বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘দেশের জলসীমায় ভারতীয় ট্রলার’, খালি হাতে ফিরছেন উপকূলের জেলেরা

মাছ ধরছেন জেলেরা। ছবি : কালবেলা
মাছ ধরছেন জেলেরা। ছবি : কালবেলা

অবরোধ শেষে ভরা মৌসুমেও মিলছে না রুপালি ইলিশ। এদিকে আড়তদারের কাছ থেকে দাদনের টাকা নিয়ে সমুদ্রে কিংবা নদীতে পাঠানো ট্রলার মালিককে গুনতে হচ্ছে লোকসান। সমুদ্রে আশাতীত ইলিশ ধরা না পড়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ট্রলার মালিক ও জেলেদের কপালে। স্থানীয় বাজারগুলোতেও চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে যেতে না পারা ও দেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের মাছ শিকারকেই ইলিশ কম পাওয়ার কারণ হিসেবে দাবি করেছেন বরগুনা উপকূলের জেলেরা।

অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ বন্ধে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বাংলাদেশ নৌপুলিশের সহযোগিতা চেয়ে জননিরাপত্তা বিভাগে ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে চিঠি দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলে কালবেলাকে জানান বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন।

জেলার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা হলে তারা কালবেলাকে জানান, টানা ৬৫ দিনের অবরোধের শেষে জুলাই ও অক্টোবর মাসে ইলিশের ভরা মৌসুম, প্রতি বছর এ সময়ে সমুদ্র তীরবর্তী নদী ও বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়ে ঝাকে ঝাকে রূপালি ইলিশ। তবে ইলিশের এ মৌসুমে নদী ও সমুদ্রের ইলিশ আহরণে চিত্র অনেকটা ভিন্ন। নিষেধাজ্ঞা শেষে ২৩ জুলাই থেকে জেলেরা সাগরে মাছ ধরার আশায় জাল ফেললও ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত বড় সাইজের ইলিশ। যারা সমুদ্রে যাচ্ছেন তাদের কেউ ফিরছেন খালি হাতে, আবার কেউবা অল্প পরিমাণ জাটকা নিয়ে তীরে ফিরছেন। বড় ইলিশ কম পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ছেন উপকূলের জেলেরা। সদরের ছোনবুনিয়া এলাকার জেলে জহিরুল কালবেলাকে বলেন, অনেক দিন পরে সাগরে নামছি। আবহাওয়া খারাপ তাই দুদিন ছিলাম, তেমন একটা মাছ ধরা পড়ছে না। ছোট সাইজের কিছু জাটকা পেয়েছি, তাতে ট্রলারের বাজারের খরচা হবে না। আর যে আশা নিয়ে সাগরে যাওয়া, সে অনুযায়ী বড় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, দুই তিন বছর ধরে সাগরে কোনো বড় ইলিশ পাচ্ছি না এবং মালিকের কাছ থেকে অনেক টাকাও নিয়েছি। যদি সাগরে মাছ পেতাম তাহলে ধার দেনা শোধ করে সংসার চালাতে পারতাম। স্থানীয় জেলেদের দাবি, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা সময়টায় বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ভারতীয় ট্রলার সব ধরনের মাছ শিকার করেছে। দেশীয় ট্রলারের চেয়ে কয়েকগুণ বড় ভারতীয় ট্রলার মাছ শিকার করছে, এটা বন্ধ করতে হবে।

এফবি সম্রাট-১ ট্রলারের মালিক মো. মোবারক আলী মৃধা কালবেলাকে জানান, বর্তমানে তার তিনটি ট্রলার সাগরে রয়েছে। একটি ট্রালারে ২০০-এর মতো জাটকা পেয়েছে। সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া প্রত্যেক জেলের পেছনে অনেক খরচ হয়। এবার সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষে ট্রলার নিয়ে সাগরে যাওয়ার পর থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন আড়তদারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা দাদন নিয়েছি।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী কালবেলাকে জানান, ধারদেনা করে সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিল জেলেরা। সাগরে মাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। বড় কোনো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ছোট জাটকা ছাড়া কিছু মিলছে না। ভারতের ট্রলারগুলো বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে অবরোধের সময়ে মাছ ধরে নিয়ে যায়, এটা বন্ধ করা হলে হয়তো আমরা ভালো মাছ পাব।

এদিকে দেশের সর্ববৃহৎ পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সরবরাহ কম থাকায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। পাইকারি বাজারে এক কেজির চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা এবং ৭শ থেকে ৯শ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বরগুনা স্থানীয় মাছ বাজারে মাছ কিনতে আসা ক্রেতা রাজু হাওলাদার কালবেলাকে বলেন, অনেকদিন হয় ইলিশ মাছ কিনতে পারছি না। দাম অনেক বেশি, এক কেজি ইলিশ মাছ দাম প্রায় ১৫শ থেকে ১৬শ টাকা, ২৫০ গ্রাম ৩০০ গ্রামের মাছ ৯শ টাকা বিক্রি করছে। এভাবে যদি দাম থাকে তাহলে তো আমরা সাধারণ মানুষ মাছ কিনে খেতে পারবে না ।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন কালবেলাকে বলেন, বরগুনা জেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২৭ হাজার ২৫০ জন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে ট্রলারের মালিক ও জেলেদের। আবহাওয়া ভালো হলে জেলেরা সমুদ্রে আশানুরূপ মাছ পেলে অর্থনৈতিক দুর্দশা-দৈন্য কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, জেলেরা অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করছেন ভারতীয় জেলেরা। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বাংলাদেশ নৌপুলিশের সহযোগিতা চেয়ে জননিরাপত্তা বিভাগে ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে চিঠি দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিরামিক এক্সপো ২০২৫ প্রারম্ভে - ডিবিএল সিরামিকস সৌজন্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ

জেলে বসেই অনার্সে ফার্স্ট, ১০ বছর পর মাস্টার্সেও বিভাগে প্রথম স্থান—কে এই শিবির নেতা?

ভাতিজার লাথিতে প্রাণ গেল চাচার

বহিষ্কৃত ৭৪ নেতাকে ‍নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত

কর্মবিরতির ঘোষণা শিক্ষকদের / প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষা ঘিরে অনিশ্চয়তা

মা ও দুই শিশুর মরদেহ পৃথক স্থানে দাফন, মামলা হয়নি এখনো

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ধানের শীষের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে হবে : সেলিমা রহমান

বিশ্বকাপ ড্র ফরম্যাটে বড় পরিবর্তন আনল ফিফা

গোলাম রাব্বানীর ছাত্রত্ব ও এক পদ বাতিল করল ঢাবি

সাভারে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল

১০

দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না সার

১১

দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলে অটোর ধাক্কা, স্কুলশিক্ষক নিহত

১২

প্রতিটি ইউনিয়নে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা 

১৩

ইসলামেই আসবে সত্যিকারের মুক্তি : চরমোনাই পীর

১৪

হাসিনার লকারে শুধু পাটের ব্যাগ, যৌথ লকারে সোনার নৌকা-গয়না

১৫

রাজশাহীতে আর কোনো পুকুর ভরাট হবে না : বিভাগীয় কমিশনার

১৬

বিপিএলে নোয়াখালীর প্রধান কোচ হচ্ছেন সুজন

১৭

ব্যালটে যেমন দেখা যাবে এনসিপির শাপলা কলি প্রতীক

১৮

বার্জার অ্যাওয়ার্ড ফর ইন্টেরিয়র ডিজাইন ২০২৫ উদযাপন

১৯

এনসিপি জোটের ঘোষণা আসতে পারে আগামীকাল

২০
X