতে পারছেন না। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের পছন্দের লোকদের অবৈধভাবে এসব ঘরের দখল দিয়েছে বলে জানা গেছে। আর অবৈধভাবে থাকা ব্যক্তিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুমতি নিয়েই ঘরে থাকছেন বলে দাবি করেছেন।
জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এর প্রথম ধাপে ৬৬টি ও দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি ও তৃতীয় ধাপে ৯০টি ঘর তৈরি করা হয়। ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই ঘরগুলো উদ্বোধন করেন। প্রথম ধাপের ৬৬টি ঘর থেকে একটি ঘর পান ৬৭ বছরের বৃদ্ধা জোহরা বেগম। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি কুলবাড়িয়া-বরাতিয়া মৌজার ২ শতক জমির উপর সেমিপাকা টিনসেড একটি ঘরের দলিল জোহরা বেগমকে প্রদান করেন উপজলো প্রসাশন। এরপর আড়াই বছর পার হলেও তা বুঝে পাননি এ বৃদ্ধা।
এ বিষয়ে জোহরা বেগম কালবেলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমারে ঘর দিছে কিন্তু সে ঘরে উঠতে গেলে আমায় মারে। আমার স্বামী সন্তান কেউ নাই। লোকের বাড়ী কাজ করি। আমি কাউরে টাকা পয়সা দিতে পারিনাই বইলা আমার দলিল থাকলেও ঘর হয় নাই।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর দরখাস্ত করেও কোন সমাধান পাননি বলে দাবী জোহরা বেগমের।
দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি ঘরের দলিল হস্তান্তর হয় ২০২২ সালের ২৫ মার্চ। কিন্তু বরাদ্দ হয়নি এমন প্রায় ২০টি ঘর কাগজপত্র ছাড়াই দখল হয়ে গেছে। ফলে দলিল পেলেও ঘরে উঠতে পারছে না গৃহহীনরা। বরাদ্দ পেয়েও ঘর হারানো ব্যক্তিরা ঘর পেতে প্রশাসন ও স্থানীয় নেতাদের দারে দারে ঘুরেও কোনো লাভ পাননি।
এদিকে কাগজপত্র না থাকা সত্ত্বেও ঘরগুলো যারা দখলে নিয়েছে তাদের অনেকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের । তাদের মধ্যে লাকি বেগম নামে একজন কালবেলাকে বলেন, আমার মেয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার সময় থানা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গেলে উনি বলেন, তুমি ওই ঘরে থাকো। তোমাকে কেউ নামাবে না।
অন্যদিকে কুলবাড়িয়া-বরাতিয়া মৌজায় ভদ্রা নদীর পাশে আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এর তৃতীয় ধাপের ৯০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে প্রায় সাত মাস আগে। ৯০টি ঘরের মধ্য মালিকানা দলিল হস্তান্তর হয়েছে মাত্র ৮টির। কিন্তু কাগজপত্র ছাড়াই বাকি ৮২টি ঘর দখল হয়ে গেছে। দলিল ছাড়া দখলে থাকাদের একজন শাহিদা বেগম কালবেলাকে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমাদের এখানে থাকার মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ হেলাল উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, দলিল থাকা সত্ত্বেও ঘরে উঠতে না পারার বিষয়টি জেনেছি। ইউনএনও সাথে কথা বলেছি। আশাকরি দ্রুত তারা ঘরে উঠতে পারবেন। যারা দলিল ছাড়া ঘর দখলে রেখেছে তাদের নেমে যেতে আমরা জোর তাগিদ দিয়েছি।
৯০ ঘরের ৮২টি দলিল ছাড়া দখলে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে যেসব পরিবার দলিল ছাড়া ঘর দখল করে রেখেছে তাদের অধিকাংশ পরিবার আমার ইউনিয়নের না। কয়রা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঘরগুলো দখল করে রেখেছে। এদের ভূমিহীন সনদসহ প্রয়োজনীয় কোন কাগজের জন্য আমার কাছে আসেনি। কিন্তু কিভবে তারা দখলে আছে তা আমি জানি না।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শরীফ আসিফ রহমান কালবেলাকে বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এর ঘরগুলো হস্তান্তরের সময় আমি ডুমুরিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলাম না, তবে আমি অভিযোগ পেয়েছি এবং অতি দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নিচ্ছি।
মন্তব্য করুন