সূর্যকান্ত গাইন। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চহেড়া গ্রামের বাসিন্দা। এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে টানাপড়েনের ছোট্ট সংসার। নিজের বলতে কোনো সম্পত্তি নেই তার, প্রতিবেশীর জমিতে একচালা টিনের ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন। পেশায় হাট-বাজারে খুচরা মাছ বিক্রেতা, প্রতিদিন তার গড় আয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। রাজনীতির মাঠে কখনোই তার পদচারণা ছিল না, নেই কোনো দলীয় পদপদবি কিন্তু বুঝতে শেখার পর থেকেই ভালোবাসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে খুশি হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তার ভাস্কর্য উপহার দেওয়ার কথা ভাবেন সূর্যকান্ত। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর কোথায় কীভাবে ভাস্কর্য তৈরি করা যায় তাই নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। স্থানীয় এক মৎস্য ব্যবসায়ীর পরামর্শে প্রথমে যোগাযোগ করেন খুলনা আর্ট কলেজে, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে পরামর্শ দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রফেসর শেখ সাদী ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করতে। কয়েকদিন ঘুরে সূর্যকান্ত প্রফেসর শেখ সাদী ভূঁইয়ার সাথে দেখা করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাস্কর্য বানিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
প্রফেসর প্রথমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সূর্যকান্তের আকুতি মিনতিতে তিনি রাজি হন। ভাস্কর্য তৈরির খরচ শুনে কিছুটা থমকে যায় সূর্যকান্ত কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তার শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভালোবাসার কাছে অর্থ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ইনকামে ভাস্কর্য তৈরি সম্ভব না জানতে পেরে তিনি গোয়ালের গরু এক লাখ পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। নিজের জমানো কিছু টাকা আর গরু বিক্রির টাকা মিলিয়ে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার খরচ করে তিনি নৌকার ওপর প্রধানমন্ত্রীর ভাস্কর্য বানিয়ে বাড়ি নিয়ে আসেন।
ভাস্কর্যসহ নৌকাটি একজন মানুষ পানিতে চালাতে পারবে এমনভাবে তৈরি করিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। উদ্দেশ্য ছিল পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রীর হাতে এই উপহার তুলে দেওয়া। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাকে আশ্বস্ত করলে তিনি ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন এলাকার শতাধিক লোক নিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যান কিন্তু প্রোটোকলের বেড়াজালে সূর্যকান্ত পৌঁছাতে পারেনি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীর হাতে উপহার তুলে দিয়ে পূরণ করতে পারেননি তার স্বপ্ন। বুকভরা কষ্ট নিয়ে একদিন অপেক্ষা করেন পদ্মার পাড়ে, যদি কোনো মাধ্যমে তুলে দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে তার উপহার। কিন্তু কোনো উপায় না পেয়ে তিনি ফিরে আসেন।
এ বিষয়ে সূর্যকান্তের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি জানান, আমি কিছু পেতে প্রধানমন্ত্রীর ভাস্কর্য তৈরি করিনি, আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, আমি তার কন্যা শেখ হাসিনাকে ভালোবাসি, তার হাতে আমার এই উপহার পৌঁছে দিতে পারলেই আমি খুশি।
তার স্ত্রী ঝর্ণা গাইন বলেন, আমরা গরিব মানুষ, বর্ষা হলে ঘর দিয়ে জল পড়ে, প্রধানমন্ত্রীর এই ভাস্কর্য ঘরে রাখার মতো ভালো কোনো জায়গা আমার ঘরে নেই। আমার স্বামী শেখ হাসিনাকে খুব সম্মান করে, ভালোবাসে; ভাস্কর্য বানাতে টাকার জন্য গোয়ালশূন্য করে গুরুডারে বিক্রি করে দিয়েছে, তার ইচ্ছা দেখে আমিও আর বাধা দেইনি। এখন ভাস্কর্যটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিতে পারলে আমরা সবাই খুশি হবো।
মন্তব্য করুন