ঢাকার কেরানীগঞ্জে একটি রাসায়নিক গুদামে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে পাঁচজন হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মো. শামসুজ্জামান।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) ভোর ৩টার দিকে কেরানীগঞ্জের কালিন্দী ইউনিয়নের গদারবাগ এলাকায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণে ঘুমন্ত শিশুসহ তিনজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর দুইজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া আগুনে দগ্ধ হয়েছেন দুই নারীসহ আরও তিনজন। তাদের উদ্ধার করে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- কালিন্দী গদারবাগ এলাকার বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী মিলন মিয়ার স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৩৫) ও তার মেয়ে ইশা আক্তার (১৪), সোহাগ মিয়া (৩০), সোহাগ মিয়ার স্ত্রী মিনা আক্তার (২১) ও তার দেড় বছর বয়সী মেয়ে তাইয়েবা আক্তার। অগ্নিদগ্ধরা হলেন- রোজা মনি (৪) ও মো. সাঈদ।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম জানান, দগ্ধ অবস্থায় চারজনকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের মধ্যে জেসমিন নামের একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। হাসপাতালে আনার পর সোহাগ মিয়া মারা যান। তার শরীরের এক-তৃতীয়াংশ পোড়া ছিল। রোজা মনির শরীরের ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সাঈদ নামে একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় একজন জানান, মঙ্গলবার ভোর ৩টার দিকে হাজী টুটুল মিয়া নামের একজনের বাড়ির গোডাউনে আগুন লাগে। আগুন দেখতে পেয়ে আমরা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই। তবে পানির সংকটের কারণে ফায়ার সার্ভিসকে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস উপপরিচালক জানান, রাসায়নিক গুদামঘরে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে প্রথমে কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এবং পরে সদরঘাট ফায়ার সার্ভিস ও ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে প্রায় ছয়টি ইউনিট দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ভোর ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কেমিক্যালের গোডাউন হওয়ার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জে কেমিক্যাল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর কখনোই না ঘটে, সে লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল, দাহ্য পদার্থের গোডাউন সরিয়ে ফেলতে যা যা করণীয় সবই করা হবে। কেরানীগঞ্জকে কীভাবে বসবাস উপযোগী করা যায় সে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা অপসারণে এবার ভালোভাবে নামতে হবে। কাউকে এক বিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না।’
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ সময় নিহত পরিবারের প্রত্যেককে ২৫ হাজার ও আহতদের ১৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থসহায়তা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার কালবেলাকে জানান, আবাসিক এলাকায় যত্রতত্র যেসব রাসায়নিক, দাহ্য পদার্থ ও প্লাস্টিক কারখানা ও গুদামঘর রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন