ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৩৩ পিএম
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বৃদ্ধা মায়ের ঠাঁই হলো ছাগলের ঘরে

গ্রাফিক্স : কালবেলা।
গ্রাফিক্স : কালবেলা।

সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর কোনো ঘরেই ঠাঁই হলো না বৃদ্ধা মায়ের। এখন তিনি থাকেন ছাগলের ঘরে। বৃদ্ধা রহিতন বেগমের পাঁচ সন্তান। দুই মেয়ে কৌশলে তার সম্পত্তি লিখে নিয়েছেন। এ নিয়ে বাকি সন্তানদের সঙ্গে শুরু হয় বিরোধ। এ কারণে কোনো সন্তানের ঘরেই ঠাঁই হলো না বৃদ্ধা মায়ের। এখন তিনি থাকেন ছাগলের ঘরে।

বৃদ্ধা রহিতন বেগম (৮০) মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বাটরাকান্দি গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের স্ত্রী। প্রায় ৪০ বছর আগে তার স্বামী মোসলেম উদ্দিন মারা যান। স্থানীয়রা জানান, তার স্বামী মোসলেম উদ্দিন মারা যাওয়ার আগে তার নামে ১৬৫ শতাংশ জমি লিখে দিয়েছিলেন। শেষ বয়সে এটিই দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। সেই সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে তার ৫ সন্তানের মধ্যে চলছে নানা বিরোধ।

তার পাঁচ সন্তানরা হলেন- বিল্লাল হোসেন (৫৫), মমতাজ বেগম (৫০), বেদানা বেগম (৪৫), দেলোয়ার হোসেন (৪৩) ও আঙ্গুরি বেগম (৪০)। এর মধ্যে কৌশলে বেদানা বেগম ও আঙ্গুরি বেগম মায়ের সব জমি লিখে নিয়েছেন। এরপর থেকেই পারিবারিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশও হয়েছে। সালিশে বেদানা ও আঙ্গুরি বেগম অঙ্গীকার করেন তারা মায়ের ভরণপোষণ ও সেবাযত্ন করবেন। কিন্তু বাস্তবে বৃদ্ধা মা নানা অবহেলার শিকার হচ্ছেন।

এ জন্য বৃদ্ধা রহিতন বেগমের বড় মেয়ে মমতাজ বেগম মাকে উদ্ধার ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য ঘিওর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

মমতাজ বলেন, তার দুই বোন ও তাদের স্বামীরা মাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি লিখে নিয়েছেন। জমি নেওয়ার পর থেকে তার ওপর নির্যাতন করতে থাকেন। ভরণপোষণ ও সেবাযত্ন করার নামে তাকে ছাগলের ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন। মাকে আমাদের কাছে আনতে চাইলে তারা বাধা দেন, মারধর করেন।

মেয়ে বেদানা বেগমের বাড়িতে দেখা যায়, ছোট্ট ছাপড়া ঘরের এক পাশে ছাগল, অন্যপাশে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে রহিতন বেগমের। কঙ্কালসার দেহ নিয়ে বৃদ্ধা রহিতন বেগম চৌকির এক কোণে শুয়ে আছেন। অন্ধকার আর স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে নেই আলো বাতাসের ব্যবস্থা। তিনি কোনো কথা বলতে পারেন না। মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে শুধু অসহায়ের মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে উপস্থিত হন বৃদ্ধার আরেক মেয়ে আঙ্গুরি বেগম। মায়ের ছবি তোলায় দুই মেয়ে চড়াও হয়ে ওঠেন সাংবাদিকদের ওপর। সঙ্গে যোগ দেন তাদের স্বামী-সন্তানরাও।

প্রতিবেশী সামেলা বেগম জানান, অনেক সময় বৃদ্ধা রহিতন বেগম ক্ষুধায় কাতরালেও খাবার না দিয়ে উল্টো বকাঝকা ও মারধর করা হয়।

ছোট ছেলে দেলোয়ার হোসেন জানান, বিছানাতে টয়লেট করেন বলে মাকে খাবার দেওয়া হয় না। আমরা খাবার দিতে গেলে অথবা মাকে আনতে গেলেও তারা ঝগড়া বিবাদ করেন।

ঘিওর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল জানান, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বসা হয়েছে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। ওই বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। অবহেলা আর অযত্নে তিনি খুব কষ্টে দিন পার করছেন।

ঘিওর থানার ওসি আমিনুর রহমান জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে গত মঙ্গলবার পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বৃদ্ধার সব সন্তান ও স্বজনদের থানায় ডাকা হয়েছিল। ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আটকে পড়া ইরানি হাজিদের ব্যাপারে সৌদি বাদশাহর নির্দেশ

ঈদের ফিরতি যাত্রায় দৌলতদিয়ায় চাপ বাড়ছে

ইসরায়েলের দেড় শতাধিক স্থানে ঢুকেছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র

আন্ডারডগদের বছরে ক্রিকেটের মঞ্চে ইতিহাস গড়ার পথে দক্ষিণ আফ্রিকা

সিঙ্গাপুর থেকে এসে ধরা খেলেন শাহীন

এবার ইরানের পাশে দাঁড়াল ল্যাটিন আমেরিকার এক দেশ

সন্ধ্যার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড় 

ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতি

ভারী ‘মারণাস্ত্র’ থাকবে না পুলিশের কাছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে যা বলছেন রাজনীতিবিদরা

১০

সিলেটে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ

১১

ইসরায়েলে কতটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান

১২

যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় টোল আদায় ৩ কোটি ৪৩ লাখ

১৩

আলজাজিরার বিশ্লেষণ / যুক্তরাষ্ট্রকে সংঘাতে জড়িয়ে ইরানে সরকার পতনের পরিকল্পনা

১৪

সুইডেনের তৃতীয় সারির ক্লাবের কারণে বদলালো অফসাইডের নিয়ম

১৫

ইসরায়েলে পঞ্চম ধাপে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল ইরান

১৬

সারা দেশের ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস

১৭

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন বাবা, সরকারি চাকরিতে ছেলের জন্মসাল ৮৩

১৮

এখন কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা করবে ইরান?

১৯

কেন হঠাৎ মৃত্যু হয়? 

২০
X