সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর কোনো ঘরেই ঠাঁই হলো না বৃদ্ধা মায়ের। এখন তিনি থাকেন ছাগলের ঘরে। বৃদ্ধা রহিতন বেগমের পাঁচ সন্তান। দুই মেয়ে কৌশলে তার সম্পত্তি লিখে নিয়েছেন। এ নিয়ে বাকি সন্তানদের সঙ্গে শুরু হয় বিরোধ। এ কারণে কোনো সন্তানের ঘরেই ঠাঁই হলো না বৃদ্ধা মায়ের। এখন তিনি থাকেন ছাগলের ঘরে।
বৃদ্ধা রহিতন বেগম (৮০) মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বাটরাকান্দি গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের স্ত্রী। প্রায় ৪০ বছর আগে তার স্বামী মোসলেম উদ্দিন মারা যান। স্থানীয়রা জানান, তার স্বামী মোসলেম উদ্দিন মারা যাওয়ার আগে তার নামে ১৬৫ শতাংশ জমি লিখে দিয়েছিলেন। শেষ বয়সে এটিই দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। সেই সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে তার ৫ সন্তানের মধ্যে চলছে নানা বিরোধ।
তার পাঁচ সন্তানরা হলেন- বিল্লাল হোসেন (৫৫), মমতাজ বেগম (৫০), বেদানা বেগম (৪৫), দেলোয়ার হোসেন (৪৩) ও আঙ্গুরি বেগম (৪০)। এর মধ্যে কৌশলে বেদানা বেগম ও আঙ্গুরি বেগম মায়ের সব জমি লিখে নিয়েছেন। এরপর থেকেই পারিবারিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশও হয়েছে। সালিশে বেদানা ও আঙ্গুরি বেগম অঙ্গীকার করেন তারা মায়ের ভরণপোষণ ও সেবাযত্ন করবেন। কিন্তু বাস্তবে বৃদ্ধা মা নানা অবহেলার শিকার হচ্ছেন।
এ জন্য বৃদ্ধা রহিতন বেগমের বড় মেয়ে মমতাজ বেগম মাকে উদ্ধার ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য ঘিওর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
মমতাজ বলেন, তার দুই বোন ও তাদের স্বামীরা মাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি লিখে নিয়েছেন। জমি নেওয়ার পর থেকে তার ওপর নির্যাতন করতে থাকেন। ভরণপোষণ ও সেবাযত্ন করার নামে তাকে ছাগলের ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন। মাকে আমাদের কাছে আনতে চাইলে তারা বাধা দেন, মারধর করেন।
মেয়ে বেদানা বেগমের বাড়িতে দেখা যায়, ছোট্ট ছাপড়া ঘরের এক পাশে ছাগল, অন্যপাশে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে রহিতন বেগমের। কঙ্কালসার দেহ নিয়ে বৃদ্ধা রহিতন বেগম চৌকির এক কোণে শুয়ে আছেন। অন্ধকার আর স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে নেই আলো বাতাসের ব্যবস্থা। তিনি কোনো কথা বলতে পারেন না। মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে শুধু অসহায়ের মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে উপস্থিত হন বৃদ্ধার আরেক মেয়ে আঙ্গুরি বেগম। মায়ের ছবি তোলায় দুই মেয়ে চড়াও হয়ে ওঠেন সাংবাদিকদের ওপর। সঙ্গে যোগ দেন তাদের স্বামী-সন্তানরাও।
প্রতিবেশী সামেলা বেগম জানান, অনেক সময় বৃদ্ধা রহিতন বেগম ক্ষুধায় কাতরালেও খাবার না দিয়ে উল্টো বকাঝকা ও মারধর করা হয়।
ছোট ছেলে দেলোয়ার হোসেন জানান, বিছানাতে টয়লেট করেন বলে মাকে খাবার দেওয়া হয় না। আমরা খাবার দিতে গেলে অথবা মাকে আনতে গেলেও তারা ঝগড়া বিবাদ করেন।
ঘিওর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল জানান, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বসা হয়েছে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। ওই বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। অবহেলা আর অযত্নে তিনি খুব কষ্টে দিন পার করছেন।
ঘিওর থানার ওসি আমিনুর রহমান জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে গত মঙ্গলবার পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বৃদ্ধার সব সন্তান ও স্বজনদের থানায় ডাকা হয়েছিল। ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন