ঢাকার সাভারের কলমা এলাকায় একটি কারখানার জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, দখলচেষ্টা করা রোকেয়া হক নামে এক নারী তার পূর্বপুরুষের জমি হিসেবে ওই জমি দাবি করছেন। তবে তার পূর্বপুরুষরা আগেই সেই জমি হস্তান্তর করেছেন। আর দখলচেষ্টা করা জমি ও তার পূর্বপুরুষের জমির প্লটও আলাদা।
অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি ওই জমিতে গিয়ে রোকেয়া বেগম তালা লাগিয়ে মালপত্র সরিয়ে নেন। এ নিয়ে একাধিকবার তর্কাতর্কি, এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে বসার আয়োজনও হয়। তবে জমির মালিকানা প্রমাণে কোনো দলিল দেখাতে পারেননি রোকেয়া। উভয় পক্ষকে আপাতত দখল না নেওয়ার পরামর্শ দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ভুক্তভোগীরা জানায়, ওই জমিতে একটি পরিত্যক্ত কারখানা ছিল। সেটি দেখাশোনা করতেন মজিদসহ আরও একজন। এর মধ্যে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে রোকেয়া হক নামে ওই নারী গিয়ে কারখানায় তালা দিয়ে মালপত্র লুট করেন। এ ছাড়া আদালতে মামলার একটি নোটিশ টাঙিয়ে দেন। থানাতেও দখলের পাঁয়তারা চলছে এমন অভিযোগ করেন। বিষয়টি জেনে ভুক্তভোগী আবার নতুন করে তালা দেন। তখন তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়। এই ঘটনা ২২ জুলাইয়ের। এরপর তিনি সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ দেন। তাদের উপস্থিতিতে তিনি ফের নিজে তালা দেন। এর তিন দিন পর ওই নারী তার ছেলের প্রভাব খাটিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে জমিতে যান। তাদের মধ্যস্থতায় ওই মাসের ২৮ তারিখ বসার দিন ধার্য করা হয়। তবে পরে এই সমস্যার আর সমাধান হয়নি।
এদিকে নথি অনুযায়ী, সাভারের কলমা মৌজায় এসএ ও সিএস ৭৬, ৭৭ ও ৩৫ খতিয়ানে ৩৬ নম্বর দাগ থেকে কয়েকজন রেকর্ডধারী মালিক কয়েকটি দলিলে প্রায় ৩ একর জমি লিখে দেন। এর মধ্যে এসএ ৭৬ খতিয়ানে ৩৬ দাগে রেকর্ডভুক্ত মালিক হাছেন আলী ও ইয়াকুব ব্যাপারী। ১৯৬৬ সালের ২৪ নভেম্বর তারিখে ৮৫৮৪ নম্বর দলিলে লিখে দেন ২ একর জমি। একই তারিখে ৮৫৮৩ নম্বর দলিলে একই খতিয়ানের ৩৬ নম্বর দাগে আলী একাব্বর লিখে দেন ৫২ শতাংশ জমি। এ ছাড়া ওই দিনই ফজর আলী নামে আরও একজন একই দাগে ২০৮ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করেন। এসব জমিই কিনে নেন নুরুন নাহার নামে এক নারী, যা পরে তার নামে রেকর্ডভুক্ত হয়। সেখান থেকেই পরবর্তী সময় আরএস খতিয়ানভুক্ত হওয়া জমি থেকে ১৭৯ নম্বর দাগে ৬৬ শতাংশ ও ১৮০ দাগে ১৬.৫০ শতাংশ জমি কিনে নেন হাজী মো. মনসুর রহমান।
তবে এ জমিতেই পরে মালিকানা দাবি করেন রোকেয়া বেগম নামে এক নারী। অনুসন্ধানে তার মালিকানার বিবরণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, সাভারের কলমা মৌজায় সিএস ৪১/৫৩ নম্বর খতিয়ানে ৩৬ নম্বর দাগে ১৮২ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন রাধিকা মোহন সাহা। দখলস্বত্বে ওই জমির পরবর্তী মালিক হন হাসান শিকদার। ১৯৪০ সালের ১১ নভেম্বর ৩২৮৬ নম্বর দলিলে সেই জমি স্ত্রী আয়মন নেছা ও ছেলে ছমির উদ্দিন শিকদারকে অর্ধেক হারে ৯১ শতাংশ করে একেকজনকে লিখে দেন তিনি। পরে আয়মন নেছা তার সম্পত্তির ৯১ শতাংশ ১৯৬৫ সালের ৮ এপ্রিল ২১১৪ নম্বর দলিল ও একই বছরের ৭ ডিসেম্বর ৬৬২৪ নম্বর দলিলে সাফ কবলা দলিলে লিখে দেন মাজম আলীকে।
তবে আরএস রেকর্ডে পুরো সম্পত্তি ১৬৯ ও ১০২ নম্বর দাগে ভুলক্রমে রেকর্ড হয় ছমির উদ্দিনের নামে। পরে মাজম আলী ১৯৯৭ সালে রেকর্ড সংশোধনে আদালতে ২০৩/৯৭ নম্বর মামলা করেন। এর মধ্যে ছমির শিকদারও তার জমি মোকসেদ আলীর কাছে বিক্রি করেন। মোকসেদ আলী পরবর্তী সময় স্থানীয় দারুল আমান হাউজিংয়ের কাছে তা বিক্রি করেন। ফলে হাসান শিকদারের উভয় উত্তরসূরি মালিক হয়ে তারাও ওই জমি হস্তান্তর করে নিঃস্বত্ববান হন।
সম্প্রতি রোকেয়া বেগম হাসান শিকদারেরই উত্তরসূরি হিসেবে জমির মালিকানা দাবি করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩৬ নম্বর দাগটিতে ২৮ একর সম্পত্তি ছিল। যার মধ্যে নুরুন নাহারের অংশ একদিকে। আর হাসান শিকদারের জমি অন্যদিকে। দুজনের মধ্যে কোনো সম্পর্কও নেই। নুরুন নাহার তার সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। এমনকি হাসান শিকদারের উত্তরসূরিরাও জমি হস্তান্তর করেছেন। রোকেয়া বেগম হাসান শিকদারের উত্তরসূরি হয়ে জমি দাবি করছেন নুরুন নাহারের অংশে, যেখানে হাসান শিকদারের উত্তরসূরিরা কোনো জমিই ধারণ করেন না।
জমিটির বায়নাসূত্রে মালিক মো. মাসুদ রানা বলেন, জমিটিতে পুরোনো কারখানা রয়েছে। আমার মালিকানা রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ওই নারী এতে দখলের চেষ্টা করেন। লোকজন নিয়ে বসেও তিনি কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। আমি আমার জমিতে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। তার হয়রানি থেকে মুক্তিতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। আর এমন হয়রানির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
এ বিষয়ে রোকেয়া হকের নম্বরে ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তার কোনো স্থানীয় ঠিকানার খোঁজ পাওয়া যায়নি। হাসান শিকদারের পরিবারের সদস্যরা রোকেয়া হকের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন। এ ছাড়া এই জমি হস্তান্তরের বিষয়টিও তারা নিশ্চিত করেন। রোকেয়া হকের মালিকানা দাবির বিষয়টি নিয়ে তারা উষ্মা প্রকাশ করেন।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুবকর সরকার বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি কেউ আসে তাহলে খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন