সবুজ শাহরিয়ার, হরিণাকুণ্ডু (ঝিনাইদহ)
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৫ পিএম
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গণঅভ্যুত্থানে রাকিবকে হারিয়ে দিশাহারা পরিবার

পুলিশের গুলিতে নিহত রাকিব হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
পুলিশের গুলিতে নিহত রাকিব হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

ঘরের কোণে এখনও রাখা আছে প্রিয় মোটরসাইকেলটি। পরিপাটি সাজানো বিছানা। পড়ার টেবিলে, ঘরে থরে থরে বই। ফ্রিজে পছন্দের নানা রকম খাবার- সবই আছে আগের মতো। নিস্তব্ধ ঘরে নেই শুধু । ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে ডুকরে কাঁদেন অসহায় বাবা-মা। প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে এখন নিঃসঙ্গ তারা।

শহীদ রাকিবের বাবা বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক। মা হাফিজা খাতুন গৃহিণী। রাকিব হোসেন রাজধানীর বনানী এলাকায় সুপার জুট মিলে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকায় মিরপুরের ১১ নম্বরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাকিব ছোট। বড় ভাই ইকবাল হোসেন সোনালী ব্যাংকের ঝিনাইদহ শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত।

গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রাকিবুল হোসেন। সেই দিন মেট্রোরেল লাইনের নিচে আন্দোলনকারীদের পানি বিতরণ করছিলেন। যতক্ষণ তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন ততক্ষণ নিরাপদেই ছিলেন। শিক্ষার্থীদের থেকে কিছুটা আলাদা হতেই তাকে টার্গেট করে গুলি করা হয়। গুলি তার গলায় ঢুকে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান তিনি। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বাসুদেবপুরে নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। বাবা-মা বসবাস করছেন জেলা শহরের সার্কিট হাউস রোডের মহিষাকুণ্ডু এলাকায়। সেখানেই শুক্রবার সকালে কথা হয় তাদের সঙ্গে।

হতবিহবল বাবা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আন্দোলনের সময় রাকিবকে নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতাম। ফোন করে খবর জানতে চাইলে ভিড় এড়িয়ে কথা বলতো। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি আমাদের বুঝতে দিত না। পরে বন্ধু পিয়াসের কাছ থেকে জানতে পারি সে আন্দোলনে শরিক হয়েছে। একজন বয়স্ক নারী দৌড়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় সড়কের ওপর লুটিয়ে পড়েন। রাকিব তাকে টেনে তুলতে এগিয়ে গিয়েছিল। ঠিক তখনই ওপর থেকে গুলি এসে ওর গলায় লাগে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাকিবের মা হাফিজা খাতুন বলেন, গত ১৮ জুলাই ঢাকায় আন্দোলনে হামলা শুরু হয়। ভাবতাম সে কীভাবে অফিস করবে? ১৯ জুলাই ফোন করে তাকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলেছিলাম। সে বলেছিল- কাজ আছে। বাসায় ফিরতে দেরি হবে। তখনও বুঝতে পারিনি ছেলে আমার আন্দোলনে শরিক হয়েছে।

চোখ মুছে হাফিজা খাতুন আরও বলেন, আমার ৪ বছরের নাতি রাফসান। সে চাচা রাকিবকে ছোট আব্বু ডাকতো। ফোনে বলেছিল- ছোট আব্বু তুমি বাড়ি চলে আসো। গাড়ি না পেলে মোটরসাইকেল নিয়ে চলে আসো। না হয় অ্যাম্বুলেন্সে আসো। কে জানত চার বছরের অবুঝ শিশুটির কথাই এমন নির্মম বাস্তবে পরিণতি হবে! আমার ছেলে এভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবে। -বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা।

রাকিবের বাবা আবু বকর সিদ্দিকের দাবি, ছেলেরা একটা সুন্দর, মানবিক, বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে রাজপথে শহীদ হয়েছে। সরকার যেন তাদের ভুলে না যায়। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনে হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছে। রাষ্ট্রের কর্তব্য তাদের দায়িত্ব নেওয়া। এতো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন স্বাধীনতা যেন মলিন না হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, থানায় মামলা

কুষ্টিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রাণ ভোমরারা হতাশ হয়েছেন : নুর

দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

এবার চট্টগ্রামে সাংবাদিককে গলা টিপে হত্যাচেষ্টা

সাবেক ৩ গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব

এনসিপির হয়ে নির্বাচন করব কিনা সিদ্ধান্ত নেইনি : আসিফ মাহমুদ

সবাইকে টেস্ট খেলানো জরুরি নয় : জোরাজুরিতে দেউলিয়ার শঙ্কা

প্রবাসেও আপ বাংলাদেশের কমিটি ঘোষণা 

ইসরায়েল পুড়ছে রেকর্ড তাপমাত্রায়

১০

শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনকে আর্থিক সহায়তার চেক দিল যমুনা অয়েল

১১

অসহায় পরিবারের দুই শিশুকে চিকিৎসা সহায়তা-অটোরিকশা দিলেন তারেক রহমান

১২

৩০০ আসনে নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে গণতন্ত্র মঞ্চ 

১৩

ড্রোন শো পরিচালনার প্রশিক্ষণে চীন যাচ্ছেন ১১ জন

১৪

সামাজিক কাজে অবদান রাখায় নিবন্ধন পেল প্রভাত

১৫

স্বাস্থ্যের ডিজির আশ্বাসে মন গলেনি, নতুন কর্মসূচি ছাত্র-জনতার

১৬

শহীদ মিনারে কাফনের কাপড় পরে বস্তিবাসীদের অবস্থান

১৭

পিআর পদ্ধতিতেই নির্বাচন হতে হবে : চরমোনাইর পীর

১৮

চট্টগ্রামে ১০ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা মেয়রের

১৯

রাজধানীতে জামায়াতের বিক্ষোভ-সমাবেশ

২০
X