মাঠপর্যায়ে নদী কিংবা সাগরসহ বিভিন্ন প্রকার জলাশয়ে মৎস্য গবেষকরা কাজ করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছেন, অনেক প্রজাতির মাছই নানা কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ইলিশের বিভিন্ন প্রজাতি ছাড়াও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে এমন মাছও কম নয়। তাই বিলুপ্তপ্রায় এমন মাছের নমুনা সংরক্ষণ করে ১৯৮৪ সালে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে তৈরি হয়েছে মৎস্য জাদুঘর। যেটি শহরের ওয়্যারলেস বাজার এলাকার বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ ভবনের একটি কক্ষে সাজানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সরেজমিনে এ মৎস্য জাদুঘরে গিয়ে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ ও প্রাণী নিয়ে গবেষক ও শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর আলোচনা করতে দেখা যায়।
জানা যায়, সাধু পানি এবং সামুদ্রিক প্রায় ৩০০-এর বেশি বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী নির্দিষ্ট ফরমালিনের মাত্রায় নানা আকৃতির গোলাকার কাচের জারে রাখা হচ্ছে এ মৎস্য জাদুঘরটিতে। এতে করে বাইরে থেকে কাচের জারের ভেতরের সম্পূর্ণ মাছ ও প্রাণীটি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আর তা দেখতে প্রতিনিয়তই গবেষক, জেলে, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ জাদুঘরটিতে ভিড় জমাচ্ছেন।
আরও জানা যায়, এ জাদুঘরটিতে বিলুপ্তপ্রায় মহাশোল মাছ, বিরল প্রজাতির জইয়া মাছ, রানি, চিতল, গারুয়া, তারা বাইম, মধু পাবদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। অন্যদিকে সমুদ্রের হাঙর মাছ, ঝিনুক, বামশ মাছ, ইলিশ ও মাছের ডিমও স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া জলাশয়ে ঘুরে বেড়ানো এমন গুইসাপ, কচ্ছপসহ নানান প্রাণীও এখানে রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত চাঁদপুরের রুপালি ইলিশসহ নানা জাতের ইলিশের নমুনাও এ জাদুঘরে রয়েছে। এর মধ্যে জাদুঘরটিতে চন্দনা ইলিশ, গোর্তা ইলিশ, কেনোলেসা ইলিশের মতো দুর্লভ প্রজাতির ইলিশের সেম্পলও ফরমালিন দিয়ে ফ্রিজাপ করে জারে রাখা আছে। যার মধ্যে কোনো কোনো ইলিশের ওজন তিন কেজির বেশি। এসব মাছ ও প্রাণীর দর্শন ও প্রজাতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সব সময়ই ধারণা দিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষার্থী, জেলে এবং দর্শনার্থীরা বলছেন, আমাদের দেশীয় অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেগুলো সম্পর্কে আমাদের জানার আগ্রহ আছে বলেই আমরা এখানে পরিদর্শনে আসছি। একসঙ্গে স্বাদু পানি এবং সামুদ্রিক মাছ দেখতে পাওয়া যায় এ জাদুঘরটিতে। যা দেখে ব্যবহারিক কাজ সম্পন্ন করার জন্যই মূলত এখানে আসা। কেননা এখানে একসঙ্গে বহু মাছের সেম্পল দেখতে পাওয়া যায়। যা দেখে দেশীয় অর্থনীতিতে ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য মাছ ও প্রাণীতে ভূমিকা আনতে আমরা সমৃদ্ধ হচ্ছি।
নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু কাউসার দিদার বলেন, বিলুপ্ত সকল প্রজাতির মাছ ও প্রাণীকে দ্রুত চেনার উপায় হিসেবে জাদুঘরটির প্রতিটি কাচের জারের ওপর তাদের নামসংবলিত তথ্যও দেওয়া রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীরা মৎস্য প্রজাতি সম্পর্কে এবং মাছের দর্শনবিদ্যা সম্পর্কে সহজেই ধারণা পেয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের গবেষক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে যখন মনে হয় এই মাছের প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে কিংবা এটি সংরক্ষণের প্রয়োজন, তখন স্বাদু পানি ও সামুদ্রিক মাছের নমুনাগুলো এখানে সংরক্ষণ করে আনা হয়। এখানে মাছ ও প্রাণীকে মূলত ফরমালিন ফ্রিজাপ করা হয়। আমাদের তেমন কোনো বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও আমরা এই জাদুঘরটিতে মাছ ও প্রাণী সংরক্ষণ করে যাচ্ছি। যাতে করে দেশে মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধিতে এখানে আসা সবাই ভূমিকা রাখতে পারেন।
মন্তব্য করুন