ঈদের ছুটিতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সবগুলো পর্যটনস্পটে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঈদের লম্বা ছুটি কাটাতে হাজারো পর্যটক বরাবরের মতোই ছুটে আসছেন টাঙ্গুয়ার হাওরে। সঙ্গে বোনাস হিসেবে আরও একাধিক দর্শনীয় স্থান ঘুরে যাচ্ছেন তারা।
একদিকে মেঘালয় পাহাড়ের নিচে অসংখ্য উঁচু-নিচু টিলা, ছোট বড় ঝরনা ও তার পাশেই প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল বিস্তৃত বাংলাদেশর দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। যা পর্যটকদের নজর কাড়ে প্রতিনিয়ত।
সরেজমিন টাঙ্গুয়ার হাওর ও বিভিন্ন পর্যটনস্পট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের তৃতীয় দিন সোমবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুনামগঞ্জ শহর হয়ে তাহিরপুর উপজেলায় দল বেধে আসছেন পর্যটকরা। আনোয়ারপুর নৌঘাট, তাহিরপুর থানা ঘাট ও তাহিরপুর বাজার নৌকা ঘটে এসে তাদের নির্ধারিত হাউজবোটে উঠছেন। কেউ আবার ঘাটে এসে ছোট ও মাঝারি নৌকা ভাড়া করছেন। তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে সকাল ৯টা-১০টায় হাউজবোট টাঙ্গুয়ার হাওরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসেন। ঘণ্টা খানেক নৌকা চলার পর এসে পৌঁছায় টাঙ্গুয়ার হাওরে। দুপুর ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে হাওরের পানিতে পর্যটকরা গোসল করতে নামেন, ছোট ছোট নৌকায় ঘুরেন হাওরের হিজল করছ গাছের তল দিয়ে। কেউ আবার উঁচু গাছ ও হাওরের ওয়াচ টাওয়ার থেকে স্বচ্ছ পানিতে লাফালাফি করেন। সব শেষে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা দেন নিলাদ্রী লেক পাড়ের উদ্দেশ্যে। সেখানে হাউজবোট রেখে মোটরসাইকেলে বারেক টিলা, রূপের নদী খ্যাত জাদুকাটা ও শিমুল বাগানসহ বাংলাদেশ অভ্যন্তরের ছোট ছোট টিলা ও ঝরনা ঘুরে বেড়ান তারা। রাতে নিলাদ্রী পাড়ে নৌকায় আড্ডা দেন এবং হাউজবোটেই রাত্রিযাপন করেন।
ঢাকা থেকে আগত রাহি আহমেদ নামে এক পর্যটক হাওরে সাঁতার কাটছেন এমন সময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, টাঙ্গুয়ার হাওর আসলেই অনেক সুন্দর একটি জায়গা। হাওরে সারি সারি গাছের নিচে ঘুরাঘুরি ও গোসল করার পর হাউজবোট আরাম করা। আবার হাউজবোট পাড়ে রেখে একাধিক দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যায়। আবার হাউজবোটে রাত্রিযাপন আসলেই অসাধারণ।
নীলা চক্রবর্তী নামে এক পর্যটক বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের হাউজবোটে ভ্রমণ অনেক আরামদায়ক। যেখানে আসলে হাওর ছাড়াও একাধিক দর্শনীয় স্থান বেড়ানো যায়। নিজেকে একটু বিনোদন দিতে গেলে অবশ্যই হাওরে আসা প্রয়োজন। তবে ঈদের কারণে হাউজবোটগুলোকে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। এবং নিলাদ্রীর পাড়ে উচ্চস্বরে গান-বাজনায় একটু অস্থির লাগে। তাছাড়া আগত পর্যটকদের আরেকটু সুরক্ষা দিতে প্রশাসন অনুরোধ জানান তিনি।
তাহিরপুর তরঙ্গ বিলাস নামক মাঝারি হাউজবোট চালক জানে আলম বলেন, বর্ষা ও ঈদের আগমনে টাঙ্গুয়ার হাওর এখন পরিপূর্ণ। ঈদের পরের দিন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত আমাদের নৌকা বুকিং করা আছে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক হাওরে আসছেন। বর্ষার শুরুটা খুব ভালো যাচ্ছে।
শিকারা হাউজবোটের মালিক ও হাউজবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর ইশতি বলেন, জুন মাসের শুরু থেকেই টাঙ্গুয়ার হাওর পানিতে পরিপূর্ণ হয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে লম্বা ছুটিতে টাঙ্গুয়ার হাওরে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত প্রায় ৩০০ হাউজবোট এসেছে। ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন বুকিং রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও প্রশাসনের আরেকটু তদারকি থাকলে হাওরে পর্যটক দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে।
তাহিরপুর উপজেলা নৌ-পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ রব্বানী জানান, ঈদের লম্বা ছুটিতে ছোট, বড় ও মাঝারি প্রায় পাঁচ শতাধিক নৌকা ও হাউজবোট নিলাদ্রীর পাড়ে এসেছেন। বর্তমানে সর্বোচ্চ চাপ রয়েছে নৌকাগুলোর। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে প্রশাসনের সঙ্গে আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সুনামগঞ্জ টুরিস্ট পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমাইয়ূন কবির বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর সহ তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা ও তাদের সহযোগিতায় ট্যাকেরঘাটে টুরিস্ট পুলিশের দুটি হেল্প ডেস্ক করা হয়েছে। আমরা আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হাসেম বলেন, পর্যটকদের সার্বিক সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি পর্যটক ও নৌকা মালিকদের প্রশাসনের নীতিমালা মানতে হবে। সাধারণ মানুষের কষ্ট হয় এমন কাজ করা যাবে না। ইতোমধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওর ও নিলাদ্রীর পাড়ে উচ্চস্বরে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন