ঢাকা থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সাইকেলে যাত্রার শুরু করেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ির হরিনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজু। ছেলে যেন পড়াশোনা করে ভালো মানুষ হতে পারে এটাই রিকশাচালক বাবা মো. রাজুর স্বপ্ন। আদরের সন্তানের স্বপ্নপূরণে একটি সাইকেল খুব দরকার ছিল। কষ্ট করে নিজের জমানো টাকায় সাইকেল কিনেছেন বাবা রাজু।
তবে সাইকেলটি ঢাকা থেকে গাইবান্ধার পলাশবাড়ির হরিণাথপুর গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার মতো অর্থ ছিল না তার হাতে। তাই নিজের ওপর আত্মবিশ্বাসে রেখে পরিশ্রমী দুই পায়ে চালিয়ে রওনা দিয়েছেন গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায়।
ঢাকার নাখালপাড়া লুকাস মোড়ে গত ১৫ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে জীবন চালান মো. রাজু। তিনি গাইবান্ধার গাইবান্ধার পলাশবাড়ির হরিণাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। সেখানেই থাকেন তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে।
জানা গেছে, মাস খানেক আগে মহাখালী থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় পুরাতন একটি সাইকেল কিনেন তিনি। কিন্তু সাইকেলটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফেরার জন্য বাস ভাড়াসহ দরকার ছিল অন্তত ৩ হাজার টাকা। রাজুর হাতে ছিল আড়াই হাজার টাকা- যার মধ্যে ঈদের খরচও ছিল। তাই বাসের যাওয়া তার সাধ্যের বাইরে ছিল।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ভোর ৫টায় সাইকেল নিয়ে মহাখালী থেকে রওনা হন গাইবান্ধার উদ্দেশে। প্রায় ২১ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে পৌঁছান বগুড়ায়। মধ্যরাতে মহাসড়কে একা সাইকেল চালাতে দেখে তাকে আটকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রাজুর অভাবের কথা ও ছেলের জন্য তার প্রচেষ্টা শুনে সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন দায়িত্বরত সেনাসদস্যরা। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজুর সাইকেলসহ তাকে একটি ট্রাকে তুলে দেন এবং কিছু শুকনো খাবার দিয়ে বাড়ি ফিরতে সহায়তা করেন।
রিকশাচালক রাজু বলেন, কোনো উপায় না পেয়ে একটি ব্যাগ নিয়ে সাইকেল চালিয়ে রওনা হই। পথে তিনবার ৫০ টাকা করে ভ্যানে করে কিছু দূর এসেছি। যমুনা সেতুতে সাইকেল নিয়ে উঠতে দিচ্ছিল না, পরে ১০০ টাকা দিয়ে একটি মিনি ট্রাকে উঠি। কিন্তু ট্রাকটি গাইবান্ধা পর্যন্ত না যাওয়ায় নামিয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, এভাবে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারব ভাবিনি। জীবনে এমন অভিজ্ঞতা কখনো হয়নি। তবে ছেলেকে সাইকেল উপহার দিতে পারায় আমি খুশি। সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাহায্যে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারছি, ওনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
মন্তব্য করুন