দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় স্মার্ট কার্ড জটিলতার জন্য দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) খাদ্যপণ্য পায়নি ১৭ হাজার ৮২৫ সুবিধাভোগী পরিবার। দীর্ঘ সময় ধরে খাদ্যপণ্য না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়নে টিসিবির খাদ্যপণ্য পাওয়ার কার্ডধারী সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৭৯ জন। এর মধ্যে পৌর এলাকায় ৩ হাজার ১৫৪ জন, ১ নম্বর এলুয়ারি ইউনিয়নে ২ হাজার ৬১৮ জন, ২ নম্বর আলাদিপুর ইউনিয়নে ২ হাজার ২৬২ জন, ৩ নম্বর কাজিহাল ইউনিয়নে ২ হাজার ১৯০ জন, ৪ নম্বর বেতদীঘি ইউনিয়নে ২ হাজার ২৭৫ জন, ৫ নম্বর খয়েরবাড়ী ইউনিয়নে ১ হাজার ২৮০ জন, ৬ নম্বর দৌলতপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৫১৮ জন এবং ৭ নম্বর শিবনগর ইউনিয়নে ৩ হাজার ৫৮৬ জন সুবিধাভোগীর স্মার্ট কার্ড পাওয়ার কথা।
এ ক্ষেত্রে পৌরসভা বাদে শুধু সাতটি ইউনিয়নে ১৫ হাজার ৬২৫ জন সুবিধাভোগীর মধ্যে স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৫৪ জন। স্মার্ট কার্ডধারী ১ হাজার ৫৪ জন জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত টিসিবির খাদ্যপণ্য পেলেও শুধু স্মার্ট কার্ড না পাওয়ায় খাদ্যপণ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ইউনিয়ন পর্যায়ের ১৪ হাজার ৬৭১ জন এবং পৌর এলাকার ৩ হাজার ১৫৪ জন। মোট ১৭ হাজার ৮২৫ জন সুবিধাভোগী।
জানা যায়, আগে হাতে লেখা ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ১৮ হাজার ৮৭৯ জন সুবিধাভোগীকে টিসিবির খাদ্যপণ্য সরবরাহ করা হতো। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী উল্লিখিত সুবিধাভোগীদের স্মার্ট কার্ডের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৪ জনের স্মার্ট কার্ড চূড়ান্ত হওয়ায় শুধু তারাই জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তিন মাসের খাদ্যপণ্য পেয়েছেন। অন্যদের স্মার্ট কার্ড না আসায় জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ মাস ধরে টিসিবির খাদ্যপণ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট ডিলাররা জানিয়েছেন।
পৌর এলাকার সুবিধাভোগী দিনমজুর আনোয়ার হোসেন, লালু মিয়া, বাবলু মিয়া, জুলেখা বেগম ও সুরতন বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, টিসিবির খাদ্যপণ্য দিয়ে সংসার চালানো সহজ হয়। কিন্তু পাঁচ মাস ধরে খাদ্যপণ্য না পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্য এলাকার মানুষ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনো পাচ্ছি না। প্রশাসন ইচ্ছে করলে স্মার্ট কার্ড ছাড়াও আগের কার্ড দেখেও খাদ্যপণ্য দিতে পারে।’
টিসিবির ডিলার মেসার্স শাহারিয়ার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল লতিফ বলেন, উপজেলায় ১৮ হাজার ৮৭৯ জন সুবিধাভোগীর মধ্যে শুধু ইউনিয়ন পর্যায়ে স্মার্ট কার্ড এসেছে ১ হাজার ৫৪ জনের। এ স্মার্ট কার্ডধারীদের মাঝে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের খাদ্যপণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। তবে পৌর এলাকার জন্য একটি স্মার্ট কার্ডও আসেনি। স্মার্ট কার্ড এলেই সবাইকে খাদ্যপণ্য সরবরাহ করা হবে।
অপর ডিলার মেসার্স ভোলা প্রসাদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী অনিল বলেন, যে কয়টি স্মার্ট কার্ড এসেছে তাদের সবাইকে তিন মাসের খাদ্যপণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। স্মার্ট কার্ড না আসায় বেশিরভাগ সুবিধাভোগীর মাঝে খাদ্যপণ্য বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইছাহাক আলী বলেন, খাদ্যপণ্য বিতরণ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ নেই। যে কয়টি স্মার্ট কার্ড এসেছে কার্ডধারী সবাই খাদ্যপণ্য পাচ্ছেন। স্মার্ট কার্ড জটিলতার কারণে অন্যদের মাঝে খাদ্যপণ্য বিতরণ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। সমস্যা নিরসনে অ্যাপের মাধ্যমে কার্ড সাবমিট করা হচ্ছে। শিগগিরই সব সুবিধাভোগীর মাঝে খাদ্যপণ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
মন্তব্য করুন