ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ নরসিংদী জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা যানবাহন থেকে চাঁদা তোলা বন্ধ হয়েছে। গত ৫ আগস্ট থেকে জেলার বিভিন্ন স্ট্যান্ডে চালকদের কাছ থেকে কেউ চাঁদা আদায় করতে আসেনি। এতে স্বস্তি প্রকাশ করছেন বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকরা।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় একটি চক্র বছরের পর বছর ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ জেলার বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি করত। টাকা দিতে না চাইলে চালকদের হয়রানি করত চাঁদাবাজরা। বিভিন্ন এলাকার শতাধিক স্থান থেকে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হতো।
গাড়ির গতিরোধ করে এসব চাঁদা আদায়ের কারণে সড়ক-মহাসড়কে যানজট লেগেই থাকত। প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চললেও প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল নীরব। মুখ খুললেই বিপদ নেমে আসত প্রতিবাদকারীদের ওপর। অনেক সময় চাঁদা আদায় এবং ভাগভাটোয়ারা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
নরসিংদী জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মধ্যে সদর উপজেলার ভেলানগর বাসস্ট্যান্ড, ভৈরব বাসস্ট্যান্ড, জেলখানা মোড়, সাহেপ্রতাব মোড়, পাঁচদোনা মোড়, মাধবদী বাসস্ট্যান্ড, শিবপুর উপজেলার ইটাখোলা বাসস্ট্যান্ড, রায়পুরা উপজেলার কোন্দারপাড়া, বারৈচা, মরজাল বাসস্ট্যান্ডে প্রতিদিন ৩০ টাকা করে দিতে হতো।
এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় প্রতিটি আঞ্চলিক সড়কেই বিভিন্ন স্ট্যান্ডে চাঁদা দিতে হতো। প্রতিটি স্ট্যান্ডে প্রতিদিন প্রকার ভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা দিতে হয়। অনেক চালক চাঁদা নিয়ে প্রশ্ন তুললে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো এবং সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিত। বছরের পর বছর চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন চালকরা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকারের পতনের পর থেকে এসব স্থানে ট্যাক্স আদায়ের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ রয়েছে। এসব স্থানে লাঠি হাতে চাঁদাবাজদের আর দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক নেতা, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতাসহ চাঁদা আদায়কারীরা উধাও হয়ে গেছে।
তাজুল ইসলাম নামে একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক বলেন, ক্ষমতার দাপটে বছরের পর বছর অবৈধভাবে জোর করে চাঁদা নেওয়া হতো। এখন সময় বদলেছে। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান করে সরকারের পতন ঘটিয়েছে। এতে দীর্ঘদিনের এই অন্যায় কার্যক্রম ও শোষণ বন্ধ হয়েছে। এভাবে সবসময় যেন চাঁদা ছাড়াই গাড়ি চালাতে পারি এমনটাই দাবি নতুন সরকারের কাছে।
অটোরিকশাচালক সুমন মিয়া বলেন, সড়কের মোড়ে মোড়ে চাঁদা দিয়ে অটোরিকশা চালিয়ে পোষায় না। শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে সড়কে আর চাঁদা আদায়কারীদের দেখা যাচ্ছে না। এখন অটোরিকশা চালিয়ে মোটামুটি পকেটে কিছু টাকা জমা থাকছে। নিজের শ্রমের টাকা চাঁদাবাজদের পকেটে আর যায় না এখন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নরসিংদী জেলা স্বেচ্ছাসেবকদের পক্ষ থেকে মো. শাহজালাল রহমত উল্লাহ জানান, তাদের যতগুলো দাবি ছিল তার মধ্যে অন্যতম একটি দাবি ছিল পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধ করা। শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলা ফেরানোর পাশাপাশি সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যারাই দায়িত্ব পালন করবেন তারা যেন বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত রাখেন। এ ছাড়া সড়কে যারাই চাঁদাবাজি করবে তাদের ধরে আমাদের খবর দিবেন, আমরা শিক্ষার্থীরা সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে আছি।
মন্তব্য করুন