থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১১:২১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

খাদ্যাভাবে বাঁশ কোড়ল খেয়ে ৬৪ পরিবারের জীবনযাপন

শিশুদের সঙ্গে নিয়ে বাবা-মা বাঁশ কোড়ল খাচ্ছে। ছবি : কালবেলা
শিশুদের সঙ্গে নিয়ে বাবা-মা বাঁশ কোড়ল খাচ্ছে। ছবি : কালবেলা

বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম পাড়া বিশেষ করে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী পাড়াগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। উপজেলার মেনহাক পাড়া, বুলু পাড়া, তাংখোয়াই পাড়া, য়ংডং পাড়ায় প্রায় ৬৪টি পরিবার বাঁশ কোড়ল খেয়ে জীবনযাপন করছেন।

জানা যায়, থানচি উপজেলা ১নং রেমাক্রী ইউনিয়নের মায়ানমার সীমান্তবর্তী মেনহাক ম্রো পাড়া, বুলু পাড়া, তাংখোই পাড়া, য়ংডং পাড়াসহ আরও অন্তত ৯টি গ্রামে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। গত বছরে জুমের ফলন বন্যার কারণে ক্ষতি হওয়ায় পর্যাপ্ত ফসল পাননি ওই এলাকার বাসিন্দারা। বছর পেরোনোর আগে গত মে মাস থেকে তাদের খাদ্য সমস্যা দেখা দিলেও ধার দেনা করে কোন রকমে খেয়ে বেঁচে আছে তারা। ঘরের নেই কোন ধান ও চাউল, প্রতিদিন জঙ্গলের বাঁশ কোড়ল খেয়ে বেঁচে আছে তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশুরা গ্রামে হাউ মাউ করে কাঁদতে আছে ক্ষিধের জ্বালা। পাশে বসা মায়ের চোখে মুখের আর্তনাদ বলে দিচ্ছে তাদের প্রচণ্ড ক্ষুধা। রান্না করার মত ঘরে কিছু নেই। ঘরের কর্তারা চাল ধার করতে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরছে। ঘরের ফিরে যেন সন্তানদের মুখে এক মুঠো ভাত তুলে দিতে পারেন। আবার কেউ কেউ জুমের ধান পরিপক্ব হতে না হতে নিয়ে আসছে বাড়িতে। কাঁচা ধান চুলায় সিদ্ধ দিয়ে তারপরে শুকানো হয় চুলার উপরে। পরে আবার চালের জন্য মাড়াই করতে হয় ঢেঁকিতে। ১ পট চালের সঙ্গে বাঁশ কোড়ল সিদ্ধ দিয়ে খেতে হয়েছে প্রতিদিন।

আদাপাড়ার বাসিন্দা ঙৈলিং ম্রো বলেন, লাপ্রাইওয়া / মেনহাক পাড়া, বুলু পাড়া, তাংখোয়াই পাড়া, য়ংডং পাড়া এদের অবস্থা প্রায় তিন মাস থেকে বাঁশ কোড়ল খাচ্ছে। আমি নিজের চোখে দেখছি। সরকার থেকে কিছু পায় না।

কারবারি বুলু ম্রো, মেনহাত ম্রো, এবং চিংক্রা ম্রো জানান, গত বছর অতিবর্ষণের কারণে চাষিরা তেমন ফসল পায়নি। থানচির রেমাক্রী ইউনিয়নে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ১৩টি পাড়া। এর মধ্যে ৪টি পাড়ার প্রায় ৬৪টি পরিবারে খাদ্য অভাব দেখা দিয়েছে। এদের ঘরে কোনো চাল নেই। জঙ্গল থেকে বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ করে সিদ্ধ করে তিন বেলা খাবার খাচ্ছে। বাকি ৯টি গ্রামের জুমের ধান প্রায় শেষের পথে। তাদের মধ্যে যাদের ঘরে ধান আছে তারা একজন আরেকজনকে ধান দিয়ে সাহায্য করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীমান্তবর্তী পাড়াগুলোতে যাওয়ার মাধ্যম নদীপথ। তবে বান্দরবান জেলায় কয়েকদিন যাবৎ ভারী বৃষ্টি হওয়ায় সাঙ্গু নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও বর্ষা মৌসুমে নদী পথে পণ্য আনা নেওয়ার খরচও বেশি। ওই এলাকার মানুষ বেশির ভাগই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। দুর্গমতার কারণে থানচি সদর থেকে চাল নিয়ে যেতে পারছেন না তারা।

থানচি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো জানান, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ৪টি পাড়ায় ৫০-৬৪টি পরিবার বাস করে। ওই খানে ম্রো এবং ত্রিপুরারা বাস করে। তাদের অবস্থা খুবই করুণ। বাঁশ কোড়ল খেয়ে জীবনযাপন করছে। নদীতে পানির স্রোত বেশি এবং অর্থাভাব থাকায় সদরে গিয়ে চাল কেনার মতো টাকা তাদের নেই।

থানচি ইউএনও মোহাম্মদ মামুন জানান, রেমাক্রি ইউনিয়নটা অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। লিক্রি, তাংখোয়াই পাড়াসহ আরও কিছু পাড়া নেটওয়ার্ক বিহীন। একেবারে যোগাযোগ সহজে করা যায় না। ওইখানে বেশ কিছু পাড়ায় খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। রোববার দুটি নৌকা করে ১ টন চাল আমরা পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।

উল্লেখ্য, গত বছরে অতিবৃষ্টির কারণে জুমচাষ না হওয়ায় থানচি উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ২ হাজার ৩০০ পরিবার খাদ্য ঘাটতিতে পরে। পরে খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় তৎকালীন সরকার ৪৬ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রোনালদো–মেসি এক দলে? গুজব নাকি বাস্তবতা

এনসিপি-জামায়াত জোট : রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করলেন মাহফুজ আলম

হিরো আলম যোগ দিলেন আমজনতার দলে

সিরিয়ায় বিক্ষোভ ঘিরে সহিংস সংঘর্ষ, নিহত একাধিক

রাউজানে চূড়ান্ত প্রার্থী গোলাম আকবর খোন্দকার

ভারতের অধিনায়ক হলে টিকতেন না স্টোকস!

হাসনাত আব্দুল্লাহকে চেনেন না বিএনপি প্রার্থী মঞ্জুরুল আহসান

দুই দিনে শেষ হওয়া অ্যাশেজ টেস্টে হতবাক এমসিজি কিউরেটর

জোটে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন নাহিদ

দুই আসনের মনোনয়পত্রে স্বাক্ষর করলেন তারেক রহমান

১০

হেলমেট পরে এসে গুলি, এবার যুবদল নেতার মৃত্যু

১১

চট্টগ্রাম-৬ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত টিকিট পেলেন যিনি

১২

বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ, ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

১৩

বরিশাল-ঢাকাসহ অভ্যন্তরীণ সব রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা

১৪

জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিল আরও এক দল

১৫

ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ৩

১৬

ম্যাচ জেতানো চেরকিকে নিয়ে অদ্ভুত মন্তব্য গার্দিওলার

১৭

২৩ লাখ টাকার হার গিলে ফেলল চোর

১৮

নির্বাচন থেকে সরলেন এনসিপির আরেক শীর্ষ নেত্রী

১৯

নুরের দল থেকে মনোনয়ন নিলেন মেঘনা আলম, লড়বেন যে আসন থেকে

২০
X