রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার আস্তানায় বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভক্তদের পাল্টা সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে আহত হন দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ। এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এক যুবক।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলার আস্তানায় হামলা চালায়।
নিহত যুবকের নাম মো. রাসেল মোল্লা (২৮)। তিনি জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের জটু মিস্ত্রিপাড়ার আজাদ মোল্লার ছেলে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত রাসেলের বাবা ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আজাদ মোল্লা কালবেলাকে বলেন, রাসেল ছোটবেলা থেকেই গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফে যাওয়া-আসা করত, দরবারকে ভালোবাসত। দরবারে যেত নিয়মিত। রাসেলের দাদা ছিল গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফের ভক্ত। আমার বাপ ওই দরবারের ভক্ত অনেক আগে থেকেই। সে কারণে রাসেল ছোট থেকেই ওই দরবারের ভক্ত ছিল।
তিনি আরও বলেন, গতকাল রাসেল গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফে গিয়েছিল। আমি শুনলাম লোকজন গিয়ে তাদের আটক করছে। তাদের মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পরে শুনলাম, হাসপাতালে মারা গেছে। আমার ছেলের মুখটা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে, পেছনে কুপিয়েছে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত রাসেলের বাবা আজাদ মোল্লা বলেন, মামলার বিষয়ে এখনো আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমাদের লোকজন আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।
মৃত্যুর খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা পাবনার রাখালগাছি এলাকার মো. জাহিদ শিকদার গুরুভাই রাসেলকে শেষ বারের মতো দেখতে এসেছেন। এ সময় তিনি কালবেলাকে বলেন, এই খবরটা শোনার পর থেকেই আমার খুব খারাপ লাগছে। একসঙ্গে চলাফেরা করছি। গুরুভাই মারা গেল, খুব কষ্ট লাগছে। গতকাল শুক্রবার ছিল, শুক্রবারে আমরা দরবারে বেশি যাওয়া-আসা করি।
নিহত রাসেলের মামাতো বোন আমেরুন কালবেলাকে বলেন, বিচার তো অবশ্যই চাইব। কীভাবে মারল! এই বয়সে তো ওর মরার সময় হয়নি। এই সময়ে তারা এভাবে মারল? ওর দুটি শিশু বাচ্চা আছে। সরকার দেখুক এদের এখন কী অবস্থা।
নিহত রাসেলের প্রতিবেশী ও নুরাল পাগলার আরেক ভক্ত আব্দুর রাজ্জাক কালবেলাকে বলেন, গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফে আমাদের এলাকায় ভক্তরা বেশি। রাসেল ছোটবেলা থেকে দরবারের ভক্ত। ওর দাদা থেকে শুরু করে ওর বাপ-চাচারা ওই দরবারের ভক্ত। বিগত সময়ের মতো রাসেল গতকালও আস্তানায় ছিল। আস্তানায় অতর্কিতভাবে হামলা হয়েছে। সে গেটে দাঁড়ানো ছিল। গেট যখন খুলতে বলেছে, খোলেনি। তখন জোর করে এলোপাতাড়িভাবে বাড়ি দিয়ে শোয়ায় ফেলে দিয়েছে। এরপর দুই-তিনটা কোপ দিয়েছে। কোপ দেওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শরিফুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, আমরা এ ঘটনায় ২২ রোগীকে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। যাদের অবস্থা একটু গুরুতর তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছি।
এদিকে নুরাল পাগলার আস্তানায় হামলার সময় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ৩ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে উপ-পরিদর্শক সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলাটি করেন।
জানা গেছে, এ ঘটনায় ১৭ পুলিশও আহত হয়েছেন। আর নুরাল পাগলার আস্তানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ এবং লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার পর এর পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। বর্তমানে দরবারের সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ধ্বংসস্তূপ দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।
নুরাল পাগলার বাড়িঘর ভাঙচুর, হামলা এবং কবর থেকে লাশ তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে পোড়ানোর পর থেকেই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই দেশের সর্ববৃহৎ যৌনপল্লী দৌলতদিয়া ঘাট থেকে উচ্ছেদ করার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। যৌনপল্লী উচ্ছেদের খবর ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে রয়েছে কয়েক হাজার নারী যৌনকর্মী।
আর যৌনপল্লী উচ্ছেদের খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার কালবেলাকে জানান, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো খবর নেই। গতকাল একটা ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে।
মন্তব্য করুন