বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অপরাধে দেওয়া হয় ছয় মাসের সাজা। কিন্তু সেই সাজা শেষ হওয়ার পরও টানা সাড়ে ছয় বছর কারাগারে বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে ৬০ বছর বয়সী ভারতের নাগরিক রামদেব মাহাতোকে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন রামদেব মাহাতো। তার বিরুদ্ধে সদর থানায় ১৯৫২ সালের কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্টে চার ধারায় মামলা হয়। আদালত তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। ২০১৯ সালের ২৯ মে সাজা শেষ হলেও ভারতে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি তাকে। কারণ তার ঠিকানা সঠিক ছিল না।
জাকির হোসেন আরও বলেন, রামদেব মাহাতোর মতো ঠিকানা জটিলতায় আরও কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক কারাগারে আছেন। পরিবারের সন্ধান না পাওয়ায় তাদের ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। এ অচলাবস্থা সমাধানে এগিয়ে আসেন সাংবাদিক ও সমাজকর্মী শামসুল হুদা। দীর্ঘদিন ধরে নিজ উদ্যোগে দুই দেশের কারাগারে বাংলাদেশি ও ভারতীয় বন্দিদের পরিবারের সন্ধান বের করতে কাজ করছেন তিনি।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারের দেওয়া তালিকা ধরে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে মানবাধিকার কর্মী শামশুল হুদা ভারতের বিহার রাজ্যের পশ্চিম চাঁমপারণ জেলার, মাঝুরিয়া থানার, গুদ্রা গ্রামে রামদেব মাহাতোর পরিবারের খোঁজ পান। ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর পরিবারের সন্ধান মেলার পর তিনি ভারতীয় দূতাবাসকে তথ্য পাঠান।
এরপর শুরু হয় দীর্ঘ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস জাতীয় পরিচয় যাচাই-বাছাই করে ২০২৪ সালের মার্চে ছাড়পত্র পাঠায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ১১ মাস পর রামদেব মাহাতোকে পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা হয়।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে রামদেব মাহাতোকে তার ছেলে সুনীল মাহাতো এবং তাদের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান লাল বাচ্চা যাদবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- দুদেশের পুলিশ কর্মকর্তা, কারাগার পুলিশ, বিএসএফ ও বিজিবির সদস্যরা । এ সময় সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক শামশুল হুদা বলেন, আটকের সময় তার ঠিকানা সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ না করায় এ জটিলতা এবং প্রশাসনিক গাফিলতির দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিনা অপরাধে টানা ছয় বছর চার মাস অতিরিক্ত সময় কারাগারেই বন্দি থাকতে হয়।
তিনি আরও বলেন, মনের তৃপ্তির জন্যই এ কাজ করি। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০টি প্রত্যাবাসন মামলার মধ্যে ৫২টিতে সাফল্য পেয়েছি। ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ১০ ভারতীয় নাগরিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে বিহারের বিজলী কুমার রায়ের মরদেহ এবং ১১ মে হায়াদ্রাবাদের আসসালান নামে এক নাগরিককেও ফেরত পাঠানো হয়।
মানবাধিকার কর্মী বলেন, সম্প্রতি কারা অধিদপ্তর থেকে ১৪০ ভারতীয় নাগরিকের তালিকা হাতে এসেছে। তাদের অনেকের সঠিক ঠিকানা নেই। ইতোমধ্যে কয়েকজনের পরিবার খুঁজে পাওয়া গেছে, বাকিদের ক্ষেত্রেও কাজ চলছে। এ ছাড়া ভারতের বিভিন্ন কারাগারে আটক কয়েকজন বাংলাদেশি নারী বন্দিকেও ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন