তিস্তার পানি কমে যাচ্ছে। পানি নেমে যাচ্ছে প্লাবিত এলাকার বাড়িঘর থেকে। তবে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। দীর্ঘ সময় দূষিত পানিতে চলাফেরা করায় অনেকের দেখা দিয়েছে ডায়রিরাসহ নানা চর্মরোগ।
বানভাসি মানুষের পায়ের আঙুলের ফাঁকে লালচে ও সাদা ফ্যাকাশে রঙের ঘা দেখা দিয়েছে। কারও কারও পা ফুলে যাচ্ছে। বয়স্ক ও শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেলে তিস্তার বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যাওয়ায় ফিরছেন অনেকে। তবে এখনো নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতবাড়িতে পানি রয়েছে।
দূষিত পানি ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণেই তাদের চুলকানি, খোসপাঁচড়া রোগ হচ্ছে। অনেক বানভাসি এখনো তিস্তা বাঁধের রাস্তায় একচালা ঘর করে গবাদি পশু নিয়ে বসবাস করছেন। বাঁধেই চুলা জ্বালিয়ে করছেন রান্না।
তিস্তার ভাঙনে বারবার বসতভিটা সরিয়ে নিঃস্ব বানভাসি মানুষ রাস্তার ধারে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। কর্মহীন এসব মানুষ অর্থকষ্টে রয়েছেন। চেয়ে আছেন সরকারি সহায়তার দিকে। যারা দুবেলা ভাতের জোগান দিতে পারেন না, তারা ওষুধ কিনবেন কী দিয়ে। তাই সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তারা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি এলাকার বাসিন্দা মোমেনা বেওয়া (৭০) বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনো বসত ভিটার মেঝে কাদা ও স্যাঁতসেঁতে থাকায় চলাফেরা করতে কষ্ট হচ্ছে। এজন্য পায়ে হয়েছে ঘা।
বন্যাকবলিত আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের ২নং স্পার বাঁধ এলাকার বাসিন্দা শফিকুল (৪০) জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে আমার বসতভিটায় পানি জমে আছে। রাস্তার ওপর একচালা ঘর করে গরু-ছাগল রেখেছি এবং রান্নাও করছি রাস্তায়। গত দুদিনে ঘর থেকে পানি নেমে গেলেও উঠানে কাদা পানি। সব সময় পানিতে চলাফেরা করায় পরিবারের প্রায় সবারই পায়ে চুলকানি হয়েছে। ওষুধ খেয়েও চুলকানি থামছে না।
এদিকে গত দুদিন থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সিভিলে সার্জন ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, বন্যায় দূষিত পানিতে দীর্ঘ সময় চলাফেরা করার কারণে ডায়রিয়াসহ নানা চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। এজন্য পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে, চলতে হবে সতর্ক অবস্থায়। নিয়মিত সাবান ব্যবহার করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এসময় তিনি বন্যার্তদের নিকটতম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা ও পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
মন্তব্য করুন