হুমায়ুন কবির, সাভার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাতে আতঙ্কিত সাভারবাসী

সাভারের একটি গলিতে কতগুলো বেওয়ারিশ কুকুর। ছবি : কালবেলা
সাভারের একটি গলিতে কতগুলো বেওয়ারিশ কুকুর। ছবি : কালবেলা

ঢাকার অদূরে সাভারে একটি জনবহুল শিল্পাঞ্চল এলাকা। ইদানীং এই এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের অবাধ বিচরণ দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় কুকুরের উৎপাত। কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে ফজরের নামাজ পড়াও দায় হয়ে পড়েছে। কুকুরের বিশৃঙ্খল দৌড়াদৌড়ি প্রাতর্ভ্রমণকারীদের হাঁটাহাঁটিতে বিঘ্ন ঘটায়। স্কুলগামী শিশু এবং নারীরা কুকুরের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত থাকেন। ঘরের বাইরে গেলে এসব কুকুর লোকজনের ওপর আক্রমণ করে। এমনকি এসব কুকুরের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গবাদিপশুও। হাসপাতালেও বাড়ছে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুকুরে কামড়ে আহত হয়ে সেখানে গতকাল শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) ১৩ জন কুকুরে কামড়ানো রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।

সাভার পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লা ঘুরে দেখা যায়, ব্যাংক কলোনি, গেন্ডা, নামা বাজার, আড়াপাড়া, আনন্দপুর, থানা রোড এলাকায় কুকুরের উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে আনন্দপুর ও গেন্ডা এলাকায় দল বেঁধে ১০-১২টি কুকুর ঘোরাঘুরি করছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সন্ধ্যা নামলেই কুকুরের উপদ্রব বাড়ছে। পথচারীদের গতিরোধ করে দাঁড়াচ্ছে কুকুরের দল। মোটরসাইকেল বা সাইকেলের পিছু নিচ্ছে।

পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের থানা খেয়াঘাট এলাকায় মো. জুয়েল নামে স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ী কালবেলাকে বলেন, গত মাসের মাঝামাঝি সময়ের দিকে আমাদের এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একদিনে অন্তত ১১ জনকে কুকুরের একটি দল কামড়ে দিয়েছে। এদের মধ্যে ৭-৮ বছরের বেশ কয়েকজন শিশু ছিল। যাদের নাকে ও মুখে কামড়ে দিয়েছে কুকুরের দল।

গেন্ডা এলাকার ইমু সাহেবের বালুর মাঠ নামে পরিচিত খেলার মাঠের প্রবেশদ্বার তারের জাল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে, যাতে কোনো কুকুর মাঠে প্রবেশ করতে না পারে। মাঠের দায়িত্বে থাকা মো. রেজুয়ান কালবেলাকে বলেন, মাঠে খেলতে আসা ব্যক্তিদের প্রায়ই হুট করে ধাওয়া দিচ্ছে পাগলা কুকুর। এ ছাড়া মাঠে ছাগল, মুরগিকে কামড়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি একটি ছাগলের মাথা কামড়ে দিয়েছে, তাই বাধ্য হয়ে মাঠের প্রবেশদ্বার তারের জাল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।

গত মে মাসে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যপাড়া এলাকার শুদ্ধ সাহা নামে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে তার বাসার সামনেই কুকুরের একটি দল কামড়ে দেয়। শুদ্ধর বাবা শুভ্র সাহা কালবেলাকে বলেন, ‘চার-পাঁচটি কুকুর আমার ছেলের শরীরের নয়টি স্থান থেকে মাংস ছিঁড়ে নিয়েছিল। ওই ঘটনার পর থেকে সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনার খবর শুনতে পাচ্ছি। এর সমাধান কে দেবে। নিজে কুকুরের কামড়ে মারা গেলেও কুকুর মারা যাবে না। আবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।’

আনন্দপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম ফয়েজউদ্দিন খান শিহাব কালবেলাকে বলেন, কুকুরের উপদ্রবে আমরা সবাই ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ ছোট ছোট বাচ্চারা এক প্রকার ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ভয়ে একা বাসার নিচে নামতে ভয় পাচ্ছে তারা। সন্ধ্যার পর একা সড়কে বের হলেই ধাওয়া দিচ্ছে কুকুর। সাইকেল, মোটরসাইকেল দেখলে দলবেঁধে ছুটে আসে। আমার খামারের মুরগি ও ছাগলের ওপরও হামলা চালিয়েছে কয়েক দফা। এ এক ভীতিকর পরিবেশ। সংশ্লিষ্টদের প্রতি দ্রুত বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় এটি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মুল হুদা কালবেলাকে জানান, গত মে মাস থেকে এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ৭৮২ জন চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে কুকুরে কামড়ানো আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানালেন তিনি। রেজিস্টার দেখে জানালেন, চলতি বছরের মে মাসে ১৭৫ জন, জুন মাসে ১৫৮ জন, জুলাই মাসে ১৮২ জন, আগস্ট মাসে ২৫৪ জন এবং চলতি মাসের গত দুদিনে ২০ জনের মতো কুকুরের আক্রমণের রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। তবে এখনো কারও জলাতঙ্ক হয়নি। আমাদের হাসপাতাল থেকে সব ধরনের টিকা ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এআরভি ও আরআইজি ভ্যাকসিনও মজুত আছে।

কুকুরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে সাভার পৌরসভার মেয়র আবদুল গনি কালবেলাকে বলেন, পৌরসভা একসময় কুকুর নিধন কর্মসূচি চালাত। কিন্তু আদালতের নির্দেশের কারণে তা আর করা যাচ্ছে না। তবে কুকুরের উপদ্রব খুব বেশি আকারে বেড়েছে। কুকুরের বংশবিস্তারও রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আক্রান্ত কেউ আমাদের কাছে ভ্যাকসিন নিতে আসলে আমরা তাদের ভ্যাকসিন দিয়ে দিচ্ছি। কেউ ফেরত যাচ্ছেন না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজস্থানে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, বাসে আগুনে পুড়ে ২০ জনের মৃত্যু

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক স্টাফ কলেজ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

মার্কারের পরিবর্তে চক ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে ডিবিএল সিরামিকস ‘টাইলচক’ 

বিশ্বে শক্তিশালী পাসপোর্টের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কত?

হোয়াইটওয়াশ লজ্জায় বাংলাদেশ, একশও ছুঁতে পারল না মিরাজরা

হাটহাজারীতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত

জাল সনদে ১৮ বছর শিক্ষকতা, জেনেও ব্যবস্থা নেননি অধ্যক্ষ

ইলিয়াস কাঞ্চনের অসুস্থতায় শাবনূরের আবেগঘন বার্তা

যুদ্ধের উসকানি দিয়ে শান্তির প্রতীক হওয়া যায় না, ট্রাম্পকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাবার সঙ্গে আলোর শেষ কথা—আমরা আটকে গেছি

১০

লাইভে এসে সংসদ ভেঙে দিলেন পালিয়ে যাওয়া মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট

১১

মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড : দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান তারেক রহমানের

১২

ছাত্রশিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থীকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

১৩

মেসি নন, নতুনদের নিয়েই পুয়ের্তো রিকোর মুখোমুখি আর্জেন্টিনা

১৪

বিএনপি কোনো দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় না : কফিল উদ্দিন 

১৫

বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান হাসপাতালে ভর্তি

১৬

পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে : পরওয়ার

১৭

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে : লায়ন ফারুক

১৮

ভারতের হারে এশিয়ান কাপ খেলার স্বপ্ন শেষ বাংলাদেশের

১৯

সাবেক স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার

২০
X