গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতন এবং ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধকরণের ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী। এরপর সময়ের পরিবর্তনে সুযোগ বুঝে ভোল পাল্টে ঢুকে পড়েন ছাত্রদলে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এমন দুর্দশাগ্রস্ত সময়ে যেন অন্যতম আশ্রয়দাতা হয়ে উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। ছাত্রলীগের একঝাঁক নেতাকর্মী এখন ভোল পাল্টে যুক্ত হয়েছেন ছাত্রদলে, করছেন নিয়মিত বিভিন্ন প্রোগ্রাম।
নিষিদ্ধ ঘোষিত এসব ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলেন, আইন অনুষদের সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ, ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহিম, রাসেল আহমেদ (ছাত্রলীগ কর্মী), নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক (ছাত্রলীগ কর্মী), ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মারুফ হাসান হৃদয় সরকারসহ আরও বেশ কয়েকজন।
এসব নেতাদের মাঝে আব্দুর রহিমের সদস্য পদ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের এক বিবৃতিতে স্থগিত ঘোষণা করা হলেও এখনও দলটির বিভিন্ন কার্যক্রমে তাকে দেখা যায়। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয় ও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব না থাকায় প্রশ্ন উঠেছে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে।
ছাত্রলীগ থেকে ছাত্রদলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের আইন অনুষদের সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ছাত্রদলের রাজনীতি করে আসছি। আমি ছাত্রদলের প্রতিটা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি।
জানা গেছে, বর্তমান শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক কাজে তেমন সক্রিয় না হলেও ময়মনসিংহ দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব পদে বহাল তবিয়তে থাকার পরও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা গ্রহণের বিষয়ে সদস্য সচিব আল-আমিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কি এখন ২টা পদে আছি? আমি ওইখানে কোনো পদ পেলে তো যেতেই পারি কিংবা যুবদলের ভালো কিছু প্রয়োজনে কাজ করতে পারি। আমি কি আজীবন ছাত্রদলে থাকব? যখন কমিটি দেবে তখন প্রশ্ন করবেন।
চার বছর আগে ২০২১ সালের ১৬ জুন ইমরান হোসেন প্রধানকে আহ্বায়ক এবং আল-আমিনকে সদস্য সচিব ঘোষণা করে ছাত্রদলের গঠিত কমিটির অধিকাংশেরই নেই ছাত্রত্ব।
ছাত্রত্ব না থাকার বিষয়ে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন বলেন, বিগত সময়ে নির্যাতনের কারণে আমার রেজাল্ট অনেক খারাপ হওয়ায় ভিসি স্যারের কাছে ইম্প্রুভমেন্টের আবেদন করেছি। সেটা সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে ভিসি স্যার বলেছেন।
২৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনেকের ছাত্রত্ব না থাকা এবং আগামীর নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ফরাজী বলেন, যারা বিগত সময়ে নির্যাতিত হয়েছে, বিগত ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী সময় থেকে বর্তমান সময় অব্দি কাজ করে গেছে তাদের মধ্যে থেকে আগামী নেতৃত্ব নির্বাচিত হোক।
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীদের ছাত্রদলে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান বলেন, ছাত্রলীগের যারা পদধারী, যারা ক্যাম্পাসে ত্রাস সৃষ্টি করেছে এবং তাদেরকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো, মিটিং, মিছিলসহ প্রোগ্রাম যারা করে তাদের আমরা একাধিকবার সতর্ক করেছি। ইতোমধ্যে তাদের নাম ও ছবিসহ কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। কেন্দ্র থেকেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কমিটির অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব না থাকা এবং ছাত্রলীগ কর্মীদের আশ্রয় দেওয়া নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন