ময়মনসিংহ ব্যুরো
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৭ এএম
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ
মা ও দুই শিশুকে খুন

‘যে ভাইরে আগলাইয়া রাখলাম, সে-ই সব শেষ কইরা দিল’

পলাতক অভিযুক্ত নজরুল। ছবি : সংগৃহীত
পলাতক অভিযুক্ত নজরুল। ছবি : সংগৃহীত

দুইটা সন্তান। মেয়েটা বড়, বয়স ছয় আর ছোট ছেলেটার বয়স মাত্র দুই। সন্তানদের ভবিষ্যতের চিন্তা করে নেত্রকোনার কেন্দুয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভালুকা চলে আসেন রফিকুল। একটি স্পিনিং মিলে শুরু করেন কাজ।

নিয়েছেন দুই রুমের ছোট্ট একটা বাসা৷ ভালোই যাচ্ছিল দিন। কিন্তু ছোট ভাইটার জন্য মন কাঁদে রফিকুলের। ছোট ভাই নজরুল দুই বছরের বেশি সময় ধরে জেল খাটছে জয়দেবপুর থানার একটি হত্যা মামলায়। বড় ভাই রফিকুল ৪০ হাজার টাকা ঋণ করে ছোট ভাইয়ের জামিনের ব্যবস্থা করেন। নিজের ভাড়া বাসায় একটি কক্ষ ছেড়ে দিয়ে থাকতে দেন ছোট ভাইটাকে। রিকশা চালাচ্ছিল সে। কদিন ধরে বলছিল একটু বেশি করে কামাই করতে, সংসার যে ভালোভাবে চলে না তাই। রোববার রাতে নাইট ডিউটিতে চলে যায় রফিকুল। রাত ১০টার দিকে নজরুলের মোবাইলে কল দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছিলেন তিনি।

সকাল ৯টা। কারখানা থেকে বাসায় ফেরেন রফিকুল। এ কি বাসা কেন তালাবদ্ধ। সবাই কোথায়। ডাকাডাকি করছে রফিকুল। কারও কোনো সাড়াশব্দ নেই। তালা ভেঙে ঢোকেন ভেতরে। তিনজন বিছানায় শুয়ে আছে। কম্বল দিয়ে পুরো শরীর ঢাকা। একটা অংশ তুলতেন মেয়ের গলাকাটা লাশ। স্তব্ধ হয়ে যান রফিকুল। এ দৃশ্য দেখেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে দেখেন মা-ছেলে-মেয়ে তিনজনকেই গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে পালিয়েছে সেই ছোট ভাই নজরুল।

‘যে ভাইরে আগলাইয়া রাখলাম, সেই ভাই-ই সব শেষ কইরা দিল। আমার সাজানো সংসার সব তছনছ করে সে পালিয়ে গেছে।’ অঝোরে কাঁদছিলেন আর এসব কথা বলছিলেন ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই সন্তানসহ নিহত ময়না বেগমের স্বামী রফিকুল ইসলাম। অভিযোগ করছিলেন তার ভাই নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

রফিকুল কাঁদছে, চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। তবুও তার বুকফাটা কান্না থামছে না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। এক রাতের মধ্যেই ঝড়ে শেষ হয়ে গেছে তার সব স্বপ্ন। যাদের জন্য জীবনটা ছিল, তারা এখন আর নেই। নিহতরা হলেন—গৃহবধূ ময়না আক্তার (৩০), তার মেয়ে রাইসা (৭) এবং ছেলে নীরব (২)।

সোমবার (১৪ জুলাই) সকালে ভালুকা পৌরসভার টিঅ্যান্ডটি রোড এলাকার ভাড়া বাসায় এ ঘটনাটি ঘটে।

পুলিশ জানায়, রফিকুলের ছোট ভাই নজরুল ভালুকা পৌর এলাকায় এক ব্যক্তির কাছে সকাল ৮টার দিকে নিজের মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে পালিয়েছে। ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। বড় ভাইয়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থেকে তিনি অটোরিকশা চালাত। বাড়িটির যে কক্ষে নজরুল থাকত, সেখানকার খাটের নিচ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আকতার উল আলম কালবেলাকে বলেন, নিহতের দেবর নজরুল কথা কম বলত। অন্যদের সঙ্গে মিশত কম। এসব কারণে ভাবির সঙ্গে তার টানাপোড়েন চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনাটি পারিবারিক কারণে ঘটেছে।

তিনি বলেন, এ ঘটনার পর থেকে দেবর পলাতক রয়েছে। তবে ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং খুনি গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে। আশা করছি, খুব দ্রুত ঘটনাটি স্পষ্ট হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভোট দিয়ে শিক্ষার্থী বললেন, ‘ঈদের আনন্দ লাগছে’

বাংলাদেশে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে ‘অভিবাসন ম্যানুয়াল’ প্রকাশ করল আইওএম 

নিখোঁজের ১৫ দিন পর মরুভূমিতে মিলল সবুজের মরদেহ

মাইলস্টোনে নিহত পরিবারের পাশে থাকবেন তারেক রহমান : আমিনুল হক 

গণতন্ত্রের পথে নতুন যাত্রা শুরু করতে চাই : ব্যারিস্টার অসীম

ইলিশ রক্ষা অভিযানে গিয়ে অস্ত্র খোয়ালেন আনসার সদস্য

ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে সোবহানা-ফাহিমার উন্নতি

মিরপুর অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেবে জামায়াত

 অনুপমের বন্ধুত্বের উষ্ণ স্বীকৃতি পেলেন জিৎ

ভাবিকে হত্যার ১০ বছর পর চাচার হাতে এবার ভাতিজি খুন

১০

আজ থেকে নতুন দামে স্বর্ণ বিক্রি শুরু, ভরি কত

১১

হঠাৎ হাসপাতালে ভর্তি হানিয়া আমির

১২

২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করল আরও ৫ দেশ

১৩

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

১৪

রান্নায় মরিচ বেশি হলে যা করবেন

১৫

আজ ঢাকার আবহাওয়া যেমন থাকবে

১৬

নেইমারকে পেছনে ফেলে মেসির বিশ্বরেকর্ড

১৭

জবাব দিলেন সোনাক্ষী

১৮

অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারকে এক লাখ করে টাকা দেবে বিএনপি

১৯

চাকসুর ভোটগ্রহণ শুরু, ১০ মিনিটে দিতে হবে ৪০ ভোট

২০
X