ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কোরবানির মাংস নেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে হুমায়ূন কবীর (৪৮) নামে এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছে।
সোমবার (৯ জুন) সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় হুমায়ূন কবীর। এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বানিয়াড়ী গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
মৃত হুমায়ূন কবীর ওই গ্রামের মৃত মালেক মোল্লার ছেলে। তিনি পেশায় ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক ছিলেন। ঘটনার সময় হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখান থেকে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানেই পরদিন তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বানিয়াড়ী গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ রয়েছে। এক পক্ষের নেতৃত্বে সাবেক ইউপি সদস্য জামাল হোসেন ও নবীর হোসেন চুন্নু, অপরপক্ষের নেতৃত্বে আলফাডাঙ্গা উপজেলার শিয়ালদী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক লিয়াকত হোসেন। হুমায়ূন কবীর একসময় লিয়াকত পক্ষের সমর্থক ছিলেন। তবে চলতি বছর ঈদুল আজহায় তিনি প্রতিপক্ষ জামাল হোসেনের পক্ষ থেকে কোরবানির মাংস গ্রহণ করেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ঈদের দিন থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
হামলার শিকার হুমায়ূন কবীরের পরিবারের সদস্যরা জানান, রোববার সকালে ছাকেনের চায়ের দোকানে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে লিয়াকত হোসেনের সমর্থকরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে হুমায়ূন কবীর, তার বড় ভাই মোস্তফা মোল্লা (৫৮), মেয়ে বেনি বেগম (২৩) এবং এক ভাগিনার ওপর হামলা চালায়। গুরুতর আহত হুমায়ূন কবীরকে ফরিদপুর ও পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়, সেখানে তার মৃত্যু হয়। অন্য আহতরা বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে জামাল হোসেন পক্ষের নেতা নবীর হোসেন বলেন, হুমায়ূন আগে লিয়াকতের দেওয়া মাংস নিত, এবার আমাদের পক্ষের থেকে নিয়েছে বলেই লিয়াকতের সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে।
লিয়াকত হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
ময়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক মৃধা কালবেলাকে বলেন, কোরবানির মাংস নেওয়াকে কেন্দ্র করেই এ হামলা হয়েছে। মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে রাতে কিছু বাড়িতে হামলা ও গরু লুটের ঘটনাও ঘটে। একটি বাদে লুট হওয়া গরুগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুল হাসান কালবেলাকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনে গ্রাম্য দলাদলি ও কোরবানির মাংস নেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছিল। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
মন্তব্য করুন