কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বন্যার সাত দিন অতিবাহিত হয়েছে। এখনো বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতির দিকে। উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে কয়েক লক্ষাধিক লোক বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের একটি অংশ ২৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা বানভাসী মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। খাদ্য সংকটে ভুগছে কয়েক হাজার শিশু।
ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদছে শিশুরা। আদরের সন্তানের কান্না সহ্য করতে না পেরে কাঁদছেন মায়েরা। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি পানিবন্দি অনেক শিশু ক্ষুধার জ্বালায় কান্না করছে। উপায়ান্তর না দেখে পানির সঙ্গে মিশিয়ে বিস্কুট খাওয়াচ্ছেন তারা।
এসব খাবার জোরপূর্বক খাওয়ানোর ফলে অনেক শিশুই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
উপজেলা সদরের পাশে অবস্থিত চৌদ্দগ্রাম এইচজে সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া মিতা বেগম বলেন, ছয় মাস বয়সী জাকিয়া আক্তারকে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছি। আমার মেয়েটিকে ল্যাকটোজেন-২ খাওয়াই। এ আশ্রয়কেন্দ্রে আমরা কিছু শুকনো খাবার পেলেও শিশুদের কোনো খাবার পাচ্ছি না। খাবার না দিতে পারায় বাচ্চা কান্নাকাটি করছে, যা আমার সহ্য হচ্ছে না। উপায়ান্তর না দেখে বিস্কুট ভিজিয়ে খাওয়ানোর ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
আনোয়ারা বেগম নামে আরেক নারী বলেন, আমি আমার সাত মাসের কন্যাশিশুকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। শুকনো খাবার মাঝেমধ্যে পেয়ে থাকলেও কেউ শিশুদের খাবার নিয়ে আসছে না। ক্ষুধার জ্বালায় তারা কান্নাকাটি করছে। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
উপজেলার মিতল্লা গ্রামের পানিবন্দি জাহেদা বেগম বলেন, ‘গত সাত দিন পানিবন্দি হয়ে ঘরে আছি। কোলে রয়েছে পাঁচ মাসের পুত্রসন্তান। বিভিন্ন সংস্থা আমাদের শুকনো খাবার দিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে দিচ্ছে কিছু গুড়। কেউ শিশুদের খাবার দিচ্ছে না। পানির কারণে কোথাও যেতে পারছি না। শিশুদের কান্না আর সহ্য হচ্ছে না। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় অনেক শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। অনেক শিশুই মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন দুধ ব্যবহার করছে। বানভাসী মানুষদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হলেও শিশুদের খাবার কেউ বিতরণ করছে না।
মন্তব্য করুন