ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘুদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। দেশের কোথাও কোথাও আক্রান্তও হয়েছিলেন সংখ্যালঘুরা।
কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটেছে সাভারের চান্দুলিয়া ও ভাকুর্তাসহ সাভারের হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে। এ এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে গিয়ে অভয় দিয়েছেন এবং ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সাভারের বিএনপি নেতা মো. মুরাদ হোসেন।
জানা যায়, মো. মুরাদ হোসেন তার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘুদের ঘরে ঘরে গিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন এবং যে কোনো সমস্যা হলে তাকে জানানোর জন্য দিয়ে আসেন ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর।
এ ছাড়াও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় একেকটা পাড়া মহল্লা পাহারা দেওয়ার জন্য জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সাভারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেন। সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়ে সাভারের স্থানীয় জনগণের প্রশংসায় ভাসছেন এই বিএনপি নেতা।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) কথা হয় চান্দুলিয়া গ্রামের লক্ষ্মীরাণির সঙ্গে। মুরাদ হোসেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুরাদ হোসেন আমাদের কাছে দেবতা। তার আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং ব্যক্তিগত সহযোগিতায় আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে অনেকেই সুখে শান্তিতে আছি। মুরাদ হোসেনের বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন তিনিও আমাদের সহযোগিতা করতেন। এখন তার বাবার অবর্তমানে মুরাদ হোসেন আমাদের নিরাপত্তা এবং যে কোনো বিষয়ে পাশে থাকেন।
অভি রানী দাস বলেন, মুরাদ সব সময় আমাদের সাহায্য করেন। তার জন্য আমাদের এলাকায় বাইরের কোনো দুর্বৃত্তরা সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে পারে না। তিনি আমাদের বিপদে সবসময় পাশে থাকেন। আমরা এই গ্রামে যেসব হিন্দু পরিবার আছি বেশিরভাগই অসচ্ছল। আমাদের যে কোনো লোক বিপদে পড়লে কিংবা কেউ অসুস্থ হলে মুরাদ হোসেন টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন।
বিএনপি নেতা মুরাদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা, দোকানপাট-বাড়িঘর লুটপাট, মন্দির ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ বন্ধ ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করতে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা সে আলোকেই কাজ করছি। এ ছাড়াও আমার বাড়ি হিন্দু অধ্যুষিত চান্দুলিয়া এলাকায় হওয়ায় হিন্দুদের সঙ্গেই আমার ওঠাবসা বেশি। ছোটবেলা থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে আমার বেড়ে ওঠা। হিন্দুদের বিভিন্ন পূজা-পার্বণসহ সুখে-দুঃখে তাদের সঙ্গেই মিশে গেছি।
তিনি বলেন, আমার পরম সৌভাগ্য হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী আমাকে কেউ সন্তান, আবার কেউ ভাই, কেউ বন্ধু, আবার কেউ আত্মার আত্মীয় হিসেবে গ্রহণ করেছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই মিলে স্বাধীনতাযুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করেছে। সুতরাং এই দেশে আমাদের সবার সমান অধিকার। হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আমাদের পরিচয় নয়। আমাদের বড় পরিচয় হচ্ছে আমরা মানুষ।
মন্তব্য করুন