নেত্রকোনার আটপাড়ায় শিক্ষককে শোকজ করায় স্কুলের ভেতরে ঢুকে এক প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় দুই যুবকের বিরুদ্ধে।
বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে ১টায় উপজেলার অভয়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ওই দুজন হলেন উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের পুখলগাঁও গ্রামের হাফিজুর রহমান মিস্টার এবং অভয়পাশা গ্রামের মুন্না খান শাহীন।
স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিদ্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২০ জুলাই) বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তার নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে বিদ্যালয়ে আসার কারণে প্রধান শিক্ষক তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। পরে এই নোটিশের কাগজ রুবি আক্তার বাড়িতে নিয়ে গেলে তার স্বামী কামাল হোসেন বিষয়টি জেনে স্থানীয় নেতা হাফিজুর রহমান ও মুন্না খান শাহীনকে জানান। পরে ওই দুজন বুধবার দুপুর ১টার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে কারণ জানতে চান।
এ সময় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করে চলে যান।
কিছুক্ষণ পর মারধরের বিষয়টি জেনে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী ছয়াশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষিকা তাসলিমা কোহেন ঘটনাস্থলে যান। পরে তার স্বামীকে কেন লোক দিয়ে মারধর করানো হলো এ কথা বলে শিক্ষিকা রুবি আক্তারকে চড়-থাপ্পড় মারেন।
এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দুটি পক্ষ তৈরি হলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ মুকুল এবং থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে উভয়পক্ষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়।
হামলার শিকার প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিদ্যালয়ে দেরিতে আসায় সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তারকে শোকজ করার কারণে তিনি ও তার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে ভাড়া করা লোক দিয়ে আমার ওপর হামলা করে। পরে আমার স্ত্রী বিষয়টি শুনে বিদ্যালয়ে এসে রুবির সঙ্গে ঝগড়া করেন। এখন তারা বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করছেন।’
সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তার বলেন, ‘পথে যানবাহন সঠিক সময়ে না পাওয়া আমি বিদ্যালয়ে আসতে মাত্র ১৫ মিনিটের মতো দেরি হয়। এ কারণে প্রধান শিক্ষক আমাকে শোকজ করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময় আমাকে উত্ত্যক্ত করাসহ নানাভাবে হয়রানি করেন। তার ওপর কোনো হামলা করানো হয়নি। উল্টো তার স্ত্রী বিদ্যালয়ে এসে সবার সামনে আমাকে চড়-থাপ্পড় মেরেছেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মুন্না খান শাহীনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান মিস্টার বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক রুবি আমার চাচি হয়। তাকে বেশ কিছুদিন ধরে প্রধান শিক্ষক শ্লীলতাহানি ও কুপ্রস্তাব দিচ্ছিলেন। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে গিয়েছিলাম। এতে প্রধান শিক্ষক আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে বাগবিতণ্ডা হয়, পরে আমি চলে আসি। এখন তিনি মারধর করেছি বলে অভিযোগ করছেন। এটা একেবারেই মিথ্যা।’
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ মুকুল বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি প্রধান শিক্ষকের পাঞ্জাবি ছেঁড়া। মারধরের ব্যাপারে জানি না। সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তারকে প্রধান শিক্ষক শোকজ করেছিলেন সে বিষয়ে আমি জানি। তবে রুবি আক্তার আমার কাছে শ্লীলতাহানি বা কু-প্রস্তাবের কোনো অভিযোগ করেনি। স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকও এ ব্যাপারে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি মিস্টার ও শাহীন নামের দুই ব্যক্তি প্রধান শিক্ষককে মারধর করেছেন। আর প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী এক নারী শিক্ষককে মারধর করেছেন। তবে এ ব্যাপারে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন