টানা পাঁচ দিনের ভারি বর্ষণে বান্দরবানে লামার বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে মাইকিং করছে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সোমবার (০২ জুন) বিকালে লামা পৌরসভার হাসপাতাল পাড়া, নয়া পাড়াসহ সাতটি ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ে ঝূঁর্কিপূর্ণভাবে বসবাস করা এসব বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করতে দেখা যায়।
জানা গেছে, বান্দরবানে লামা উপজেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন ১০ হাজার মানুষ। উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করেই পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে ঝুঁকিতে বসবাস করে আসছেন। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং বৃক্ষ নিধনের কারণে পাহাড় ধসে ঘটছে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। এসবের পরও বন্ধ হচ্ছে না লামায় পাহাড় কাটাসহ অবৈধ বসতি স্থাপন। গত ১৫ বছরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবল বর্ষণ ও ভূমি ধসে বিভিন্ন বয়সী নারী-শিশুসহ প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, চলমান বর্ষার শুরুতেই প্রতিদিনই মাইকিং করা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে। বান্দরবানে বেশিরভাগ এলাকা পাহাড়বেষ্টিত আর তাই পাহাড় কেটে অথবা পাহাড়ের আশপাশেই প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে অসংখ্য নতুন নতুন স্থাপনা। তবে পাহাড় কাটা আর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসতরোধে প্রশাসনের তরফ থেকে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। শিগগিরই পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের অন্যত্র সরিয়ে না নিলে পাহাড় ধসে আবারও বড় ধরনের প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
অপরদিকে ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের মতে, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা প্রায় শ্রমিক শ্রেণির মানুষ এবং যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদের মধ্যে হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যাই বেশি। জীবিকার তাগিদে পাহাড়ের ঢালুতে পাহাড় কেটে তৈরি করা আবাসস্থলগুলোতে কম টাকায় বসবাস করা যায়। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হলেই মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য অন্যত্র আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে চান না তারা। সরকারিভাবে স্থায়ী পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করে ঝুঁকিতে বসবাসকারীরা।
সরকারি সূত্র মতে, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১২ সালে ২৮ জন ও ২০১৫ সালে ৪ জন পাহাড় ধসে নিহত হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৩ জন, ২০১৯ সালে ১ জন ও ২০২০ সালে মিরিঞ্জা এলাকায় ১ জন নিহত হন।
লামা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈন উদ্দিন বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দাদের সরে যেতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন