বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ। শরীরে বেঁধেছে বার্ধক্যজনিত নানা রোগ। বয়স আনুমানিক ৭৫ বছর। পরনে তার খয়েরি রঙের ম্যাক্সি ও গাঢ় নীল রঙের সালোয়ার। মাথায় পাকা চুল। গায়ের রং ফর্সা। অজ্ঞাতপরিচয়ের এই নারী কিছুদিন ধরে ভর্তি রয়েছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কিছুদিন ধরে হাসপাতাল কমপ্লেক্সে ঘোরাঘুরি করছিলেন ওই বৃদ্ধা। পরে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে এলে গত ৩ জুলাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃদ্ধার চিকিৎসার ভার নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এখনো পাওয়া যাচ্ছে না তার পরিবারের খোঁজ।
চিকিৎসকরা বলছেন, সত্তরোর্ধ্ব এই নারী বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবেও অসুস্থ। চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পেয়েও বৃদ্ধা হাসপাতাল ছেড়ে যেতে রাজি হচ্ছেন না। যার ফলে অজ্ঞাতপরিচয়ের ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পড়েছে বিড়ম্বনায়।
এদিকে হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্টারে ওই নারীর নাম লেখা রয়েছে সাজেদা বেগম। স্বামীর নাম ছন্দু মিয়া। গ্রামের নাম কল্পবাস। তবে তিনি একেক সময় একেক ঠিকানা বলছেন। এতে তার পরিচয় বের করতে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে আছেন সত্তরোর্ধ্ব ওই নারী। উসকোখুসকো চুল ও পরনে অপরিষ্কার কাপড়। নিয়মিত গোসল নেই বলে শরীরেও ময়লা জমে আছে। হাতে লাগানো আছে ক্যানুলা। পাশে কেউ গেলেই উঠে বসছেন তিনি। কখনো চুপচাপ আবার কখনো রেগে উঠছেন। বাড়ি যাওয়ার কথা বললেই বেশি রেগে উঠছেন তিনি। বিড়বিড় করে বলছেন অস্পষ্ট অনেক কথা। কিছু কিছু কথা বোঝা গেলেও অধিকাংশ কথাই বোঝা যাচ্ছে না। তিনি তার নাম ও স্বামীর নাম ঠিকঠাক বলছেন। গ্রামের নাম একেক সময় একেক রকম বলছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আন্তঃবিভাগের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স রোকসানা আক্তার বলেন, কিছুদিন থেকেই বৃদ্ধ মহিলাটি হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করছিল। পরে তার চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার সঙ্গে পরিবারের কেউ নেই। আমরাই তার সেবা-যত্ন করছি। তবে তিনি বিছানাতেই প্রস্রাব ও মলত্যাগ করছেন। এতে অন্য রোগীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ছাড়পত্র দেয়া হলেও তিনি হাসপাতাল ছেড়ে যেতে রাজি হচ্ছেন না। বাড়ি যেতে বললেই তিনি রেগে যাচ্ছেন।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শেখ হাসিবুর রেজা কালবেলাকে বলেন, অজ্ঞাতপরিচয়ের এক বৃদ্ধাকে দায়িত্ব নিয়ে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। আমাদের নার্সরা তার সর্বোচ্চ সেবা-যত্ন করেছেন। তিনি এখন শারীরিকভাবে অনেকটাই সুস্থ। তবে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। তার মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ওই বৃদ্ধার স্বজনদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা বৃদ্ধার স্বজনদের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তবে তার স্বজনদের খোঁজ না পাওয়া গেলে আমরা দায়িত্ব নিয়ে মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাব।
মন্তব্য করুন