ময়মনসিংহে শিশু একাডেমি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে নগরের হরিকিশোর রায় রোডের প্রাচীন একটি বাড়ি। কেউ বলছেন বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের, কেউ বলছেন বাড়িটি টাঙ্গাইলের দানবীর রায় বাহাদুর রনদা প্রসাদ সাহার অস্থায়ী বাসভবন। সম্প্রতি শিশু একাডেমি বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হলে এ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
বুধবার (১৬ জুলাই) স্থাপনাটি ভাঙার কাজ বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে মঙ্গলবার বাড়ি ভাঙার খবর প্রকাশের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও ভারত সরকারের পক্ষে বিবৃতি দেওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। এ সংক্রান্ত একটি খবর ভারতীয় এনডিটিভিতে প্রচার হয়।
রাতেই জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাড়িটি পরিদর্শন করেন। বাড়িটির মালিকানা নিয়ে জটিলতার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়।
শিক্ষাবিদ প্রফেসর বিমল কান্তি দে বলেন, শিশু একাডেমির ভাঙা ভবনটিতে থাকতেন তৎকালীন জেলা পরিষদের সচিব সারোয়ার জাহান চৌধুরী। পরবর্তী সময়ে একই প্রতিষ্ঠানের সচিব শাকির আহম্মেদ থাকতেন এই ভবনটিতে। এরপর এটি শিশু একাডেমিকে দেওয়ার বেশ কয়েক বছর পর এটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এই বাড়িতে সত্যজিৎ রায় বা তার পরিবার থাকতেন, তা কখনো কেউ বলেনি। শুধু অমূলক ধারণা থেকে এই তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিক ফরিদ আহাম্মেদ দুলাল বলেন, না জেনে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ভেঙে ফেলা শিশু একাডেমির ভবনটির পাশে পূর্ণলক্ষ্মী নামক ভবনটি সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি। তবে এই বাড়িটি হাতবদল হওয়ার পর একতলা থেকে বর্তমানে দোতলা করা হয়েছে। রনদা প্রসাদ সাহা এটি নির্মাণ করেছিলেন। এটি সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি না। কিন্তু না জেনে অনেকেই এটি নিয়ে উল্টাপাল্টা বলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন।
বিশিষ্ট শিক্ষক ও ঐতিহাসিক স্থাপত্যের ইতিহাস সংরক্ষক স্বপন ধর বলেন, ভাঙা ভবনটি শতবর্ষী পুরোনো স্থাপত্য। এটি রনদা প্রসাদ সাহার বাড়ি। এটি নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় সম্পদ। ময়মনসিংহ জেলায় ৩২০টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য ছিল। এর মধ্যে ৪০টি স্থাপত্যের অস্তিত্ব এখন আর নেই। বাকি ২৮০টির মধ্যে ৬টি আন্তর্জাতিক মানের, ৫৪টি দ্বিতীয় ক্যাটাগরির এবং ২২০টি সি-ক্যাটাগরির স্থাপত্য রয়েছে। এগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি।
জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মেহেদী জামান বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সেখানে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, আমরা সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছি। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ময়মনসিংহ জেলার একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশে এবং বিদেশে সংবাদ প্রচার হচ্ছে। সংবাদটি আমাদের সবার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যে জমি বা বাড়িটি সত্যজিৎ রায় বা তার পূর্বপুরুষদের দাবি করা হচ্ছে সরকারি রেকর্ড ও নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে আমরা কোথাও সত্যজিৎ রায় ও তার পূর্বপুরুষের কারও নাম পাইনি। আরএস রেকর্ডে এটি বাংলাদেশ সরকারের নামে লিপিবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে এটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির নামে বন্দোবস্ত করা হয়েছে এবং তাদের নামে দলিল সম্পাদিত হয়েছে। তারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ভবনটি ভাঙার কার্যক্রম শুরু করে। সে ক্ষেত্রে তারা নিয়মের কোনো ব্যত্যয় করেনি।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এসব তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এটি সত্যজিৎ রায় বা তার পূর্বপুরুষের বাড়ি না এবং তারা কখনো এখানে ছিলেন না। আশা করছি, এর মাধ্যমে সবাই সত্যটা জানতে পারবে।
মন্তব্য করুন