বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২
সবুজ শাহরিয়ার, হরিণাকুণ্ডু (ঝিনাইদহ)
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৫ পিএম
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গণঅভ্যুত্থানে রাকিবকে হারিয়ে দিশাহারা পরিবার

পুলিশের গুলিতে নিহত রাকিব হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
পুলিশের গুলিতে নিহত রাকিব হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

ঘরের কোণে এখনও রাখা আছে প্রিয় মোটরসাইকেলটি। পরিপাটি সাজানো বিছানা। পড়ার টেবিলে, ঘরে থরে থরে বই। ফ্রিজে পছন্দের নানা রকম খাবার- সবই আছে আগের মতো। নিস্তব্ধ ঘরে নেই শুধু । ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে ডুকরে কাঁদেন অসহায় বাবা-মা। প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে এখন নিঃসঙ্গ তারা।

শহীদ রাকিবের বাবা বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক। মা হাফিজা খাতুন গৃহিণী। রাকিব হোসেন রাজধানীর বনানী এলাকায় সুপার জুট মিলে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকায় মিরপুরের ১১ নম্বরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাকিব ছোট। বড় ভাই ইকবাল হোসেন সোনালী ব্যাংকের ঝিনাইদহ শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত।

গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রাকিবুল হোসেন। সেই দিন মেট্রোরেল লাইনের নিচে আন্দোলনকারীদের পানি বিতরণ করছিলেন। যতক্ষণ তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন ততক্ষণ নিরাপদেই ছিলেন। শিক্ষার্থীদের থেকে কিছুটা আলাদা হতেই তাকে টার্গেট করে গুলি করা হয়। গুলি তার গলায় ঢুকে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান তিনি। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বাসুদেবপুরে নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। বাবা-মা বসবাস করছেন জেলা শহরের সার্কিট হাউস রোডের মহিষাকুণ্ডু এলাকায়। সেখানেই শুক্রবার সকালে কথা হয় তাদের সঙ্গে।

হতবিহবল বাবা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আন্দোলনের সময় রাকিবকে নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতাম। ফোন করে খবর জানতে চাইলে ভিড় এড়িয়ে কথা বলতো। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি আমাদের বুঝতে দিত না। পরে বন্ধু পিয়াসের কাছ থেকে জানতে পারি সে আন্দোলনে শরিক হয়েছে। একজন বয়স্ক নারী দৌড়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় সড়কের ওপর লুটিয়ে পড়েন। রাকিব তাকে টেনে তুলতে এগিয়ে গিয়েছিল। ঠিক তখনই ওপর থেকে গুলি এসে ওর গলায় লাগে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাকিবের মা হাফিজা খাতুন বলেন, গত ১৮ জুলাই ঢাকায় আন্দোলনে হামলা শুরু হয়। ভাবতাম সে কীভাবে অফিস করবে? ১৯ জুলাই ফোন করে তাকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলেছিলাম। সে বলেছিল- কাজ আছে। বাসায় ফিরতে দেরি হবে। তখনও বুঝতে পারিনি ছেলে আমার আন্দোলনে শরিক হয়েছে।

চোখ মুছে হাফিজা খাতুন আরও বলেন, আমার ৪ বছরের নাতি রাফসান। সে চাচা রাকিবকে ছোট আব্বু ডাকতো। ফোনে বলেছিল- ছোট আব্বু তুমি বাড়ি চলে আসো। গাড়ি না পেলে মোটরসাইকেল নিয়ে চলে আসো। না হয় অ্যাম্বুলেন্সে আসো। কে জানত চার বছরের অবুঝ শিশুটির কথাই এমন নির্মম বাস্তবে পরিণতি হবে! আমার ছেলে এভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবে। -বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা।

রাকিবের বাবা আবু বকর সিদ্দিকের দাবি, ছেলেরা একটা সুন্দর, মানবিক, বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে রাজপথে শহীদ হয়েছে। সরকার যেন তাদের ভুলে না যায়। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনে হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছে। রাষ্ট্রের কর্তব্য তাদের দায়িত্ব নেওয়া। এতো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন স্বাধীনতা যেন মলিন না হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের ‘মহান মে দিবস’ আজ

নোবিপ্রবির পুকুরে ছাত্র-ছাত্রীদের গোসলের ছবি ভাইরাল, প্রশাসনের সতর্কতা

রাজধানী থেকে পুরনো যানবাহন সরাতে অ্যাকশনে নামছে বিআরটিএ

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর ইউএনওকে বদলি

ববি প্রশাসনকে ‘মৃত’ ঘোষণা করে গায়েবানা জানাজা

স্কুলের ১৮টি গাছ কাটলেন প্রধান শিক্ষক

শাহ আমানত বিমানবন্দরের রানওয়েতে কুকুর, ব্যবস্থা নিতে মেয়রকে চিঠি

আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে কুপিয়ে হত্যা

বাবরি মসজিদ বানাবেন পাকিস্তানি সেনারা : পাকিস্তানের সিনেটর

কাশ্মীর হামলার পর চাপে ভারতের মুসলিমরা, বেড়েছে দমনপীড়ন

১০

ছাত্রদের ক্ষমতায় এনে দেশের ক্ষতি করা হয়েছে : সোহেল

১১

সন্ধ্যা নদীতে বাঁধ নির্মাণের দাবি

১২

মে মাসে হতে পারে ২টি ঘূর্ণিঝড়

১৩

শ্রমিক সমাবেশে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন তারেক রহমান

১৪

ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা ইসরায়েলে

১৫

গ্রাহকদের জন্য বাড়তি সুবিধা আনল বাংলালিংক

১৬

জয়ের পরও শান্তর মুখে হতাশা

১৭

রাজশাহী মাউশি কার্যালয়ে দুদকের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন

১৮

জিআই স্বীকৃতি পেল নরসিংদীর লটকন

১৯

মুসলিম ছাত্রকে পাকিস্তানের পতাকায় মূত্রত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ ভারতে

২০
X