বরিশালের সড়ক ও মহাসড়কের উন্নয়নের নামে শতাধিক গাছ কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী গৌরনদীর ও ভুরঘাটা থেকে বরিশাল নগরীর সীমান্ত পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার মহাসড়কের দুই পাশে থাকা গাছগুলোও কাটা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে রেইনট্রি, মেহগুনি, কড়াইসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গড়িয়ারপাড় থেকে রূপাতলী পর্যন্ত এবং সদর উপজেলার চরকাউয়া থেকে বাকেরগঞ্জের নলুয়া পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের বিপুল সংখ্যক গাছ কাটা হয়েছে।
পরিবেশবীদরা বলছেন, একটি গাছ কাটার আগে নতুন চারা রোপণ করতে হবে। সেই চারা বেড়ে ওঠার নিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে তারপরই গাছ কাটা উচিত। একসঙ্গে এত গাছ কাটলে এলাকার পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বরিশাল বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ বছরে শুধু বরিশাল এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলাতেই সর্বোচ্চ ৫২ কিলোমিটার সড়কের গাছ কাটা হয়েছে। সবগুলোই কাটা হয়েছে সড়ক উন্নয়নের নামে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাকেরগঞ্জ ১২ কিলোমিটার, ২০২০-২১ সালে ৮ কিলোমিটার, ২০২১-২২ সালে বাকেরগঞ্জে ৩ কিলোমিটার ও বরিশাল সদর উপজেলায় ৯ কিলোমিটার এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাকেরগঞ্জ উপজেলার ১৫ কিলোমিটার ও বরিশাল সদর উপজেলার ৫ কিলোমিটার সড়কের গাছ কাটা হয়েছে। বর্তমানে বরিশাল জেলার সীমান্তবর্তী গৌরনদীর ও ভুরঘাটা থেকে বরিশাল নগরীর সীমান্ত পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার মহাসড়কের দুই পাশে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলোও কাটা হচ্ছে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের বৃক্ষপালনবীদ পূর্বাঞ্চলের নির্বাহী মীর মুকুট মো. আবু সাঈদ বলেন, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের ১১৫ থেকে ১৫৫ কিলোমিটার সড়কের বরিশাল জেলা অংশে কিছু গাছ দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে সড়কের বাঁকে যেসব গাছ রয়েছে সেগুলোর কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এ কারণে ৪০ কিলোমিটার সড়কের পাশ থেকে ৪৭১টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটা হচ্ছে। এগুলো নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। এ ছাড়া নগরীর মধ্যে প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে। এজন্য সেখানকার আরও ২ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু রেইনট্রি গাছ ছিল যেগুলোর বয়স শতবর্ষ হবে।
এ সময় সড়ক উন্নয়নের জন্য গাছ কাটা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বরিশাল জেলার সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, একসঙ্গে এত গাছ কাটলে এলাকার পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার স্বার্থে গাছ কাটার প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে একটি গাছ কাটার আগে নতুন চারা রোপণ করতে হবে। সেই চারা বেড়ে ওঠার নিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে তারপরই গাছ কাটা উচিত।
তিনি আরও বলেন, গাছ কাটার ক্ষেত্রে যেমন নিয়ম রয়েছে, তেমনি লাগানোর ক্ষেত্রেও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন। তবে গাছগুলো যখন রোপণ হয় তখন সুদূর পরিকল্পনা নিয়ে রোপণ করা উচিত। ভবিষ্যতে গাছগুলো রক্ষা করেই উন্নয়ন করা উচিত। এখন যেই গাছগুলো কাটা হচ্ছে সেখানে অবশ্যই গাছ রোপণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে সড়ক বর্ধিত করার প্রয়োজন হলে অবশিষ্ট জায়গার মধ্যে থেকেই করা যায়। এতে গাছগুলো যেমন দীর্ঘস্থায়ী হবে তেমনি পরিবেশের জন্যও উপকার হবে।
বন বিভাগের বরিশাল ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে যেমন গাছ কাটা হচ্ছে তেমনি সরকারিভাবে গাছের চারা রোপণ ও বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। ছয় বছরে বরিশাল ও বাকেরগঞ্জে ৫৯ কিলোমিটার সড়কের পাশে আমরা ৫৯ হাজার বৃক্ষরোপণ করেছি। পাশাপাশি রোপণের জন্য বিতরণ করেছি ৬২ হাজার ৯৮৫টি গাছ। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ২৩৫টি গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে ২০২২-২৩ অর্থবছরে।
মন্তব্য করুন