ভারত যদি পাকিস্তানে হামলা করে অথবা নয়াদিল্লি যদি পাকিস্তানের পানি সরবরাহ ব্যাহত করে, তাহলে ইসলামাবাদ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে এর জবাব দেবে। শনিবার রাশিয়ান সম্প্রচার মাধ্যম আরটি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মস্কোতে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ খালিদ জামালি।
সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানি কূটনীতিক বলেন, ইসলামাবাদে এমন বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যা থেকে জানা যাচ্ছে, ভারত পাকিস্তানে সামরিক হামলার পরিকল্পনা করছে। তিনি বলেন, কিছু ফাঁস হওয়া নথি আমাদের হাতে এসেছে, যেগুলোতে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় হামলার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি, হামলা আসন্ন এবং এটি যে কোনো সময় ঘটতে পারে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ভারত যদি এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার ভুল করে তাহলে পাকিস্তান তাদের সামরিক শক্তির সম্পূর্ণ ব্যবহার করবে—সেটি হোক প্রচলিত অস্ত্র কিংবা পারমাণবিক অস্ত্র।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কোনো শীর্ষ কূটনীতিকের দেওয়া সবচেয়ে স্পষ্ট পারমাণবিক হুমকিগুলোর একটি। এই হুঁশিয়ারি এমন এক সময়ে এল, যখন কাশ্মীরের সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌছেঁছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ঐতিহাসিক ইন্দাস পানিচুক্তি (IWT) স্থগিত করেছে। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তির আওতায় সিন্ধু নদী এবং তার উপনদীগুলোর পানি বণ্টন দুই দেশের মধ্যে পরিচালিত হয়ে আসছিল। কয়েকটি যুদ্ধের মধ্যেও এই চুক্তি কার্যকর ছিল, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি স্থিতিশীল উপাদান হিসেবে বিবেচিত হত।
রাষ্ট্রদূত জামালি ভারতের পানিচুক্তি স্থগিতের পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার সামিল’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘যদি ভারতের পক্ষ থেকে নিম্ন অববাহিকায় পানির প্রবাহ বন্ধ বা অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে ধরা হবে এবং আমরা পূর্ণ শক্তি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবো।’
এর আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যদি ভারত ইন্দাস নদীর ওপর কোনো অবকাঠামো নির্মাণের চেষ্টা করে, আমরা তা গুঁড়িয়ে দেব। তিনি আরও বলেন, আক্রমণ মানেই শুধু বন্দুক বা কামান নয়, পানি আটকে রাখা বা ঘুরিয়ে দেওয়া এমন একটি পদক্ষেপ, যা মানুষকে অনাহার ও তৃষ্ণায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান শনিবার একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়। তারা সফলভাবে ‘আবদালি’ নামের ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যার পাল্লা ৪৫০ কিলোমিটার এবং এটি প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের অস্ত্রবাহী। পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানায়, এই উৎক্ষেপণের উদ্দেশ্য ছিল ‘অপারেশনাল প্রস্তুতি নিশ্চিত করা’।
ভারত ইসলামাবাদের এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে ‘গুরুতর উসকানি’ হিসেবে দেখছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
এরই মধ্যে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের সামুদ্রিক বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। পাকিস্তান থেকে বা পাকিস্তান হয়ে আসা পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং ভারতীয় জাহাজগুলোকে পাকিস্তানের বন্দরে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতীয় পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ভারতীয় জাহাজের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তখন ভারত পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল।
সম্প্রতি আরও কিছু পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে পোস্টাল সেবা, পার্সেল এবং চিঠিপত্র আদান-প্রদান স্থগিত করা এবং ঐতিহাসিক আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, এবং পারমাণবিক শক্তির হুমকি সেই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলছে।
মন্তব্য করুন