কুমিল্লা নগরীজুড়ে শিশু-কিশোররা চালাচ্ছে অটোরিকশাসহ তিন চাকার গাড়ি। কোনো রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই যাত্রী নিয়ে ছুটছে নগরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। অদক্ষ এসব শিশু-কিশোর চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছেন অনেকেই। এতে আতঙ্কে থাকেন যাত্রী ও পথচারীরা।
তিন চাকার এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও টমটম। এ ছাড়া ট্রাক্টর ও পিকআপের মতো মাঝারি আকৃতির গাড়ি নিয়েও সড়কে দেখা যায় এসব অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের।
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরে দেখা গেছে, তিন চাকার গাড়িচালকদের একটি বড় অংশই কিশোর। আবার তাদের মধ্যে যাত্রী তোলা ও গন্তব্যে পৌঁছা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে। বেপরোয়াভাবে চালানো এসব যানবাহনেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
এদিকে এসব অদক্ষ চালকের কারণে বাড়ছে যানজট ও ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এতে যাত্রী ও পথচারীরা আতঙ্কে থাকতে হয়। বিশেষ করে স্কুলগামী ছেলেমেয়েরা তিন চাকার এসব বাহনে করে আসা-যাওয়ার কারণে বাবা মায়েরা সবসময়ই আতঙ্কের মধ্যে থাকেন।
অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের হাতে গাড়ি দেওয়ায় গাড়ির মালিকদের আইনের আওতায় আনার দাবি স্থানীয় অভিভাবকদের।
অটোরিকশা দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগী বৈশাখী টেলিভিশন কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, গেল ৩০ মে কুমিল্লা নগরীর সার্কিট হাউসের সামনে অ্যাক্সিডেন্টে আমার পায়ের হাড় কয়েক জায়গায় ভেঙে যায়। টানা তিন মাস হলো এখনো পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, নগরীর ধর্মসাগড় পাড় থেকে ইঞ্জিন রিকশায় (প্যাডেল রিকশার ইঞ্জিন ভার্সন) রাজগঞ্জ যাচ্ছিলাম। চালককে ধীরে চালাতে বললেও সে দ্রুতগতিতে চালাতে গিয়ে সার্কিট হাউসের সামনে চাকার নিচে ইট পড়ে রিকশাটি পুরো উল্টে যায়। কয়েক গজ দূরে রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ি আমি। ভেঙে যায় আমার হাঁটুর ওপর থেকে কোমরের নিচের হাড়। শুধু ভেঙেই যায়নি, মূল ভাঙার ওপরে আরও কয়েকটি ভাঙা পড়ে। একটা দুর্ঘটনার শিকার হলে কেবল ভুক্তভোগীরা বোঝে এর কত যন্ত্রণা। কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে দুই মাস থাকার পর বর্তমানে বাসায় থেকে বেড রেস্ট ও ব্যায়াম করার মধ্য দিয়ে দিন পার করছি।
নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকার আবুল কাসেম বলেন, গ্রাম থেকে আসা যাত্রীরা এত কিছু বোঝে না। তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। প্রসাশন থেকে এদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা উচিত। কয়েকবারই সিটি করপোরেশন থেকে শহরে অটোরিকশা নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিলেও তার কোনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
ইয়াসিন মার্কেট এলাকার অটোরিকশা চালক বিপ্লব (১৪) বলেন, সে তিন বছর ধরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ভাড়ায় চালাচ্ছে। ৩৬০ টাকা অটোরিকশার মালিককে দিয়ে বাকি টাকা নিজের জন্য রাখে। প্রতিদিন মালিকের টাকা পরিশোধ করে ৪০০ টাকা তার নিজের থাকে। এলাকার এক বড় ভাই তাকে অটোরিকশা চালানো শিখিয়েছে। সে তিন-চারবার দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে, তবে বড় কোনো সমস্যা হয় নাই।
সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল আমিন সাদি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক কাউকে অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয় না। অনেক সময় যানবাহনের মালিকরা এ ধরনের ভুল করেন। তিনি অটোরিকশার মালিকদের অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ চালকদের হাতে যানবাহন তুলে না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেন।
কুমিল্লা কান্দির পাড়ের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) সফিকুর রহমান বলেন, তারা প্রতিদিনই যানবাহনের অনিয়ম গুরুত্বসহকারে দেখছেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের গাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন