১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার জঘন্য অপরাধে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা নেতৃত্ব দিয়েছিল। এ ধরনের জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করার যদি মিনিমাম কোনো স্বপ্ন দেখা হয় তাহলে সে চোখ উপড়ে ফেলা হবে। সে হাত ভেঙে দেওয়া হবে। সেই হাত ভেঙে দেওয়া হবে, সেই হাত কেটে ফেলা হবে বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
আজ শুক্রবার (১৮ আগস্ট) দিনাজপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দিনাজপুর প্রেস ক্লাব আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, ১৯৪৭ সালের দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান ও ভারত দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু দ্বিজাতি তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন দ্বিরাষ্ট্রীয় তত্ত্বে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদর্শী ও সাহসী রাজনীতিবিদ। তিনি সুনিপুণভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাঙালির ম্যাগনাকার্টা ছয় দফা দিয়েছেন। ছয় দফা বাঙালি জাতি বাস্তবায়ন করেছে। বঙ্গবন্ধু ’৭০-এর নির্বাচনে একক নেতায় পরিণত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতা অর্জন- বঙ্গবন্ধুর দোষ এটুকুই। এ কারণেই ১৫ আগস্ট। এ কারণেই ১৫ আগস্টের রক্তাক্ত ইতিহাস।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের জাতির পিতার বিষয়ে সেসব দেশে কোনো দ্বিমত নেই। তারা ‘মূল স্পিরিটে’ এক জায়গায় আছে। বাংলাদেশের তিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। একটি হলো স্বাধীনতার ইশতেহার- যেটা স্বাধীনতার সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল মার্চের দুই তারিখে। দ্বিতীয়টি স্বাধীনতার ঘোষণা- যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তৃতীয়টি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র- যেটি ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগর অধ্যক্ষ ইউসুফ আলী পাঠ করেছিলেন। এগুলো হচ্ছে বেসিক বিষয়। ’৭৫-এর খুনিরা ঘোষণাপত্রকে হত্যা করেছে, স্বাধীনতার ঘোষণাকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন- আজকে আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আছি, আমাদের লড়াইটা সেই জায়গায়। আর যারা এর বিরুদ্ধে তাদের লড়াইটা ওই জায়গায়। খুব পরিষ্কার। আমাদের এই সংগ্রামটা চালিয়ে যেতে হবে। বেসিক জায়গাগুলো তারা টেনে ধরতে চায়। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে আমাদের সংবিধান পাল্টে ফেলতে চেয়েছিল, পারেনি। সব রাজনৈতিক দলের হাত পা তখন বাধা ছিল। সামরিক আইনের মধ্যেও তিনি সেটি করতে পারেননি। খন্দকার মোস্তাক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। পরে সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তিনি তা পারেন নাই। সেই সংবিধানকে মেনে নিয়ে জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অ্যাক্ট সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করেছেন। জিয়াউর রহমান যা পারেন নাই; তার সন্তানরা আজকে বলছে সংবিধান পাল্টে ফেলবে। কত বড় সাহস।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষরা কি মরে গেছে? বাংলাদেশে ফয়েজ আহমেদ, এবিএম মুসা, গাফফার চৌধুরীর উত্তরসূরিরা কি মরে গেছে? মরে যায়নি। এখনো কলম আছে। এখনো কলমের কালি শুকায়ে যায়নি। এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অস্ত্র গর্জে ওঠে, এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গর্জে ওঠে। কাজেই এ ধরনের দুঃস্বপ্ন দেখার যে চিন্তাভাবনা সেগুলো বাদ দিতে হবে। এ দেশে থাকতে হলে ঘোষণাপত্র মানতে হবে, স্বাধীনতার ঘোষণা মানতে হবে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মির্জা ফখরুলের প্রসঙ্গে বলেন, ‘মির্জা ফখরুলকে কেউ কেউ প্রশ্ন করেছিল এত হাসিখুশি কেন? উনি বললেন, আমি দিবালোকের মতো দেখতে পাচ্ছি আমরা ক্ষমতায় আসতেছি।’ উনি দিবালোকের মতো দেখতে পাচ্ছেন। আমি বলি কেন খুশি? কুখ্যাত রাজাকারের ছেলে আজকে জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর থেকে আর কী পাওয়া হতে পারে। শুধু ফখরুল নয় ফান্ডামেন্টাল বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে যারা আছে তাদের সকলেরই মৃত্যু ভয় ঢুকে গেছে। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ তাদের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে হাজির হবে- ভোট কেন্দ্রে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কাজেই অত গর্জে ওঠার কোনো বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের যে উন্নয়ন তা পৃথিবীর দেশে দেশে স্বীকৃতি মিলেছে। আমরা গর্ব করি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের নেতা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীর রাজনীতির নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতায় চলে গেছেন। বিশ্ব নেতৃত্ব তাকে সেভাবেই দেখে এবং শেখ হাসিনাকে সেভাবে দেখে বলেই আজকে বাংলাদেশকে নিয়ে এত বেশি চিন্তা ভাবনা এত বেশি মাথাব্যথা।
দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্বরূপ বকশী বাচ্চুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী দুলাল, দিনাজপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদ সরকার, দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রেজা হুমায়ূন ফারুক চৌধুরী ও সিভিল সার্জন বোরহানুল হক চৌধুরী।
মন্তব্য করুন