ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৬ পিএম
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

৭৩ বছরেও নির্মাণ হয়নি স্থায়ী শহীদ মিনার

কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনার
কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনার। ছবি : কালবেলা

ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পেরিয়ে গেলেও টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও ভাষাশহীদদের প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। শহীদ মিনার না থাকায় ভালোবাসা ও সম্মান দিতে কলাগাছ দিয়ে তৈরি করে শহীদ মিনার। পরে সেখানেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে তারা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা খরচ করতে পারে কিন্তু শহীদ মিনার নির্মাণে তাদের বরাদ্দ থাকে না। দ্রুত উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মহান শহীদ দিবস পালিত হলেও এ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অর্থনৈতিক সংকট, স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের আন্তরিকতার অভাব এবং প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

সরেজমিনে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, স্থায়ী কোনো শহীদ মিনার নেই। এ উপজেলায় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা ও কারিগরিসহ একটি মহিলা ডিগ্রি কলেজ মিলে মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৮০টি।

ধনবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ধনবাড়ী পৌরসভা ও ৭ ইউনিয়নে কলেজ ১৪টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৩টি, দাখিল মাদ্রাসা ১২টি, আলিম মাদ্রাসা ২টি, ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসা ১টি, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫টি এবং ২৬টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছে ২৫টি প্রতিষ্ঠানে। এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। উপজেলায় ফাযিল ডিগ্রি ও দাখিল ১৫টি মাদ্রাসা থাকলেও ১৪টি মাদ্রাসায় আজ পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি। স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা ২৬টি ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫টির মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নেই।

উপজেলা সদরের পৌর এলাকায় একমাত্র আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজেও কোনো শহীদ মিনার নেই।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ধনবাড়ী পৌরসভা ও ৭ ইউনিয়নে ৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ হলেও ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি।

জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠছে না শহীদ মিনার। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পেরিয়ে গেলেও গড়ে ওঠেনি শহীদ মিনার। শিক্ষার্থীদের অনেক দূর-দূরান্ত থেকে কলা গাছ ও বাঁশ সংগ্রহ করে বা অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়।

শহীদ মিনার না থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। শহীদ মিনার না থাকায় আমরা অন্য কোনো শহীদ মিনারে বা কলা গাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে থাকি।

ধনবাড়ী আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ. বারী বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অর্থ সংকটের কারণে কলেজে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারছি না। প্রশাসনের সহযোগিতা চাচ্ছি যাতে অতি দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তফা কামাল বলেন, সরকারি নির্দেশনা রয়েছে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য। অর্থনৈতিক সংকটসহ সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় শহীদ মিনার নির্মাণ হচ্ছে না। যে সব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই তার তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানীয় উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণের তাগিদ দেওয়া আছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাবুল হাছান বলেন, সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি। তবে, অনেক সময় বিদ্যালয়ের উন্নয়কাজের মধ্য থেকে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য নির্দেশ দেওয়া আছে। যত দ্রুত সম্ভব বাকি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা শিক্ষা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু সাঈদ জানান, সরকারিভাবে আলাদা কোনো বরাদ্দ না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি। যেসব প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি প্রশাসন থেকে তালিকা সংগ্রহ করে পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জন্মাষ্টমী : সাংবাদিকদের সাথে পূজা পরিষদের মতবিনিময় বৃহস্পতিবার

রাহুল গান্ধীকে হত্যার হুমকি

সাদা পাথর উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু

বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে উয়েফা সুপার কাপে

স্বর্ণ পাচারে জড়িত সেই কেবিন ক্রু রুদাবা সাসপেন্ড

ইতালি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবে ২৬ জনের মৃত্যু

অফিসে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে কী করবেন 

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালককে গুলির পর কুপিয়ে হত্যা

হাজার কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস 

চৌকি কোর্টে অভিযোগের হেল্পলাইন চালু

১০

রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

১১

আ.লীগ পালিয়েছে ভারতে, আপনাদের পালাতে হবে পাকিস্তানে : টিপু

১২

গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনায় দুই কর্মকর্তাসহ ৮ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

১৩

জামিন পেলেন বিএনপির ১৩ নেতাকর্মী

১৪

বাংলাদেশে নিজের বিচার নিয়ে টিউলিপের প্রতিক্রিয়া

১৫

সেনাপ্রধানের নামে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট, আইএসপিআরের সতর্কবার্তা

১৬

সাদা পাথর বাঁচাতে ৫ দফা সিদ্ধান্ত প্রশাসনের

১৭

যুক্তরাষ্ট্রে বার্সা-ভিয়ারিয়ালের ম্যাচ নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের আপত্তি

১৮

টঙ্গীতে মানববন্ধনে হামলা, আহত ৫

১৯

গলায় চানাচুর আটকে শিশুর করুণ মৃত্যু

২০
X