ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার থেকে সরে দাঁড়িয়েছে আল্ট্রা-অর্থোডক্স শাস পার্টি। বুধবার (১৬ জুলাই) জোট সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন দলটির নেতারা। হরেদি (আল্ট্রা-অর্থোডক্স) ইহুদিদের বাধ্যতামূলক সামরিক চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্কের মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।
পার্লামেন্ট নেসেটে ১১টি আসন রয়েছে শাস পার্টির। অন্যদিকে সামান্য কয়েকটি আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। ফলে তারা জোট ত্যাগ করলে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ভেঙে পড়বে।
তবে দলটি জানিয়েছে, যদিও তারা সরকার থেকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সরিয়ে নিচ্ছে, তবু এখনই ক্ষমতাসীন জোট থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে আসছে না তারা। ইসরায়েলের ইদিওথ আহারোনথ পত্রিকার খবর অনুযায়ী, নেতানিয়াহুর দপ্তরের চাপের কারণে দলটি পুরোপুরি সরে যাওয়া স্থগিত করেছে।
শাস পার্টি বর্তমানে ধর্মীয় সেবা, কল্যাণ, শ্রম এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর নিয়ন্ত্রণ করে। এই পদত্যাগের মাধ্যমে তারা বোঝাতে চাইছে, হরেদি সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়।
ধর্মীয় সেবামন্ত্রী মাইকেল মালচিয়েলি বলেন, তোরাহ শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার ও নিপীড়নের প্রতিবাদে তারা সরকারের অংশ হতে পারছেন না। তবে দলটি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা বামপন্থিদের সঙ্গে কোনো ঐক্য বা সমর্থনে যাবে না।
এর আগে গত মঙ্গলবারই আগুদাত ইসরায়েল ও দেগেল হাতোরাহ দল একই ইস্যুতে সরকার থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে নেতানিয়াহুর ডানপন্থি জোটের সংসদীয় আসনসংখ্যা ৬১-তে নেমে আসে, যা সরকার গঠনের জন্য সর্বনিম্ন প্রয়োজনীয় সংখ্যা।
এই রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে ২৫ জুন ইসরায়েলি সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের পর। রায়ে বলা হয়, হরেদিদের সামরিক চাকরি থেকে অব্যাহতির বিধান বাতিল করতে হবে এবং যেসব ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীতে শিক্ষার্থী পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়, তাদের রাষ্ট্রীয় অনুদান বন্ধ করতে হবে।
হরেদি সম্প্রদায়ের দাবি, তোরাহ অধ্যয়নই তাদের জন্য জাতীয় সেবার সমতুল্য। সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও পরিচয়ের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ কারণে বছরের পর বছর অনেকেই ইয়েশিভায় পড়াশোনার ছুতোয় সামরিক চাকরি এড়িয়ে গেছেন, যা এখন আর সম্ভব হচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে শাস পার্টির পদত্যাগ নেতানিয়াহু সরকারের ভেতরের সংকটকে আরও প্রকট করে তুলেছে। যদিও দলটি এখনো সরকার ফেলে দেওয়ার মতো অবস্থানে যায়নি, তবে পরিস্থিতি যে কোনো সময় নাটকীয় মোড় নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন