যশোরের মনিরামপুরের নেহালপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বিঞ্চুপদ মল্লিকের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে দুদকের মহাপরিচালক কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন দুদক যশোরের সহকারী পরিচালক আল আমিন হোসেন।
জানা যায়, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বিঞ্চুপদ মল্লিকের গ্রামের বাড়ি মনিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের গাবরডাঙ্গা গ্রামে। অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাবেক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের আস্থাভাজন হওয়ায় এলাকায় বিঞ্চুপদ মল্লিকের ছিল বেশ আধিপত্য। ফলে তিনি কোনো নিয়নীতির তোয়াক্কা করতেন না।
জমির খাজনা দিতে গেলে তাকে প্রতি শতাংশ জমির জন্য ১০০ টাকা হারে ঘুষ দিতে হতো। ঘুষ ছাড়া তার কাছ থেকে এলাকার অধিকাংশ লোক কোনো সেবা পাননি। টাকা দিলেই সকল অনিয়ম তিনি নিয়মে পরিণত করে থাকেন।
দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে মনোহরপুর ইউনিয়নের খাকুন্দি গ্রামের মৃত কিংকর সরকারের একমাত্র মেয়ে জয়ত্রী রানী সরকারের ওয়ারেশ বাদ দিয়ে সুফল নামে এক ব্যক্তির নামে প্রায় দুই বিঘা জমি নামপত্তন করে দেন বিঞ্চুপদ মল্লিক। নেহালপুর ইউনিয়নের বালিধা গ্রামের নুর মোহাম্মদ গাজী পাঁচ শতক জমির ওপর পাকাবাড়ি নির্মাণ করে দুই ছেলে কামরুজ্জামান ও মঈনুল ইসলামকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু বাড়িসহ জমি নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ দেখা দেয়। একপর্যায়ে তারা আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালতের নির্দেশে তাদের দখলস্বত্ব নিয়ে প্রতিবেদন দিতে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিঞ্চুপদ মল্লিককে। কিন্তু ছোটভাই মঈনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, দেড়লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে বিঞ্চুপদ বড়ভাই কামরুজ্জামানের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। অপরদিকে আলাল উদ্দিন নামে এক ভুক্তভোগীর কাছে জমির নাম পত্তনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন বিঞ্চুপদ মল্লিক। কিন্তু ঘুষের টাকা না দেওয়ায় তার নামপত্তন এখনো হয়নি।
ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কাজে সহায়তার জন্য একজন আউটসোর্সিংয়ের লোক নেওয়ার কথা থাকলেও বিঞ্চুপদ নিয়েছেন চারজন। অভিযোগ রয়েছে, এসব আউটসোর্সিংয়ের লোক দিয়ে তিনি এলাকার ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা আদায় করতেন।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত যশোরের এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যরা বুধবার (২১ মে) দুপুরে নেহালপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অভিযান চালিয়ে অধিকাংশ অভিযোগের সত্যতা পান। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন দুদক যশোরের সহকারী পরিচালক আল আমিন হোসেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক কৃঞ্চপদ বিশ্বাস, তাওহিদুল ইসলামসহ অন্যরা।
মন্তব্য করুন