দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির থেকে শ্রী শ্রী কান্তজিউ বিগ্রহ নিয়ে পুণ্যার্থীরা নৌপথে শহরের রাজবাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। প্রায় আড়াইশ বছরের ঐতিহ্য এবং দিনাজপুরের রাজপরিবারের প্রথা অনুযায়ী ঐতিহাসিক বেশ কয়েকটি স্থানে পূজা শেষে এ যুগল বিগ্রহ সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজবাড়িতে পৌঁছাবে।
এর আগে আজ সোমবার সকাল ৮টার দিকে ঐতিহ্যবাহী কান্তজিউ মন্দির থেকে পূজা শেষে শ্রী শ্রী কান্তজিউ বিগ্রহ পূর্ণভবা নদীর কান্তনগর ঘাটে আনা হয়। সেখানে দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বিগ্রহের নৌবহরকে বিদায় জানান।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভগবান শ্রী কৃষ্ণের আরেক রূপ কান্তজিউ বিগ্রহ নিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে পূর্ণভবা নদীর দুই তীরে ভক্ত-পুণ্যার্থীর ভিড় জমে।
সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও বিশ্বাস ধার্মিক মানুষের বৈশিষ্ট্য। অসাম্প্রদায়িক চেতনার কারণেই এ দেশে সম্মিলিতভাবে প্রতিটি সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষ অবস্থান করছে। যারা ধর্মকে ধারণ করে না, তারাই উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। ধর্মান্ধতা একটি সমাজের ঐতিহ্যকে নষ্ট করে দেয়। তাই আমরা ধর্মীয় অনুভূতিকে ধারণ করব এবং সাম্প্রদায়িকতাকে বর্জন করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘কান্তজিউ মন্দির থেকে কান্তজিউ বিগ্রহের বিদায় মুহূর্তে হাজারো মানুষের সমাগম ও মিলনমেলায় কেবল হিন্দুরাই সমবেত ছিলেন না, সব ধর্মের মানুষদের সমন্বিত শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিশ্বাসে কান্তজিউ বিগ্রহ তিন মাসের জন্য দিনাজপুরের রাজবাড়িতে গেল।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজ দোবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রণজিৎ কুমার সিংহ, কাহারোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি সুনীল চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক রতন সিংহ, ডা. ডি সি রায় প্রমুখ।
১৭৫২ সালে কান্তজিউ মন্দিরের কাজ শেষ হয়। সেই থেকে কান্তজিউ বিগ্রহ ৯ মাস কান্তনগর মন্দিরে এবং তিন মাস দিনাজপুর শহরের রাজবাড়িতে রাখা হয়।
রীতি অনুযায়ী জন্মাষ্টমীর একদিন আগে কান্তজিউ বিগ্রহ ধর্মীয় উৎসব-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনাজপুরের রাজবাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
কান্তজিউ মন্দির থেকে দীর্ঘ প্রায় ২৫ কিলোমিটার নদীপথে কান্তনগর ঘাট থেকে দিনাজপুর শহরের সাধুরঘাট পর্যন্ত শতাধিক ঘাটে কান্তজিউ বিগ্রহ বহনকারী নৌকা ভেড়ানো হবে। নৌকাযোগে দিনাজপুর আসার সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বী হাজারো ভক্ত নদীর দুই কুলে কান্তজিউ বিগ্রহকে দর্শন এবং বাড়ির বিভিন্ন ফল, দুধ ও অন্যান্য সবজি নিয়ে উপহার দেন। এ সময় নদীর দুই কূলে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
মন্তব্য করুন