মাত্র ২০০ টাকার জন্য রাজমিস্ত্রি রিপন হোসেনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তারই প্রতিবেশী ভাতিজা হৃদয় হোসেন। ঘটনার পর পালিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হলো না অভিযুক্ত হৃদয়ের। অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১২ পাবনার একটি দল।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে র্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার তৌহিদুল মবিন খান এই তথ্য জানান।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (১৪ আগস্ট) গভীর রাতে ঢাকার সাভারের আশুলিয়া কাঠগড়া এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃত হৃদয় (২২) পাবনার আতাইকুলা থানার ভবানীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের রজিম উদ্দিনের ছেলে। নিহত রিপন হোসেন (২১) একই গ্রামের খোরশেদ মোল্লার ছেলে।
হত্যার ঘটনা ও কারণ সম্পর্কে র্যাব কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার তৌহিদুল মবিন খান বলেন, গত ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আতাইকুলা থানার ভবানীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের কয়েকজন তরুণ, যুবক চাঁদা তুলে টিন ও বাঁশ দিয়ে একটি ক্লাব ঘর তৈরি করে। ওই ক্লাব ঘর তৈরিতে নিহত রিপন ৫০০ টাকা এবং অভিযুক্ত হৃদয় ২০০ টাকা দেয়। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর গত জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রিপনের সঙ্গে হৃদয়ের চাচাত ভাই আয়নালের দ্বন্দ্ব হয়। এই দ্বন্দ্বের কারণে ক্লাব ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়।
নিহত রিপন ক্লাবের টিন, বাঁশ ইত্যাদি নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেন হৃদয় এবং ঘর করার সময় তার দেওয়া ২০০ টাকা দাবি করেন। এ সময় হৃদয়ের সঙ্গে ছিলেন তার আপন ভাই তালেব এবং চাচাতো ভাই আয়নাল ও মুনসুর। রিপন পরে টাকা দিবে বললে এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ওই সময় হৃদয়ের মা তাদের থামাতে গেলে তিনি পড়ে গিয়ে বাম হাতে আঘাত পায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রিপনকে মারার উদ্দেশ্যে হৃদয় স্থানীয় কামার দিয়ে একটি ধারালো হাঁসুয়া তৈরি করে এবং সুযোগ খুঁজতে থাকে।
একপর্যায়ে গত ১২ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রতিদিনের মতো রিপন রাজমিস্ত্রীর কাজে যাবার জন্য নিজ বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় গ্রামের জনৈক ময়নালের মুদি দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হৃদয় তার হাতে থাকা ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে রিপনের মাথায় কোপ দিলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হৃদয় ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
গুরুতর আহত রিপনকে প্রথমে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য রিপনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে ঘটনার ১২ দিন পর গত ২৩ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিপন।
এ ঘটনায় রিপনের বৃদ্ধ পিতা খোরশেদ মোল্লা বাদী হয়ে আতাইকুলা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন অভিযুক্ত হৃদয়। র্যাব-১২ এর সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। মামলার প্রধান আসামি এবং হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হৃদয়কে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অবশেষে আত্মগোপনে থাকা হৃদয়কে ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার কাঠগড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে তাকে আতাইকুলা থানার মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন