বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজে ভর্তি জালিয়াতির শিকার ২৫ শিক্ষার্থী বিশেষ বিবেচনায় ২০২৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যাতে আর নষ্ট না হয় সেজন্য মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তিসহ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে বলা হয়েছে। চলমান এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান এবং বোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবির আরও জানান, ২১ আগস্টের মধ্যেই তাদের তদন্ত রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ওই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য বোর্ডের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে বলেছেন। আমরা সেভাবে কাজ করছি। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ থেকেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা দেখব।
এর আগে বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজে ২০২১ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে ২৫ শিক্ষার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি দেখানো হয়। এরপর ওই শিক্ষার্থীদের নামে ভর্তির রশিদ ইস্যু করে তাদের ইউনিফর্ম পরে ক্লাস করতে বলা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করেন, এমনকি প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়ার পরীক্ষাতেও অংশগ্রহণ করেন। এভাবে দুই বছর কেটে যাওয়ার পর তারা চলতি বছরের ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
তবে পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক দিন আগ পর্যন্ত তাদের নামে প্রবেশপত্র ইস্যু না হওয়ায় ওই ২৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়। পরদিন ১৭ আগস্ট পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে কেন্দ্রে গিয়ে খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারেন, তাদের উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তিই করানো হয়নি। এর পরপরই ভর্তি জালিয়াতির বিষয়টি ফাঁস হয়।
এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংসের জন্য আব্দুল হান্নান, হারুনুর রশিদ ও আমিনুল ইসলাম নামে ওই কলেজের তিন কর্মচারী (অফিস সহায়ক) এবং কাওছার আলী নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ভর্তির জন্য অভিযুক্তরা একেকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
এ ঘটনার পর দৈনিক কালবেলাসহ একাধিক জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ করলে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ওই ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশের পর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কলেজের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভর্তি জালিয়াতির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রমাণসহ লিখিত আবেদন চাওয়া হয়। এরপর একে একে ১০ জন আবেদন করেন।
ঘটনাটি তদন্তের জন্য রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবির গত ১৯ আগস্ট বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজে যান। তিনি জালিয়াতির শিকার শিক্ষার্থীসহ অভিযুক্ত ওই কলেজের তিন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলেন। ওইদিনই র্যাব এবং পুলিশ ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রাশাদুল ইসলাম নামে একজন ওই তিন কর্মচারী এবং ছাত্রলীগ কর্মী কাওছার আলীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচজনকে আসামি করে শাজাহানপুর থানায় মামলা করেন।
বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক রেজাউন নবী বলেন, তিন কর্মচারী কারাগারে থাকায় কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত কমিটির তদন্ত কাজ এখনো শেষ করা সম্ভব হয়নি।
মামলা দায়েরকারী শিক্ষার্থী রাশাদুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ প্রদান আমাদের জন্য ইতিবাচক একটি সিদ্ধান্ত। এটি আমাদের জন্য খুবই ভালো একটি সুযোগ।
মন্তব্য করুন