আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫, ০২:৪৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

কথিত যুবদল নেতার চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় সাত যুবক কারাগারে

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় কথিত এক ‘যুবদল নেতা’র চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোয় উল্টো পুলিশি প্রতিশোধের শিকার হয়েছেন সাতজন কর্মজীবী যুবক। স্থানীয়দের অভিযোগ, যিনি প্রকৃত অপরাধী, তিনি রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে, অথচ নির্দোষ যুবকদের জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক মামলায়।

ঘটনার শুরু ৯ জুন (সোমবার) বিকেলে, আলফাডাঙ্গার কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমি মাঠ সংলগ্ন মুদি দোকানে। দোকানটি রফিকুল ইসলামের। সেদিন সেখানে হাজির হন শাহেদ নামে এক যুবক, যিনি নিজেকে ‘যুবদল নেতা’ পরিচয় দিয়ে দাবি করেন তিনি স্থানীয় জুয়েল মোল্লার ছেলে।

রফিকুল জানান, শাহেদ প্রায়ই দোকান থেকে বিনা পয়সায় সিগারেট নিতেন। টাকা চাইলে বলতেন, “পরে দেব।” কিন্তু সেদিন টাকা চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল বের করে ভয় দেখিয়ে বলেন, “বিশ হাজার টাকা না দিলে তোর দোকান গুঁড়িয়ে দেব।” এরপর চালান ভাঙচুর ও নগদ অর্থ লুট।

চিৎকার শুনে আশপাশের যুবকেরা—যারা মাঠে ফুটবল খেলছিলেন—দৌড়ে এসে শাহেদকে বাধা দেন। তখন উত্তেজনা আরও বাড়ে। স্থানীয় মুরুব্বিরা বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

রফিকুল বলেন, “আমি থানায় গিয়ে এসআই মফিজুর রহমানকে ঘটনাটা জানাই। সম্ভবত এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।”

পরদিন, ১০ জুন দুপুরে, ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসা কাওসার খান নামের এক গার্মেন্টস কর্মীকে রাস্তা আটকে মারধর করে শাহেদের দল। দুটি ঘটনারই পৃথক অভিযোগ জমা পড়ে আলফাডাঙ্গা থানায়।

কিন্তু অভিযোগ দায়েরের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই পাল্টা অভিযান চালায় পুলিশ। ১১ জুন রাতে কামারগ্রাম পশ্চিমপাড়ায় ঈদের মিলনমেলা ও নৈশভোজ চলছিলো, যার আয়োজক ছিলেন চাকরিজীবী ও প্রবাসফেরত কয়েকজন যুবক।

স্থানীয়দের ভাষ্য, অনুষ্ঠান শেষে হঠাৎ পুলিশ এসে সম্রাট, আব্দুল্লাহ কাজীসহ সাতজনকে ডেকে নেয়। বলা হয়, কিছু তথ্য জানার প্রয়োজন, রাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তারা আর বাড়ি ফেরেননি।

পরদিন জানা যায়, ‘অজ্ঞাতনামা আসামি’ হিসেবে তাদের একটি রাজনৈতিক মামলায় দেখানো হয়েছে এবং ফরিদপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার যুবকদের পরিবার বলছে, “আমাদের ছেলেরা কেউ রাজনীতি করে না। কেউ গার্মেন্টসে কাজ করে, কেউ দিনমজুর, কেউ আবার নাবিক। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছে, রাজনীতি করার সময়ই বা পেল কবে?”

এক অভিভাবকের প্রশ্ন, “আমরা যদি অপরাধীর বিচার চাই, তাহলে কি নিজেই অপরাধী হয়ে যাই?”

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. শাহিন মোল্লা বলেন, “শাহেদ নামের কাউকে আমরা চিনি না। ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের কোনো কমিটিও নেই। কেউ যদি যুবদলের নাম ভাঙিয়ে অন্যায় করে, প্রশাসনের উচিত তাকে আইনের আওতায় আনা।”

আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজালাল আলম বলেন, “এই অভিযানে সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) ইমরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। এটি ছিল নিয়মিত অভিযানের অংশ।”

গ্রেপ্তারকৃতদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না—জানতে চাইলে ওসি বলেন, “আছে, তবে তারা কোনো পদে আছে কি না, সেটা নিশ্চিত নই।”

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রতিদিন সকালে ভেজানো কিশমিশ খেলে মিলবে যেসব দারুণ উপকার

বিশুদ্ধ পানির প্রকল্পে নয়ছয়

মিসরের প্রস্তাব কেন ফিরিয়ে দিলেন আরব নেতারা

আদালতের পথেই হাঁটবেন শিল্পা শেঠি

ঢাকার বায়ুমানের কী পরিস্থিতি

ঢাকায় কখন হতে পারে বৃষ্টি, জানাল আবহাওয়া অফিস

জাতিসংঘে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের মাথায় চুমু দিলেন ব্রাজিলের লুলা

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

টিভিতে আজকের যত খেলা

বিশ্বের ২ শতাংশ শীর্ষ গবেষকের তালিকায় পবিপ্রবির ৩ শিক্ষার্থী

১০

বসুন্ধরা গ্রুপের ব্র্যান্ড মার্কেটিংয়ে চাকরির সুযোগ

১১

ইঞ্জিনিয়ার পদে জনবল নিয়োগ দিচ্ছে স্যামসাং

১২

শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৩

আজ ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

১৪

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়বৃষ্টি

১৫

২৭ সেপ্টেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ভারতের ওষুধ খাতে বিরাট ক্ষতির শঙ্কা

১৭

খাবার নিয়ে দ্বন্দ্ব, গাড়ি আটকে নববধূকে ছিনতাই

১৮

যে আসনে নির্বাচন করতে পারেন খালেদা জিয়া

১৯

জাতিসংঘের সামনে ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর, বিএনপির কর্মী গ্রেপ্তার

২০
X