বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতিসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার

যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতাসহ অন্যরা। ছবি : কালবেলা
যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতাসহ অন্যরা। ছবি : কালবেলা

দিনাজপুরের বিরামপুরে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সানোয়ার হোসেনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী।

রোববার (৩০ মার্চ) দুপুরে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

বিরামপুর থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মমতাজুল হক কালবেলাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন- উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সানোয়ার হোসেন (২৬), শাহা আলম (৩৬), আবু বক্কর সিদ্দিক (২৯), মোস্তাফিজুর রহমান (২৬), রতন রানা (২৫)।

জানা যায়, জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে গত শনিবার ২৯ মার্চ ডাক্তার মোকলেছুর রহমানের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চান উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সানোয়ার হোসেন ও তার সঙ্গীরা। টাকা না পেয়ে ডাক্তারের কেয়ারটেকার ফারুক হোসেন ও দেলোয়ারের বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর ও বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ কাটে দেন তারা।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ৭নং পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের ১নং ওর্য়াডের চন্ডিপুর (চায়না অফিস) এলাকায়। ঘটনার পর ডাক্তারের কেয়ারটেকার ফারুক হোসেন বিরামপুর থানায় একটি মামলা করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সানোয়ার হোসেন ও তার গংদের সঙ্গে পৌরশহরের ঘাটপাড় এলাকার অধ্যাপক ডা. মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে জমিজমার বিষয় নিয়ে মনোমানিল্য চলছিল। সেই জমির বিষয়ে সমাধান করার কথা বলে তারা ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।

মোখলেছুর রহমান পেশায় একজন ডাক্তার হওয়ায় তার জমি চন্ডিপুর (চায়না অফিস) এলাকার মৃত জাবেদ আলীর ছেলে ফারুক হোসেনকে (৪৩) জমিজমা দেখাশোনার জন্য কর্মচারী হিসেবে রাখেন। তিনি দীর্ঘদিন থেকে তার জমিজমা দেখাশোনা করে আসছিলেন। সেই জমিতে ফারুক হোসেন একটি দোকান ঘর নির্মাণ করেন। জমিতে এ মৌসুমে কুল বরই এবং কমলার চারাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল গাছ লাগিয়ে তিনি পরিচর্যা করে আসছিলেন। জমি দেখাশোনার কাজ করায় তারা সময়-সুযোগ মতো ফারুক হোসেনের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। বাড়িঘর উচ্ছেদ করে জমি দখল করবে বলে প্রায় সময় হুমকি-ধমকি দিত ওই ছাত্রদল সভাপতি।

গত রোববার (৩০ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সানোয়ারসহ অজ্ঞাত নামা ২০-২৫ জন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হাতে লাঠিসোঁঠা, রামদা, লোহার রড, শাবল, ধারালো চাকু, ছুরি, দা, বেকী, কোদাল ও কুঠার ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দল বেধে বাগানে ঢুকে পরে। বাগানে ঢুকে বাগানে থাকা ১৫৭টি বরই গাছ, ৮৪টি কমলা গাছ ও ২৩টি আমের গাছের গোঁড়া কেঁটে দেয়। যা আনুমানিক ১৬ লাখ ৮০ হাজার ৫৬০ টাকা মূল্যের ক্ষতি সাধন করে।

এসময় তাদের গাছ কাটতে নিষেধ করলে তারা কর্মচারী ফারুক হোসেনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। একপর্যায়ে ছাত্রদল সভাপতি সানোয়ার হোসেন হুকুম দেন, শ্যালাদের শেষ করে দাও, হুকুম করার সঙ্গে সঙ্গে তারা কর্মচারি ফারুকের ওপর আক্রমন করে। প্রাণভয়ে দৌড় দিয়ে বাড়িতে চলে আসে। তখন ছাত্রদল সভাপতি আবারও হুকুম করে, শ্যালাদের ধর। হুকুম করার সঙ্গে সঙ্গে তারা সবাই ফারুকের পেছনে ধাওয়া করে। তারা ধাওয়া করে বসত বাড়িতে অনধিকারভাবে ঢুকে পড়ে। বাড়িতে ঢুকে তারা তাদের এলোপাতাড়িভাবে মারপিট শুরু করে। মারধরে শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম করে।

ছাত্রদল সভাপতি সানোয়ার হোসেনের হাতে থাকা লোহার শাবল দিয়ে হত্যার উদ্দেশে ফারুক হোসেনের মামাতো ভাই দেলোয়ার হোসেনকে ডান হাতের কনুইয়ের নিচে ডাং মেরে গুরুত্বর জখম করে। দেলোয়ার মাটিতে পরে গেলে তার সঙ্গে থাকা মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক লোহার রড দিয়ে বাম হাতের কনুইয়ের নিচে আবারও ডাং মেরে গুরুতর জখম করে।

একপর্যায়ে, ফারুক হোসেনের বিদ্যুতের মিটারসহ বাড়িঘর ভাঙচুর করে আনুমানিক ১২ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে এবং বক্সের ভেতরে রাখা ব্যবসার নগদ ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়।

এসময় ফারুক হোসেন ৯৯৯ -এ কল করলে বিরামপুর থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। এসময় দৌড় দিয়ে পালাতে গিয়ে তারা আঘাত প্রাপ্ত হন। ওই সময় উত্তেজিত জনতা তাদের আটকিয়ে বেধড়ক পিটুনি দেয়। পরে যৌথ বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে নিয়ে যায়।

বিরামপুর থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মমতাজুল হক কালবেলাকে বলেন, ফারুক হোসেনের দায়ের করা মামলায় মো. সানোয়ার হোসেনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এই মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসরায়েলকে অস্ত্র দিতে সৌদি আরবকে অনুরোধ করে যুক্তরাষ্ট্র

ক্রীড়া ও ভাষা শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে চায় বিএনপি : আমিনুল হক

ফের ৮০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

বানিয়াচংয়ে বাছাই করে ‘পুলিশ হত্যা’, কী ঘটেছিল?

তীব্র ভাঙনের কবলে মেরিনড্রাইভ সড়ক, ঝুঁকিতে সেন্টমার্টিন

অন্তর্বাসসহ নানা পণ্য চুরি করাই এই বিড়ালের নেশা

নির্বাচন ভণ্ডুল করার অপচেষ্টাকে রুখে দেওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়ার আহ্বান জামায়াত আমিরের

পাকিস্তানে কেন বাঘ ও সিংহ পুষছেন অনেকে?

১০

নিম্নচাপের প্রভাবে তলিয়ে গেছে সুন্দরবনের নিচু এলাকা

১১

‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ভিডিও বানাচ্ছিলেন তারা, অতঃপর...

১২

আবর্জনায় ছেয়ে গেছে আমেরিকার বিভিন্ন শহর, বিপর্যস্ত নগরজীবন

১৩

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় পারভেজ মল্লিক

১৪

বাংলাদেশ থেকে বিপুল ভিডিও সরাল টিকটক

১৫

নেপালে আদালতের রায়ের খবর প্রত্যাখ্যান ইউএস-বাংলার

১৬

এইচআইভি আক্রান্ত কিশোরীকে দুবছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগ

১৭

সাংবাদিকরা সত্য তুলে ধরলে বিভ্রান্তি দূর হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৮

৫ কোটি টাকার সড়ক ভেসে গেল সমুদ্রে

১৯

অপেশাদার আচরণের অভিযোগে মুখ খুললেন বাসার

২০
X