বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এক মিষ্টির ওজন ১৫ কেজি, দাম ৯ হাজার

মাছ আকৃতির মিষ্টিসহ পোড়াদহ মেলায় মিলছে বাহারি ডিজাইনের মিষ্টান্ন সামগ্রী। ছবি : কালবেলা
মাছ আকৃতির মিষ্টিসহ পোড়াদহ মেলায় মিলছে বাহারি ডিজাইনের মিষ্টান্ন সামগ্রী। ছবি : কালবেলা

৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার গাবতলী উপজেলার গ্রামীণ পোড়াদহ মেলা যেন সম্প্রীতির এক মিলনমেলা। এই মেলা কারো কাছে মাছের মেলা, আবার কারো কাছে জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত। তবে স্থানীয় নাম পোড়াদহ মেলা।

এদিকে মেলায় গতবার নিষিদ্ধ হলেও এবার উঠেছিল ৩০ কেজি ওজনের বাঘাইড়, ২৬ কেজি ওজনের কাতল, ২২ কেজি ওজনের পাঙাস, ১৫ কেজির বোয়ালসহ নানা প্রজাতির মাছ। ছিল সামুদ্রিক মাছও। অনেক প্রজাতির মাছের পাশাপাশি ওঠেছিল নানা পদের মিষ্টান্ন এবং কাঠের আসবাবপত্রসহ গৃহস্থালি সামগ্রী।

মেলায় আগত দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়ে ৩০ কেজি ওজনের যমুনা নদীর একটি বিশাল বাঘাইড় মাছ। ১৮০০ টাকা কেজি হিসেবে তার দাম চাওয়া হয় ৫৪ হাজার টাকা। কিন্তু দুপুর ২টা পর্যন্ত তার কোনো ক্রেতা মিলেনি। বিক্রেতা আলহাজ জমির উদ্দিন জানালেন, বড় বাঘাইড় মাছের ক্রেতা না মিললে সেটি কেটে বিক্রি করা হবে। তিনি এসেছেন সিরাজগঞ্জ থেকে। এবার মেলায় ছোট বড় প্রায় ৬০টি বাঘাইড় মাছ এনেছেন তিনি। বেলা একটা পর্যন্ত বিভিন্ন সাইজের ১২টি বিক্রি করেছেন। তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে এই মেলায় মাছ বিক্রি করে আসছেন।

মামা ভাগ্নে আড়তের মালিক মো. আল আলিম নামে এক ব্যবসায়ী তার দোকানে তুলেছিলেন ২৬ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ। বিশালাকার এই মাছটি বিক্রির জন্য তিনি এক হাজার ৪০০ টাকা কেজি হিসেবে দাম চান ৩৬ হাজার ৪০০ টাকা। এছাড়াও তিনি ২২ কেজি ওজনের পাঙ্গাসের দাম প্রতি কেজি ১২০০ টাকা কেজি হিসেবে দাম চান ২৬ হাজার টাকা। এছাড়া ১৫০০ টাকা কেজি দরে ১৫ কেজি ওজনের বোয়াল মাছের দাম চান সাড়ে ২২ হাজার টাকা।

মেলায় মহাস্থান থেকে এসেছেন রিবাজ উদ্দিন। তিনি ১৫ কেজির ব্লাক কার্প নিয়ে এসেছেন। ৭০০ টাকা হিসেবে দাম চাইছেন সাড়ে ১০ হাজার টাকা। তিনি প্রায় ৮ মণ মাঠ এনেছেন বিক্রির জন্য।

মিষ্টি দোকানি গাবতলী উপজেলার সোনাকানিয়া এলাকা থেকে আসা আলমগীর জানান, এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকেই তারা এ মেলায় আসেন এবং বাহারি ডিজাইনের মিষ্টান্ন সামগ্রী নিয়ে আসেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিপুল পরিমাণ মিষ্টান্ন সামগ্রী নিয়ে তারা মেলায় এসেছেন। বেচাকেনাও বেশ ভালো। এবার তিনি ১৫ কেজি ওজনের একটি বড় মাছ মিষ্টি মেলায় এনেছেন। ৬০০ টাকা কেজি ধরে মিষ্টিটির দাম হাকিয়েছেন ৯ হাজার টাকা। দুপুরে পর্যন্ত ক্রেতা পাননি তিনি।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৪০০ বছর আগে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নে ইছামতি নদীর শাখা (খাল) সংলগ্ন পোড়াদহ নামকস্থানে একটি বটবৃক্ষ তলে আয়োজন করা হতো সন্ন্যাসী মেলা। কালের বিবর্তনে এই মেলা হয়ে ওঠে পূর্ব বগুড়ার বাসিন্দাদের মিলনমেলা। নদী তীরবর্তী স্থানে এই মেলায় ক্রমান্বয়ে নানা প্রজাতির মাছের আমদানি হতে শুরু করে। এক সময় তা এই অঞ্চলে বড় মাছের মেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ইছামতীর খালের পশ্চিমপাশে মাঠের আয়োজন করা হয় এই মেলার। মেলায় শিশুদের জন্য নাগরদোলা ট্রেন চড়কি সবই আছে।

মেলা উপলক্ষে সেখানকার বাসিন্দাদের রেওয়াজ হয়ে উঠেছে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো। মেলায় শিশু-কিশোরদের জন্য নাগরদোলা, সার্কাস, হোন্ডা খেলা, বিভিন্ন প্রকার খেলনার দোকান বসেছে। মেলার একপাশে বসে গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিশেষ করে মসলাপাতির দোকানপাট। অপরপাশে কাঠের আসবাবপত্রের দোকান। মেলার মিষ্টির দোকানে মাছ আকৃতির মিষ্টি তৈরি করে বিক্রি করেন দোকানিরা। এলাকার নতুন জামাইরা সেসব মিষ্টি কিনে নিয়ে যান শ্বশুরালয়ে।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল মাছপট্টিতে। মেলার মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, মেলা প্রাঙ্গণে কয়েকশ’ খুচরা বিক্রেতা দোকান সাজিয়েছেন। মেলার পূর্বপ্রান্তে উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বিভাবে সারিবদ্ধভাবে মাছের দোকান সাজানো। প্রতিটি দোকানে মাঝারি ও ছোট বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সাজিয়েন তারা। এই সারির সম্মুখভাগে বসেছে বড় মাছের বাজার। মেলায় আকৃতি ভেদে প্রতিকেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতলা ৪৫০ থেকে ১২০০ টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৪০০, চিতল ৫০০ থেকে ৭০০, বোয়াল ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০, হাঙরি ২০০ থেকে ৪০০, গ্রাসকার্প ২৫০ থেকে ৪০০, সিলভার কার্প ও বিগহেড ৩৫০ থেকে ৪০০, কালিবাউশ ৩০০ থেকে ৪০০, শোল ৪০০ থেকে ৫৫০ ও পাঙাস ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। ক্রেতারা জানান, বিগত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম কিছুটা বেশি।

মহিষাবান সার্বজনীন সন্ন্যাসী পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি নিকুঞ্জ কুমার পাল জানান, এই মেলার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল সন্ন্যাসী পূজা; সেটাই ছিল মূলত ঐতিহ্য। এখন মেলা কেন্দ্রিক কেনাকাটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে।

পোড়াদহ মেলার আয়োজক ও মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, মেলার যে ঐতিহ্য তা টিকিয়ে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়েছে। মানুষ তাদের প্রাণের টানেই মেলায় আসে। আর আশপাশের গ্রামগুলো আত্মীয়-স্বজনের মিলন মেলায় পরিণত হয়।

তিনি বলেন, মেলা প্রাঙ্গণের পূর্বপ্রান্তে রাস্তা ঘেঁষে মাছের ১২টি আড়ত বসেছে। ভোর থেকে মেলায় আসা বিভিন্ন এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী এসব আড়ত থেকে মাছ কিনে মেলায় বিক্রি করেন। মেলায় রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি মাছ বিক্রি করতে এসেছেন বলেও জানান তিনি।

গাবতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিক ইকবাল জানান, ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলার নিরাপত্তাসহ আশপাশের এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সার্বক্ষণিক পুলিশের টহল জোরদার করা হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে সে উৎসব তা যেন বিঘ্নিত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকার তাপমাত্রা নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা 

২৬ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

ডাকসু নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু আজ

তিন সহযোগীসহ ‘মাদক সম্রাট’ শাওন গ্রেপ্তার

ফের সৈকতে ভেসে এল মৃত ইরাবতী ডলফিন

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

২৬ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

পাঁচ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ

ক্ষমতায় গেলে এক কোটি কর্মসংস্থান করবে বিএনপি : টুকু

ড. ইউনুস কি ভালো ভোট করতে পারবেন : মান্না

১০

ষড়যন্ত্রকারীদের সতর্কবার্তা দিলেন আমিনুল হক

১১

স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু, চাচাতো চাচা রফিকুল রিমান্ডে 

১২

জবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা মনিটরিং সিস্টেম চালু ১ সেপ্টেম্বর

১৩

স্থপতি মোশতাক আহমেদের বাবার মৃত্যুতে রাজউক চেয়ারম্যানের শোক

১৪

আফ্রিদির বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারি, উকিল খুঁজছেন স্বপন

১৫

মুন্সিগঞ্জে ‘গত আগস্টে লুট করা অস্ত্র’ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা

১৬

গরিবের স্বপ্নেই থাকে ইলিশ

১৭

কেউ ছাই দেওয়া হাত থেকে বের হতে পারবে না : উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন

১৮

বাংলাদেশে তিন বছরে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশে

১৯

রুট ১৩ হাজার রান ছুঁতেই মুখ খুললেন শচীন

২০
X