কুমিল্লার মুরাদনগর বাঙ্গরা বাজার কড়ইবাড়িতে ‘মব’ সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার (০৭ জুলাই) চাঞ্চল্যকর মামলাটি হস্তান্তরের এ আদেশ হয়েছে বলে জানান ডিবির ওসি।
এদিকে ঘটনার মাস্টারমাইন্ড আকুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শিমুল বিল্লালকে ঘটনার ৫ দিন পরও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে ঘটনার পর এখনো ভয়ে এলাকায় ফিরেননি পরিবারের সদস্যরা।
শিমুল বিল্লাল এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় আতঙ্কে আছেন বলে জানান নিহতদের পরিবারের বড় মেয়ে ও মামলার বাদী রিক্তা আক্তার। তিনি ক্ষোভ জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। খুনিরা যেকোনো সময় আমাকে মেরে ফেলবে। শিমুল চেয়ারম্যান এখনো গ্রেপ্তার না হওয়াতে আমরা বেশি আতঙ্কে আছি। শিমুল চেয়ারম্যানই মূল পরিকল্পনাকারী। তার নেতৃত্বেই সব ঘটেছে। রোববারও কুমিল্লার আদালতে স্বোচ্চার ছিলেন তিনি।
পরিবারের সদস্যরা ঘটনার পর থেকেই এলাকা ছাড়া বলেও জানান তিনি। অভিযুক্তদের আদালতে আনা হলে পুলিশের সামনেই তাদের খুনি বলে চিৎকার করেন রিক্তা। শিমুল চেয়ারম্যান ও বাচ্চু মেম্বারের নাম বলে- তারাই খুন করেছে বলেও চিৎকার করতে শোনা যায় তাকে।
এদিকে র্যাব ও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার কথা জানালেও পরে বিচারককে তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ওয়ার্ড মেম্বার বাচ্চু মিয়া (৫৫)। বাচ্চু মিয়ার ছেলে আতিকুর রহমানকে একইসঙ্গে সন্দিগ্ধ অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এদিকে ঘটনার ৫ দিন পরও গ্রাম পুরুষশূন্য।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাঙ্গরাবাজার থানার এসআই আবু তাহের ভূঁইয়া কালবেলাকে জানান, বাচ্চু মেম্বারসহ অভিযুক্তদের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আদালত তারিখ নির্ধারণ করে শুনানি শেষে আদেশ দেবেন। বাচ্চু মেম্বার জিজ্ঞাসাবাদে স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হওয়ায় তাকে পাঠানো হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ম্যজিস্ট্রেটের কাছে সে মত পাল্টে ফেলে।
তিনি বলেন, এখন রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
কুমিল্লা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. সাদেকুর রহমান জানান, সোমবার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোমিনুল হকের ১১ নম্বর আমলি আদালতে রিমান্ড আবেদনটি জমা দেওয়া হয়।
বাচ্চু মিয়া ছাড়াও গ্রেপ্তার অপর পাঁচজন হলেন কড়ইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মামলার ৫ নম্বর অভিযুক্ত রবিউল আওয়াল, বাচ্চু মিয়ার ছেলে সন্দিগ্ধ আসামি আতিকুর রহমান, রবিউল আওয়ালের ছেলে মো. বায়েজ মাস্টার, মামলার ৩৩ নম্বর অভিযুক্ত ও পাশের হায়দরাবাদ গ্রামের দুলাল এবং তার ছেলে আকাশ। তাদেরকে গত শুক্রবার (০৪ জুলাই) রাত থেকে শনিবার (০৫ জুলাই) সকাল পর্যন্ত ঢাকা ও মুরাদনগরে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শনিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে গ্রেপ্তারের বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাব-১১-এর অধিনায়ক।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মেম্বার বাচ্চু মিয়ার পরিকল্পনায় নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পরে ওই দিন রাতে তাদের বাঙ্গরা বাজার থানায় হস্তান্তর করা হলে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় নাজিমুদ্দিন বাবুল ও ছবির আহমেদ নামের দুই আসামিকে আদালতের তোলা হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। শুক্রবার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে কুমিল্লায় যৌথবাহিনী। এই মামলায় মোট আটজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ঘটনার পর থেকেই ২৪ ঘণ্টা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের বাড়ি ফিরতে বাঁধা নেই। কিন্তু আশঙ্কার কথা বলে তারা বাড়ি ফিরছেন না। পরিস্থিতি ঘটনার পর থেকেই পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের বাড়িতেও পুলিশ মোতায়েন আছে। গত দুই দিনে আর কোনো গ্রেপ্তার নেই।
ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ কালবেলাকে বলেন, মামলাটি হস্তান্তরের আদেশ হয়েছে। মামলার কাগজপত্র হাতে পেলে বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি পরিকল্পনা করা হবে।
হত্যার ঘটনায় পরদিন শুক্রবার রাতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত রোকসানা বেগম রুবির বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে বাঙ্গরাবাজার থানা এলাকার কড়ইবাড়ীতে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে নিজ বাড়ির সামনে রোকসানা বেগম রুবি (৫৩), তার মেয়ে তাসপিয়া আক্তার জোনাকি (২৯) ও ছেলে রাসেল মিয়াকে (৩৫) পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭)।
মন্তব্য করুন