মসজিদ পরিষ্কারসহ ভালো ভালো কিছু কাজ করার শর্তে কারাবাস থেকে মুক্তি পেয়েছেন সিলেটের সাদ্দাম হোসেন (২২) নামে এক কিশোর।
মঙ্গলবার (৬ মে) ব্যতিক্রমী এ রায় দেন সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুসতানসীর হাসান চৌধুরী।
জানা যায়, মাদক মামলায় এক বছরের সাজা ঘোষিত হয়েছিল সাদ্দামের। তবে কারাগারের বদলে এবার মিলল মসজিদ পরিষ্কার, গাছ লাগানো, কুকুর-বিড়াল খাওয়ানোর শর্তে মুক্তি। রায়ে সাদ্দাম হোসেন নামের ওই কিশোরকে সংশোধনের সুযোগ দেন আদালত।
সাদ্দামের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন দিলুর আবেদনে আদালত মানবিক বিবেচনায় শাস্তির পরিবর্তে দেন সংশোধনের শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির অনুমতি।
শর্তে বলা হয়, প্রতি শুক্রবারে মসজিদে গিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে হবে, দুটি বিড়াল ও দুটি কুকুরকে এক বছর সাধ্যমতো খাওয়াতে হবে, ৫০টি গাছ লাগিয়ে নিয়মিত যত্ন নিতে হবে- এমন কিছু শর্তে সাদ্দাম হোসেন (২২) নামের এক তরুণকে মামলা থেকেও মুক্তি দিয়েছেন আদালত। এসময় সাদ্দাম আদালতের নির্দেশনা ঠিকমতো পালন করছে কি না সেটি তত্ত্বাবধান করবেন সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা।
সাদ্দাম ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার কিসমত রসুলপুর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে। তিনি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার সুপাতলা গ্রামের বসবাস করতেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার একটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হন সাদ্দাম। ২০২৪ সালে সাদ্দামকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা। বিচার কার্যক্রম শেষে গতকাল তাকে আদালত এক বছরের সাজা দেন। পরে আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রবেশন অনুমোদন করে সাদ্দামকে খালাস দেন আদালত।
বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন দিলু। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হন সাদ্দাম। মামলার রায়ে আদালত প্রথমে তাকে এক বছরের সাজার জন্য সাব্যস্ত করেন। পরে আমি তার বয়স বিবেচনায় নেওয়ার জন্য এবং তার বিরুদ্ধে এর আগে কোনো মামলা ছিল না, ভবিষ্যতে এ রকম কাজে সে জড়াবে না জানালে আদালত এই ব্যতিক্রমী রায় দেন।
তিনি বলেন, আদালত কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে দুটি করে বিড়াল ও কুকুরকে এক বছর সাধ্যমতো খাওয়াতে হবে। ৫০টি বৃক্ষ রোপণ করে সেগুলোর নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। রাসুল (সা.) -এর জীবনী পাঠ করতে হবে, পড়তে না পারলে অন্য কারো মাধ্যমে শুনতে হবে, নিয়মিত নামাজ পড়তে হবে ও শুক্রবারে মসজিদে গিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা, পরিবারে সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, প্রবেশন কর্মকর্তার অনুমতি না নিয়ে পেশা ও বাসস্থান পরিবর্তন করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা আদালতের এমন মানবিক ও সংশোধনমূলক রায়কে স্বাগত জানাই। সাদ্দাম নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং এখন সৎ পথে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আদালতের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, সাজার এক বছর পরিবার-পরিজন ছাড়া জেলে থাকতে অনেক কষ্ট হতো। কিন্তু আদালত আমাকে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে থেকে ভালো ভালো কাজ করার মাধ্যমে নিজেকে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন। আমি আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, পাশাপাশি সবগুলো শর্ত মেনে নিজেকে সংশোধন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
মন্তব্য করুন