পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৩ এএম
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

আমরা মাঠে মারা যাচ্ছি: আলুচাষি জয়নাল

আমরা মাঠে মারা যাচ্ছি: আলুচাষি জয়নাল
আগাম আলু উত্তোলন কাজে ব্যস্ত কৃষি শ্রমিকরা। ছবি : কালবেলা

আলু চাষের জন্য প্রসিদ্ধ রংপুরের পীরগাছায় এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হলেও বাজারে দাম নেই, ফলে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। বোরো চাষ বা বেশি লাভের আশায় যেসব কৃষক আগাম জাতের আলু চাষ করেছেন তারা পড়েছেন বেশি বিপাকে। আগাম আলু সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ও বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হওয়ায় হতাশ কৃষকরা তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে পানির দামে আলু বিক্রি করছেন। এতে তাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তবে কৃষকদের দাবি, চাষের পরিমাণ ২০ হাজার হেক্টরেরও অধিক, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর আলুর দাম ভালো থাকায় অনেক কৃষক এবার অধিক পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করেছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন চলতি বছর আলুর সংরক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ায় সংকট যেন আরও ঘনীভূত হয়েছে।

সম্প্রতি খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি ইস্ট্রিক জাতের আলু ১০-১২ টাকা, সেভেন জাতের আলু ৮-১০ টাকা এবং লাল পাকরি জাতের আলু ১২-১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যেখানে গত বছর দাম ছিল প্রায় দ্বিগুণ।

এ বছর উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে আগাম আলু বেশি চাষ হয়েছে। তবে কোল্ড স্টোরেজগুলো এখনও বন্ধ থাকায় কৃষকরা সংরক্ষণ করতে পারছেন না। ফলে মাঠ থেকেই কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

নয়ারহাট এলাকার কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, ১১০ টাকা কেজি দরে বীজ কিনে আলু চাষ করেছিলাম, এখন দেখি বাজারে দাম নেই। কোল্ড স্টোরেজও বন্ধ। আমরা মাঠে মারা যাচ্ছি।

শিবদেব গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, বীজ, সার, পানি, কীটনাশক, শ্রমিক সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় এবার আলুর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হয়েছে। এক লিটার পানির দাম ২০ টাকা, অথচ এক কেজি আলু এখন ১০-১২ টাকা। আমাদের এ লোকসান সহ্য করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

পীরগাছা বাজারের আলু ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত বছরের উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়েছে চাষাবাদে। বেশি উৎপাদনের ফলে দাম পড়ে গেছে। তবে কোল্ড স্টোরেজ খোলা হলে কিছুটা দাম বাড়তে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম জানান, এবার আলুর ফলন রেকর্ড পরিমাণ হয়েছে। বোরো চাষাবাদের জন্য অনেকে আগাম আলু তুলছেন। তবে আগাম আলু সংরক্ষণের সুযোগ কম থাকায় কৃষকরা কম দামে বিক্রি করছেন। সংরক্ষণ করলে পরে দাম বাড়তে পারে।

সচেতন কৃষকদের মতে, আলুর ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে দ্রুত কোল্ড স্টোরেজ চালু করা, সংরক্ষণ খরচ কমানো, রপ্তানির উদ্যোগ এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। অন্যথায় বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ে কৃষকরা ভবিষ্যতে আলু চাষে নিরুৎসাহিত হতে পারেন, যা দেশের কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এসএসসি পাসেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরির সুযোগ

গয়েশ্বর চন্দ্রের দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন ধার্য

সংস্কার না করে পূর্বের নিয়মে নির্বাচন হতে পারে না : চরমোনাই পীর

ওমরাহ করে ফিরেছেন রইস উদ্দিন, সাক্ষাৎ করতে গেলেন অপু বিশ্বাস

কেউ টাকা ধার চাইলে সম্পর্ক ঠিক রেখে যেভাবে ‘না’ বলবেন

ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা লড়াই করেছি : মো. শাহজাহান

৫৫ লাখ টাকা চুরির মামলায় গৃহকর্মী-দারোয়ান রিমান্ডে 

স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহারকারী স্বামীকে নিয়ে হাদিসে যা বলা হয়েছে

এশিয়া কাপ হকির ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশ

গলায় ম্যাজিক বল আটকে শিশুর মৃত্যু

১০

সন্তান-স্ত্রীসহ সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা 

১১

প্রতিদিন কতটা হাঁটা স্বাস্থ্যসম্মত, ৭০০০ নাকি ১০০০০ পা?

১২

জুলাই সনদের কয়েকটি দফা নিয়ে বিএনপির আপত্তি আছে : সালাহউদ্দিন

১৩

রাতে ঢাকাসহ ৯ অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

১৪

অল্পের জন্য রক্ষা পেল ট্রেনের হাজারো যাত্রী

১৫

এআই ভিডিও দিয়ে অপপ্রচার, দাবি বিএফআইইউর প্রধানের

১৬

মেহেরপুর সীমান্তে ৩৯ নারী-পুরুষকে হস্তান্তর বিএসএফের

১৭

সেই রইস উদ্দিনের বাড়িতে অপু বিশ্বাস

১৮

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের পদত্যাগ

১৯

পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে কিম জং উনের নতুন হুমকি

২০
X