টাঙ্গাইলের বাসাইলে ছবি পাল্টে জালিয়াতির মাধ্যমে বড় ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে। বড় ভাই খোরশেদ আলমের পরিবার ছোট ভাই নবাব আলীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন।
অসুস্থ হয়ে ২৫ বছর বিছানায় শয্যাশায়ী ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে আবেদনের পরও এখনো পাননি প্রতিকার।
নবাব আলীর জাতীয় পরিচয়পত্র, জমি রেজিস্ট্রি, বিবাহ রেজিস্ট্রি ও সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব নথিতেই তার নাম রয়েছে। শুধু মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলনের কার্ডে খোরশেদ আলম নাম রয়েছে। নিজের বীরত্বের মর্যাদা ও সম্মানী ভাতা ফিরে পেতে চান অসুস্থ হয়ে প্রায় ২৫ বছর শয্যাশায়ী খোরশেদ আলম।
জানা যায়, উপজেলার ফুলকি মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে খোরশেদ আলম ১৯৯৭ সাল থেকে প্যারালাইজড। যে কারণে ছোট ভাইকে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তোলনের জন্য মাঝেমধ্যেই ঢাকায় পাঠাতেন খোরশেদ আলমের পরিবার। আর এই সুযোগে ২০০৫ সালের ৫ অক্টোবর নবাব আলী খোরশেদ আলমের স্বাক্ষর জাল করে নিজের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীর ভাতায় অন্তর্ভুক্ত করেন। খোরশেদ আলমের মুক্তিযোদ্ধা সনদের গেজেট নং-৭২৩ এবং লাল মুক্তি বার্তায় নং- ১১৮১০০২৬০।
খোরশেদ আলমের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে জানান, তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে দীর্ঘদিন ঘুরেও প্রতিকার পাননি। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকা এখনো নবাব আলী উত্তোলন করে যাচ্ছেন।
খোরশেদ আলমের মেয়ে বিলকিস কালবেলাকে বলেন, আমার বাবা খোরশেদ আলম ২৫ বছর ধরে প্যারালাইজড। তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। বাবা অসুস্থ থাকায় চাচা নবাব আলীকে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও ভাতার সব কাগজপত্র উত্তোলনের জন্য দায়িত্ব দেন। চাচা সনদ উত্তোলন করে ঠিকই এনেছে, তবে তিনি আমার বাবার স্বাক্ষর জাল করে ও তার নিজের ছবি ব্যবহার করে ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছে।
এই মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে আরও বলেন, আমার চাচা এসব তথ্য গোপন রাখার অনেক বছর পর যখন জানতে পারলাম চাচা বাবার ভাতা নিজেই উত্তোলন করে খাচ্ছে, তখন আমরা নড়েচড়ে বসি। তখন চাচা নিজেই মুক্তিযুদ্ধা দাবি করেন। তিনি নিজেই তখন খোরশেদ আলম দাবি করেন। আমার চাচা এসএসসি পাস; কিন্তু ভাতার টাকার তোলার জন্য অষ্টম শ্রেণি পাস দেখিয়েছে। যে কারণে তার এসএসসির সনদে নাম রয়েছে নবাব আলী। এ ছাড়া চাচার বিবাহ, জমি এবং এনআইডিসহ সব নথিতে বাবার নাম উল্লেখ রয়েছে নবাব আলী। শুধু ভাতার ক্ষেত্রে তিনি বনে যান খোরশেদ আলম। এতকিছু প্রমাণ থাকার পরও সব দপ্তরে ঘুরতে হচ্ছে।
একই ধরনের অভিযোগ করেন খোরশেদ আলমের স্ত্রী মরিয়ম বেগম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাসাইলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. আকলিমা বেগম কালবেলাকে বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি ও তদন্ত চলমান। এ পর্যন্ত চারবার তদন্ত হয়েছে। সেসব প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেছি। তাতে আমাদের মনে হয়েছে আবারও শুনানি করা দরকার। তারপর সেই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।
মন্তব্য করুন